সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে ততই কেন শত্রুতার সম্পর্ক দৃঢ় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে!
নিউজ ডেস্ক – এমন অনেক সময় দেখা যায় যে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কোন একটি দেশের শত্রুতার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সেই শত্রুতার সম্পর্ক একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর শেষ হয়ে যায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে দেখা দিয়েছে অন্য চিত্র। সময় যতই বইছে এবং বছর যত গড়াচ্ছে ততই যেন আরো দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়ে উঠছে এই দুটি দেশের মধ্যে শত্রুতার সম্পর্ক। শুধুই কি রাজনৈতিক কূটনৈতিক কারণ নাকি অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এই শত্রুতার পেছনে তা জানতে উৎসুক বহু পাঠক! যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে এই তিক্ততার সম্পর্ক এক দুদিন নয় বরং দীর্ঘদিনের। তবে এই শত্রুতার মূল উৎস খুঁজে পেতে গেলে পেছনে ইতিহাসের দিকে একঝলক নজর দিতে হবে।
শুরুর থেকে শুরু করতে হবে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের সম্পর্কের কথা। যখন এই দুটি দেশের মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক কূটনীতি শুরু হয় তখন সময়টা ছিল ১৯৭১ সাল। ঠিক সেই সময় দুটি দেশের মধ্যে টেবিল টেনিস খেলা শুরু হয় যার নাম ছিল পিংপং ডিপ্লোম্যাসি। এই খেলার মাধ্যমে গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন। সে সময় ভালোই ছিল দু’দেশের সম্পর্ক। যার কারণে তাইওয়ানকে বাদ দিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা সদস্য হিসাবে চীনের নাম ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিল দুটি দেশই। কিন্তু সম্পর্কের সমীকরণ বদলাতে শুরু করে আনুমানিক ১৯৯৫ সাল থেকে। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র চীনের জায়গায় জাতিসংঘের সদস্য করার আশ্বাস দেয় মার্কিন প্রতিনিধি সভার অধ্যক্ষ গিংরিচ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লি তেং লুইকে। যার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের উপর বেজায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ড্রাগনের দেশ চীন। এরপরই দু’দেশের মধুর সম্পর্কে দেখা যায় ফাটল।
পরবর্তীতে যখনই যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে জাতিসংঘের সদস্য করার আশ্বাস দেয় তখনই তাইওয়ানকে নিজেদের দেশের অংশ হিসেবে দাবি করে ওঠে চীন। কিন্তু চীনের এই দাবিকে গ্রাহ্য করেনি তাইওয়ান কিংবা যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৮৯ সালে তিয়েন আনমেনে সংঘটিত আন্দোলনে গনতন্ত্রকামীদের যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রকাশ করা এবং তিব্বত সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ এই দুটো বিষয় ভালো চোখে দেখেনি চীন। যদিও বর্তমানে দুটি দেশের তিক্ততা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্টেট অফ দ্যা ইউনিয়ন দেওয়ার সময় চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বরের শত্রু হিসেবে উল্লেখ করে। কারণ ট্রাম্পের মতে চীন ওয়ান বেল্ট কর্মসূচি গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি খর্ব করার জন্য। সে কারণেই আগেভাগে চীনকে শত্রুপক্ষ হিসেবে ঘোষণা করে দিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষনার পরে চুপ করে বসে নেই ড্রাগন দেশও।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে শত্রুতার হাত বাড়িয়ে দিতেই ১৯৭৯ সালে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পরেও চীন ইরানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেছে। চীনের এই সিদ্ধান্তকে নাড়াতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্রের কোন কথা। হাজারো নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে ২০১৩ সালে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারী মাসেই ৪,১০,০০০ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কিনেছিল চীন। যার কারণে আরো এক ধাপ অবনতির দিকে এগিয়ে যায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক। তবে শুধুমাত্র সামরিক শক্তি নয় অর্থনীতির দিক থেকেও যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছে চীন। কারণ ১৯৮০ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অবদান ২.২% ছিল আর ২০১৯ সালে ছিল ১৯%। যুক্তরাষ্ট্রের পরেই চীনের অবদান। ট্রাম্প এজন্যই চীনের সাথে “বানিজ্য যুদ্ধে” জড়িয়ে পরে।