ডিফেন্স

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া টের পাচ্ছে। যে কোনও সময় ভারতবর্ষ টের পেতে পারে কমিউনিকেশান ইন্টেলিজেন্স ও কমিউনিকেশান জ্যমিং এর জন্য

নিউজ ডেস্কঃ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে গোটা বিশ্ব যে স্তম্ভিত তা আর নতুন করে কিছু বলার নেই। ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে ব্যাটেল ট্যাংকার ধ্বংস হয়েছে, তবে রাশিয়ারও ক্ষতির পরিমাণ প্রচুর। বিশেষ করে তাদের হাতে আওাক্স না থাকার কারনে বিরাটভাবে ভুগতে হচ্ছে।আর ভারতবর্ষের হাতে এই টেকনোলোজির পরিমাণ কম থাকার কারনে কিছুটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৬টি এ-৩২০ এ্যওয়াক্স আসার কথা বিমানবাহিনীর হাতে। আর সেই কারনে এ্যওয়াক্স ফ্লিটের দিকে ভারতের চিন্তা “সামান্য” কিছুটা কমছে। যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রেও ৩৬+৮৩টা ৪.৫প্রজন্মের যুদ্ধবিমান অর্ডার করা হয়েছে যার মধ্যে ৩৫টা রাফাল হাতে পৌছিয়েছে। এয়ার ডিফেন্সে এস-৪০০ আর বারাক-৮ আসতে আসতে যুক্ত হচ্ছে। তবে এর মধ্যে ভারতের বায়ুসেনার কয়েকটা দিক যেভাবে অবহেলিত হচ্ছে, আর সেই আরনে চিন্তিত সামরিক বিশেষজ্ঞরা। যদিও ইতিমধ্যে ২০১৯ সালে একবার শিক্ষা হয়েছে।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর দুটি দিকের অবস্থা ভীষণ খারাপ।

৬টি ৩৩০ ট্যঙ্কারঃ ভারতের হাতে বর্তমানে ৬টি আইএল-৭৮এমকেআই আছে। যা ভারতের মত এত বড় দেশের জন্য কোনও ভাবেই পর্যাপ্ত নয়। ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রথমে ৬টি এয়ারবাস এ-৩৩০ ট্যঙ্কার ক্রয় করতে চেয়েছিল। আর্থিক অসুবিধার কথা জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে, তারপর ২০২১সালে খবর এলো ৬টি এ-৩৩০ লিজ নেওয়ার কথা। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও কিছু জানা যায়নি। এদিকে পাকিস্তান নিজের আইএল-৭৮ ইউক্রেন থেকে ওভারহলিং করিয়ে নিয়েছে। অতয়েব বুঝতেই পারছেন চাপ কতোটা বাড়ছে।

সিগনাল/কমিউনিকেশান ইন্টেলিজেন্স কমিউনিকেশান জ্যমিং এয়ারক্রাফটঃ ভারতের হাতে বর্তমানে ৩টি গল্ফস্ট্রিম-৩ ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ও ইলেকট্রনিক ইন্টেলিজেন্স বিমান, ২টি গল্ফস্ট্রিম-১০০ সার্ভেইল্যন্ভ বিমান আছে যাতে কোনও হাই টেক সেন্সর নেই বলেই ধারনা করা হয়, ২টি গ্লোবাল-৫০০০ ইলেকট্রনিক ইন্টেলিজেন্স বিমান (একমাত্র আধুনিক সেন্সরের অধিকারী পুরো ফ্লিটে), আর একটি বোয়িং-৭০৭ সিগনাল ইন্টেলিজেন্স বিমান যার স্পেয়ারপার্টসের সাপ্লাই বন্ধ থাকায় খুব কম ওড়ানো হয়। আর এর সেন্সর তথ্য খুব গোপন।

ভারতবর্ষের মতো দেশের জন্য এত কম সংখ্যক নজরদারি চালানোর ও জ্যমিং এর বিমান সংখ্যা এক কথায় ভীষণ চাপের! দেশের সফ্টওয়্যার ডিফাইন্ড রেডিও না থাকার কারনে কমিউনিকেশান জ্যমার (যোগাযোগ বন্ধ করা যায়)  বিমান দিয়ে ২৭শে ফেব্রুয়ারি পাইলট অভিনন্দনের মিগ-২১ এর কমিউনিকেশান জ্যম করে পাকিস্তান। পরিনতিতে অভিনন্দন না বুঝে ঢুকে গেছিল পাকিস্তানে।

এই বিরাট ঘাটতি পূরণ করার জন্য ২০১২ সালে, অর্থাৎ ১০বছর আগে সরকারকে বিমানবাহিনী অনুরোধ করে ৯টি সিগনাল/কমিউনিকেশান ইন্টেলিজেন্স ও কমিউনিকেশান জ্যমিং এয়ারক্রাফট ক্রয় করার কথা। এই ধরনের বিমান গুলো যুদ্ধের জেতা হারার “Key Factor” হয়ে দাঁড়ায় বলে মত সামরিক বিশেষজ্ঞদের। ভারতীয় বিমানবাহিনী চেয়েছিল ৭টি এমন বিমান যাতে সিগনাল ইন্টেলিজেন্স, কমিউনিকেশান ইন্টেলিজেন্স ও কমিউনিকেশান জ্যমার থাকবে। আর বাকি দুটি শুধু সিগনাল ইন্টেলিজেন্সের কাজে লাগানো হবে।

কমিউনিকেশান ও সিগনাল ইন্টেলিজেন্সের কাজটা আসলে কি? সিগনাল ইন্টেলিজেন্সের কাজ হল শত্রুর রেডার থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের ডাটা লিংক কত ফ্রিকুয়েন্সিতে কাজ করছে তা নির্নয় করা আর ফ্রিকুয়েন্সির সোর্সকে খুজে বার করা। ফলে যুদ্ধের সময় আমাদের কাছে যেমন শত্রুর রেডার লোকেশান থাকে তেমন তাদের কোন ফ্রিকুয়েন্সিতে কোন কাউন্টার ফ্রিকুয়েন্সি জ্যমার থেকে এমিট করলে সেই রেডার জ্যম হবে তার একটা পূর্ণ প্ল্যন করা সম্ভব হয়। এই ধরনের গুপ্তচরবৃত্তি আমেরিকা ভীষণভাবে করে থাকে। এমনকি রাশিয়াও। তাই তারা আজ এত ভয়হীন ভাবে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ করে। আবারও এই দিকে ভারতের চেয়েও পিছিয়ে চীন। কারন চীনের এই ধরনের সার্ভেইল্যন্স তাদের দেশের বাইরে তারা চালায় না। আর ভারত আমেরিকা থেকে প্রায়ই এই ধরনের তথ্য নেয় চীনের রেডার সম্পর্কে জানতে।

কমিউনিকেশান ইন্টেলিজেন্সের কাজ এক কিন্তু কমিউনিকেশান ইন্টেলিজেন্সের মূল কারন তাদের ফ্রিকুয়েন্সির সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করা শুধু নয়। যেকোনো ওয়ারলেস কমিউনিকেশানের সোর্স(যোগাযোগের মূল উৎস)  খোজা আর তাদের কথোপকথনে আঁড়ি পাতা। এই সেন্সর এ্যন্টি টেরোর অপরেশানেও কাজে লাগে। ওয়াকি টকিতে কথা বলার সময় এই সিগনালের সূত্রে বোম্বিং করা খুব স্বাভাবিক ব্যপার মিলিটারির জগতে।

আর কমিউনিকেশান জ্যমিং সম্পর্কে নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন।ভারতের ডিআরডিও এই ধরনের প্রযুক্তি বিকশিত করতে সক্ষম।১০বছর বাদেও ভারতবর্ষের সরকার এবং বিমানবাহিনী এই গুরূত্বপূর্ণ প্রোজেক্টে কোনও নজর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে না। এই শীত ঘুম তাদের কবে ভাঙবে? এই ধরনের কাজের জন্য ফ্যলকন-১০এক্স বা ৮এক্স ছাড়াও জি-৫০০, জি-৫৫০ বিমান গুলো বেশ ভালো বলে মত সামরিক বিশেষজ্ঞদের। ফ্যলকন-১০এক্স এর রেঞ্জের জন্য (১৩,৯০০কিমি)! এই ধরনের বিমান গুলোকে কমিউনিকেশান ছাড়াও রেডার জ্যমিং এর কাজেও লাগানো যায় ইন্টিগ্রেটেড জ্যমার লাগিয়ে। তবে আগে বিমানবাহিনীর চাহিদা পূরণটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *