ডিফেন্স

আমেরিকার তেজস প্রজেক্টে সমস্ত বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ভারত নিজের চেষ্টায় যেভাবে প্রথম ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করে

রাজেশ রায় : ভারতীয় বায়ুসেনায় সদ্য যুক্ত হওয়া  সিংগেল ইন্জিন বিশিষ্ট সবচেয়ে ঘাতক যুদ্ধবিমান হচ্ছে লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট তেজস বা এলসিএ তেজস। তবে এই যুদ্ধবিমান তৈরির কাজ কিন্তু মোটেই সহজ হয় নি, বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। 

এলসিএ তেজস সম্পর্কে বিস্তারিত

সময়টা ১৯৮০ এর দিকে। ভারতীয় বায়ুসেনাতে সেসময় যুদ্ধবিমান বলতে সুখোই -৭, হকার হান্টার,  মিগ-২১ ও এইচ এফ মারুত ছিল কিন্তু এই যুদ্ধবিমান গুলো অবসরে যাবার সময় হয়ে এসেছিল। বিশেষ করে ভারতীয় বায়ুসেনায় যুক্ত থাকা ৮৭৪ টি মিগ-২১ ১৯৯০ থেকে অবসরে যেত। তাছাড়া আবার ১৯৮২ সালে পাকিস্তান আমেরিকার থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনে যা সেইসময়ের অন্যতম সেরা যুদ্ধবিমান ছিল। ১৯৬০-৮০ এর মধ্যে ভারতের সাথে চীন ও পাকিস্তানের অত্যন্ত তিনটি যুদ্ধ হয়েছিল, যার জন্য ভারতীয় বায়ুসেনা তাদের ফ্লীট কে আপগ্রেডের জন্য মরিয়া হ পড়েছিল। ভারত ইতিমধ্যে সেই সময় জাগুয়ার, মিগ-২৯ ও মিরাজ-২০০০ অর্ডার করেছিল তাও ভারতীয় বায়ুসেনাতে পর্যাপ্ত যুদ্ধবিমানের অভাব ছিল। 

১৯৮৩ তে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নেয় নিজস্ব যুদ্ধবিমান তৈরির। ১৯৮৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ডিআরডিও এর অধীনে একটি সংস্থা এরোনটিক্যাল ডেভলপমেন্ট এজেন্সি বা এডিএ তৈরি করে। এডিএ এবং হ্যাল বা হিন্দুস্তান এরোনটিকস লিমিটেড কে একটি এলসিএ বা লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি যুদ্ধবিমানের বিভিন্ন জটিল প্রযুক্তি যেমন ফ্লাই বাই ওয়ার, টার্বোফ্যান ইঞ্জিন, রেডার, ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় ভারতের বিভিন্ন সংস্থা, ল্যাবকে। ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে প্রজেক্টের সমস্ত তথ্য ঠিক করে কাজ শুরু হয়। ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় অ্যাভিয়েশন সংস্থা ড্যাসল্ট এই প্রজেক্টে কনসালটেন্ট হিসাবে কাজ করে। এবার অনেকের মনে প্রশ্ন আসবে ড্যাসল্টের কাছে কেনো সহায়তা চাওয়া হল? দেখুন একটি যুদ্ধবিমান তৈরি যথেষ্ট জটিল কাজ, ভারত এই ফিল্ডে নতুন ছিল তখন। যারজন্য একটি এলসিএ তৈরির জন্য যাবতীয় স্টাডি, অ্যানালিসিসের জন্য ড্যাসল্ট সাহায্য করেছিল। ড্যাসল্টের ৩০ জন ইন্জিনিয়ার ১৯৮৮ সালের মধ্যে পুরো ধারনা তৈরি করে। ১৯৮৮ সালে ড্যাসল্ট তাদের হাইব্রিড ফ্লাই বাই ওয়ার ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম অফার করে ভারত কে কিন্তু এডিএ তাদের নিজস্ব সিস্টেম তৈরি করে। ১৯৯০ সালে ডেল্টা উইং যুক্ত তেজসের ডিজাইন ফাইনাল করা হয়। সেইবছরই ডিআরডিও কে ইন্জিন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এলসিএ এর দুটি টেকনোলজিস ডেমনস্ট্রেটর এর কাজ শুরু হয় এপ্রিল, ১৯৯৩ তে, অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৭ নভেম্বর প্রথম মডেল তৈরি করা হয় যাকে টিডি-১ বলা হয়। অবশেষে ৪ জানুয়ারি, ২০০১ এলসিএর প্রথম ফ্লাইট টেস্ট হয়, ভারতের অ্যাভিয়েশন ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে এই দিন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বর্গীয় অটল বিহারি বাজপেয়ীজী এই যুদ্ধবিমানের নাম দেয় ‘তেজস’।

এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার আলোচনা করা দরকার যে তেজস প্রজেক্টে এত দেরী কেন হল? ১৯৮৩ সালে শুরু হওয়ার পর প্রথম তেজস যুদ্ধবিমান ভারতীয় বায়ুসেনাতে যুক্ত হয় ২০১৬ সালে! কেনো ৩৩ বছর সময় লাগলো? প্রথমেই বলি তেজসের টেকনিক্যাল স্টাফ সাপ্লাই পেতে অনেক দেরী হয়েছিল কারন যুদ্ধবিমান প্রযুক্তি অত্যন্ত জটিল। ১৯৯৮ সালে ভারত দ্বিতীয় পরমাণু পরীক্ষা করে যার জন্য আমেরিকা ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সেই কারনে আমেরিকার লকহিড মার্টিন সহ তেজস প্রজেক্টে সমস্ত বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ভারত নিজের চেষ্টায় ২০০১ এ তেজস এর প্রথম ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করে। ২০০২ সালে তেজসের নতুন সমস্যা দেখা যায় ডিআরডিও তেজসের জন্য কাভেরী ইন্জিন তৈরি করছিল কিন্তু কাভেরী ইন্জিন আশানুরূপ থ্রাস্ট উৎপন্ন করতে সক্ষম হচ্ছিল না, তেজসের জন্য তৈরি রেডার প্রজেক্টও অত্যন্ত ব্যায়বহুল হবার জন্য ফান্ডিং এর জন্য সমস্যা হচ্ছিল। ২০০৪ সালে রাশিয়াতে কাভেরী ইন্জিনের হাই অল্টিটিউড টেস্ট ও ব্যার্থ হয় যারজন্য  ভারত বাধ্য হয়ে আমেরিকার জেনারেল ইলেকট্রিকের ১৭ টি F-404 ইন্জিনের অর্ডার দেয়। ২০০৬ থেকে এই ইন্জিন ভারতে আসা শুরু হয়। রেডার সমস্যার জন্য প্রথমে তেজসে এরিকসন/ফেরান্তি পিএস-০৫ জে ব্যান্ড রেডার ব্যবহার করা হয় তেজসে যা সুইডিশ যুদ্ধবিমান সাব জ্যাস ৩৯ গ্রিপনিনেও ব্যবহার করা হত।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী তেজস তৈরিতে:—

=>  মার্চ ২০২০ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৯০৬৩.৯৬ কোটি টাকা বা ১.২ বিলিয়ন ডলার।  

=> কাভেরী ইন্জিন পোগ্রামে খরচ হয়েছে ২৭০ মিলিয়ন ডলার বা ২০৩২ কোটি টাকা।

=> ডিজাইন ও অন্যান্য ডেভলপমেন্টে খরচ ১৬০ মিলিয়ন ডলার বা ১২০২ কোটি টাকা।

=> ইনিশিয়াল অপরােশন ক্লিয়ারেন্স বা IOC ফ্লাইং এ খরচ ১৪৬.২ কোটি টাকা। 

=> ফাইনাল অপারেশন ক্লিয়ারেন্স বা FOC ফ্লাইং এ খরচ ২৯৭ কোটি টাকা। 

=> মার্ক -১ এ ভার্সন ডেভেলপমেন্ট খরচ ৩০৩ কোটি টাকা 

=> এক্সপোর্ট ভার্সন তৈরিতে খরচ ৩০৯ কোটি টাকা।

সিংগেল ইন্জিন বিশিষ্ট তেজসের সর্বোচ্চ গতি ২২২০ কিমি/ঘন্টা। কমব্যাট রেঞ্জ ৫০০ কিমি। 

=> তেজসে অস্ত্র হিসাবে রয়েছে ১ টি ২৩ মিমি Gsh-23 ক্যানন।

=> তেজসের ৮ টি হার্ড পয়েন্ট রয়েছে।

=>  তেজস S-৮ রকেট বহন করতে পারে। 

=> তেজসে এয়ার টু এয়ার মিসাইল হিসাবে রাশিয়ান আর-৭৩, আর-৭৭, ভারতীয় অস্ত্র মার্ক ১, ইসরায়েলের আই ডার্বি, পাইথন ৫,  এমবিডিএ আসরাম মিসাইল। 

=> এয়ার টু সারফেস মিসাইল হিসাবে রয়েছে রাশিয়ান কেএইচ -৫৯ এমই, কেএইচ-৫৯ এল, কেএইচ -৫৯ টি, ফ্রান্সের হ্যামার মিসাইল, ব্রাহ্মস এনজি মিসাইল। 

=> অ্যান্টি রেডিয়েশন মিসাইল হিসাবে রয়েছে ভারতীয় রুদ্রম -১ মিসাইল 

=> অ্যন্টিশিপ মিসাইল হিসাবে রয়েছে কেএইচ-৩৫, কেএইচ-৫৯ এমকে।

=> প্রিশিসন গাইডেড বোম্ব হিসাবে রয়েছে স্পাইস-২০০০, ডিআরডিও এর স্ব বোম্ব,  গ্রিফিন, সুদর্শন লেজার গাইডেড বোম্ব, ক্যাব-১৫০০ এল। এছাড়াও প্রচুর আনগাইডেড বোম্ব রয়েছে। 

তেজস মার্ক -১ ভার্সনে ইসরায়েলি EL/M-2032 হাইব্রিড রেডার ব্যবহার করা হয়েছে।

ভারতীয় বায়ুসেনা মোট ১২৩ টি তেজস অর্ডার করেছে। যার মধ্যে ৪০ টি মার্ক ১ ভার্সন ও ৮৩ টি মার্ক -১ এ ভার্সন। ৪০ টি তেজস মার্ক -১ ২০০৬ থেকেই অর্ডারে ছিল। কিছুদিন আগেই ৪৮০০০ কোটি টাকার চুক্তিতে ৮৩ টি তেজস মার্ক -১ এ অর্ডার দেওয়া হল। এই মহূর্তে ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে ২৪ টি তেজস যুদ্ধবিমান রয়েছে। ভারতীয় বায়ুসেনায় তেজসের দুটি স্কোয়াড্রন রয়েছে যার নাম ফ্লায়িং ড্রাগার্স বা নং ৪৫ স্কোয়াড্রন এবং ফ্লায়িং বুলেটস বা ১৮ নং স্কোয়াড্রন। 

এলসিএ তেজাসের মোট চারটি ভার্সন আপাতত দেখা গেছে, তেজাস মার্ক ১, তেজস মার্ক ১ এ, তেজাস মার্ক ২ ও নেভাল তেজাস। 

=> তেজাস মার্ক ১ এ:—- তেজস মার্ক ১ এ কেনো তৈরি করা হচ্ছে? ২০১৫ সালে রিপোর্ট অনুযায়ী তেজস মার্ক ১ এ অনেক সমস্যা রয়েছে যেমন ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ক্যাপেবিলিটি, মিসাইল অ্যাপ্রোচ ওয়ার্নিং সিস্টেম, রেডার ওয়ার্নিং রিসিভার সিস্টেম, লিমিটেড ইন্টারনাল ফুয়েল ক্যাপাসিটি, অতিরিক্ত ওজন, পাইলট প্রটেকশন সিস্টেম, আন্ডার পাওয়ার ইঞ্জিন। যারজন্য ২০১৫ সালে তেজস মার্ক ১ এ তৈরির কাজ শুরু হয়। তবে ইন্জিন সমস্যা মার্ক ১ এ তে সমাধান হবে না কারন ইন্জিন পরিবর্তন করতে গেলে পুরো এয়ারফ্রেম পরিবর্তন করতে হবে যেটা সম্ভব না। 

তেজস মার্ক ১ এর থেকে মার্ক ১ এ ভার্সনে ৪৩ টি আপগ্রেডেশন করা হয়েছে। 

তেজস মার্ক ১এ এর কিছু বৈশিষ্ট্য জানা যাক:–

 > তেজস মার্ক ১ এ তে ইসরায়েলের ELM 2052 এসা রেডার ইনস্টল করা হবে। ৮৩ টি তেজস মার্ক ১ এর প্রথম ২০ টি বিমানে এই রেডার থাকবে, বাকী ৬৩ টি বিমানে ভারতীয় উত্তম এসা রেডার ইনস্টল করা হবে। 

> মার্ক ১ এ তে ইসারায়েলের এলটা সিস্টেমের তৈরি EL/L -৮২২২ স্লেফ প্রোটেকশন জ্যামার ইনস্টল করা হবে। সুখোই-৩০ এমকেআই এও এই জ্যামার ব্যবহার করা হয়।

> তেজস মার্ক ১এ তে মার্ক ১ ভার্সনের আর-৭৩ মিসাইলের বদলে এমবিডিএর অ্যাডভান্সড আসারাম মিসাইল ব্যবহার করা হবে।

> ভারতের নিজস্ব অস্ত্র মার্ক ১ ও মার্ক ২ বিভিআর এবং ইসরায়েলের আই ডার্বি ইআর মিসাইল যুক্ত করা হবে।

> হেলমেট মাউন্টেন ডিসপ্লে সাইট বা  HMDS সিস্টেম ইনস্টল করা হবে।

> তবে মার্ক ১ এতেও ইন্জিন হিসাবে আমেরিকার জেনারেল ইলেকট্রিক এর তৈরি F-404 ইন্জিন ব্যবহার করা হবে। ইতিমধ্যে হ্যাল জেনারেল ইলেকট্রিকের সাথে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ৯৯ টি F-404 ইন্জিনের চুক্তি করে ফেলেছে।

=> আপগ্রেডেড সেন্সর ইনস্টল করা হবে।

=> তেজস মার্ক ১ এর তুলনায় মার্ক ১ এর ওজন ৫০০-১০০০ কেজি কম, যার জন্য তেজস মার্ক ১ এর কমব্যাট রেঞ্জ অনেক বেশী। 

২০২৪  এর  মার্চ  মাসে  প্রথম  তেজস  মার্ক ১ এ  ভারতীয়  বায়ুসেনায়  যুক্ত  হবে

=> নেভাল তেজাস:— তেজাস এর একটি নেভাল ভার্সন তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু অতিরিক্ত ওজনের জন্য নেভি একে বাতিল করেছে। নেভি ভবিষ্যতে টুয়াইন ইন্জিন ডেক বেসড ফাইটার জেট তৈরির জন্য নেভাল তেজাস যাস্ট টেকনোলজি ডেমনস্ট্রেশন ছিল।

=> তেজাস মার্ক ২ :— তেজাস এর আপকামিং ভার্সন তেজাস মার্ক ২ বা MWF হতে চলেছে সত্যি কারের গেম চেঞ্জার। মিরাজ-২০০০, জাগুয়ার ও মিগ-২৯ এর রিপ্লেসমেন্ট হিসাবে তেজাস মার্ক ২ তৈরি করা হচ্ছে। তেজাস মার্ক ১ এ তে যেসব সমস্যা রয়েছে যেমন ইন্জিন প্রবলেম সেগুলো মার্ক ২ তে থাকবে না। মিডিয়াম ক্যাটেগরির মার্ক ২ এর ফ্লাইট টেস্ট ২০২৩ এ হবার কথা এবং ২০২৬ এ প্রোডাকশনে যাবে। ভারতীয় বায়ুসেনায় প্রায় বারো স্কোয়াড্রন বা ২০০+ তেজস মার্ক ২ যুদ্ধবিমান যুক্ত হওয়ার কথা। তেজস মার্ক ২ তে আমেরিকার জেনারেল ইলেকট্রিকের F-414 ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে,  যা মার্ক ১ তে ব্যবহৃত F-404 ইন্জিনের থেকে অ্যাডভান্সড হবে। F-414 ৯৮ কিলো নিউটন থ্রাস্ট উৎপন্ন করতে পারে যেখানে F-404 ৮৩ কিলো নিউটন থ্রাস্ট উৎপন্ন করতে পারে। পরে ভারত তাদের ১১০ কিলো নিউটন থ্রাস্ট যুক্ত ইন্জিন যুক্ত করবে তেজস মার্ক ২ তে, ফ্রান্সের স্যাফরন ভারতকে এব্যাপারে সহায়তা করছে। তেজস মার্ক ২ তে এমবিডিএর মিকা, আসরাম মিসাইল সহ, স্ক্যাল্প ও ভারতের নির্ভয় সাবসনিক ক্রুজ মিসাইল যুক্ত করা হবে। সাথে ইসরায়েলের ক্রিস্টাল মেজ মিসাইল ও থাকবে। ভারতীয় অস্ত্র মার্ক ১, ২,  ব্রাহ্মস এনজি ও ভবিষ্যতে এসএফডিআর মিসাইল ও যুক্ত করা হবে। তেজস মার্ক ২ সম্পূর্ণ আলাদা ক্যাটেগরির বিমান। তেজস মার্ক ১এ লাইট ওয়েট যুদ্ধবিমান কিন্তু তেজস মার্ক ২ মিডিয়াম ওয়েট ক্যাটেগরির বিমান। তেজস মার্ক ২ তে ১৩ টি হার্ড পয়েন্ট রয়েছে যা অনেক বেশী পেলোড বহন করতে সক্ষম। তেজাস মার্ক ২ তে অনবোর্ড অক্সিজেন জেনারেশন সিস্টেম রয়েছে। তেজস মার্ক ২ সেমি স্টেলথ হতে চলেছে। তেজস মার্ক ২ তে  অপটিমালি ম্যানড ককপিট টেকনোলজি থাকবে। মানে এটি এমন ধরনের প্রযুক্তি যদি কোন কারনে পাইলট অচেতন হয়ে পড়ে তাহলে হেলমেটে থাকা বিশেষ সেন্সর গ্রাউন্ডে সিগন্যাল পাঠাবে এবং ককপিটে থাকা বিশেষ আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স সিস্টেম বিমানটিকে নিরাপদে ল্যান্ড করাবে। ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমানেও এই একই প্রযুক্তি রয়েছে।

২০১৬ সালে বাহরিন এয়ারশো তে তেজস সর্বপ্রথম কোন আন্তর্জাতিক এয়ারশো তে অংশ নেয়। তেজস এর পারফরম্যান্সের কারনে সম্ভবত মালয়েশিয়া প্রথম কোন বিদেশী দেশ হিসাবে তেজস কিনতে চলেছে। পাকিস্তান ও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের থেকেও তেজস এগিয়ে। তেজস মার্ক ২ ভার্সন আমেরিকার বিখ্যাত এফ-১৬ ব্লক ৭০ এর সর্বাধুনিক ভার্সন ও সুইডেনের গ্রিপিন ই যুদ্ধবিমানের সমতুল্য। 

তেজসের সবচেয়ে বেস্ট রেকর্ড হচ্ছে তেজস আজ পর্যন্ত কোনদিন দুর্ঘটনাট শিকার হয় নি। ২০০১ থেকে এখনও পর্যন্ত ৫০০০ বার ফ্লাইট টেস্টের পরও তেজসে কখনও দুর্ঘটনা ঘটে নি, বিশ্বের অন্যকোন যুদ্ধবিমানের এই রেকর্ড নেই। ভারতীয় বায়ুসেনায় যুক্ত হবার পর রাফায়েলের পর দ্বিতীয় সবচেয়ে ঘাতক যুদ্ধবিমান হতে চলেছে তেজস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *