ইভেন্টদোল উৎসব

রং খেলার আগে ন্যারাপোড়া পালন করা হয় কেন?

নিউজ ডেস্কঃ “আজ আমাদের ন্যাড়াপোড়া, কাল আমাদের দোল

পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বল রে হরিবোল!”
কি, ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেল তো? পড়তেই হবে! বিশেষ করে, ৯০ কিংবা তারও আগের কোনো দশকে জন্মেও প্রতিবছর না হলেও কোনো না কোনোবার দোলের ঠিক আগের রাতে এই ন্যাড়াপোড়ার সাক্ষী থাকেনি, এমন বঙ্গসন্তানের পাত্তা সম্ভবত মাইক্রোস্কোপও লাগাতে পারবে না। সম্ভবই না সেটা। কিন্তু জানেন কি, এই ন্যাড়াপোড়া ব্যাপারটি আসলে ঠিক কি? খায় না মাথায় দেয়? আসুন, একটু অনুসন্ধান করা যাক।

তখন সত্যযুগ। দুর্দমনীয় রাক্ষসরাজ হিরণ্যকশিপুর অত্যাচারে অতিষ্ট গোটা ত্রিলোক। কেউ তার ভয়ে টুঁ শব্দটি ও করতে সাহস পায় না। ব্যাতিক্রম একমাত্র স্বপুত্র প্রহ্লাদ। সে ছোকরা আবার বিষ্ণুর এতই ভক্ত যে বাপকে কোনো তোয়াক্কাই করে না। রাতদিন শুধু হরি আর হরি। এদিকে হরি তো আবার ইতিমধ্যেই হিরণ্যকশিপুর দাদা হিরণ্যক্ষকে বরাহের রূপ ধরে হত্যা করে বসে আছেন। কাজেই, দৈত্যদের প্রধান চক্ষুশূল। আর একমাত্র ব্যাটা প্রহ্লাদ শেষে কিনা তাঁর ই ভজনায় ব্রতী হল? রাক্ষসকূলের কলঙ্ক আর কাকে বলে।  ক্রুদ্ধ রাক্ষসরাজ বাধ্য হয়েই ছেলেকে সহবত শেখানোর নানারকম চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু হায়! কিছুতেই কিছু হল না। হিরণ্যকশিপু যে মতলবই ভাঁজেন, বিষ্ণুমায়া প্রয়োগ করে হরি তাই বানচাল করে দেন।

অগত্যা হিরণ্যকশিপুকে আঙুল বাঁকাতেই হল। তিনি ছেলেকে মারার সুপারি( হ্যাঁ সুপারিই বলছি কারণ হোলিকা নিশ্চয়ই বিনা শর্তে রাজি হননি) দিলেন বোন হোলিকাকে। এই হোলিকার আবার একটি বিশেষ ধরণের চাদর ছিল, যা তাকে পিতামহ ব্রহ্মা বরস্বরূপ দিয়েছিলেন। এই চাদরটি গায়ে থাকাকালীন বাহ্যিক কোনো বস্তুই তাকে স্পর্শ করতে পারত না। তো প্ল্যান হল— এই চাদর পরিহিতা অবস্থায় হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে একটি জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের ভেতরে বসবে। ফলস্বরূপ, হোলিকার কোনো ক্ষতি হবে না কিন্তু প্রহ্লাদ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। ফাল্গুনী পূর্ণিমার ঠিক আগের রাতে চাদর পরিহিতা হোলিকা ভাইপো প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে অগ্নিকুন্ডে প্রবেশ করে। কিন্তু কথায় বলে, “রাখে হরি মারে কে” আর “মারে হরি রাখে কে?” প্রিয় ভক্তের ডাকে ব্যাকুল বিষ্ণু এমনই ভেলকি দেখালেন যে, ব্রহ্মার চাদর হোলিকাকে অনাবৃত করে প্রহ্লাদের গায়ে এসে জড়ালো। আর তারপর? তার ও পর? লক্ষ লক্ষ প্রজ্বলন্ত অগ্নিশলাকার মাঝে অরক্ষিতা হোলিকা! সম্পূর্ণরূপে ছাই হয়ে যেতে সম্ভবত মিনিট পাঁচেক ও লাগেনি।

ওদিকে  প্রহ্লাদ মনের সুখে হরির নাম জপেই চলেছে। হৃষিকেশের কৃপায় আর ব্রহ্মার গুণে সে ভীষণ তাপও যে তখন তার নিকট বেশ বাতানুকুল, তা তো বলাই বাহুল্য। আজ ফাল্গুনী শুক্লপক্ষের চতুর্দশতম দিন, প্রাক দোলযাত্রা। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এই বিশেষ দিনে ই ভগবান বিষ্ণু হোলিকা দহনের মাধ্যমে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়েছিলেন বলে আজও দিনটিতে ভারতবর্ষের নানা স্থানে রাক্ষসী হোলিকা তথা অশুভ শক্তির রূপক হিসেবে পুরানো ডালপালা, আগাছা ইত্যাদি পুড়িয়ে ন্যাড়াপোড়া উৎসব পালন করা হয়। ছেলেবেলায় আমরাও বহু করেছি। বর্তমানের কংক্রিটের জঙ্গলে যার কেবল স্মৃতিটুকু ই রয়ে গিয়েছে অবশিষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *