অফবিট

ভিনগ্রহের প্রাণীর লেখা পৃথিবীতে এখনও রয়েগেছে। কোন দেশে রয়েছে এই পাণ্ডুলিপি?

বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতির পরেও পৃথিবীতে  এখনো এমন অনেক জিনিস রয়ে গেছে যার রহস্য মানুষ ভেদ করতে পারেনি। ‘ভয়নিচ পান্ডুলিপি’কে ঘিরে রয়েছে এরকম ই এক রহস্য। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর পান্ডুলিপি বলে মনে করা হয় একে। কারও কারও মতে, এটি নাকি আসলে ভিনগ্রহের মানুষদের লেখা এবং  তারাই পৃথিবীতে রেখে গেছে এটি। প্রযুক্তির উন্নতি সত্ত্বেও 1500 শতকের প্রথম দিকে লিখিত এই পান্ডুলিপির ভাষা ও  সারমর্ম কোন ভাষাবিদের পড়ে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি। 1912 সালে উইলফ্রিড ভয়নিচ নামক এক বই বিক্রেতা এই পান্ডুলিপিটি ক্রয় করেন তা থেকেই পান্ডুলিপির এই নাম। অনুমানিক 1404 থেকে 1438চালের মধ্যে লিখিত 240 পৃষ্ঠা বিশিষ্ট এই পান্ডুলিপিটি চামড়ার তৈরি কাগজে লেখা।

প্রশ্ন উঠতে পারে যে কেন অনেকে মনে করেন পান্ডুলিপিটি পৃথিবীর কোন মানুষের লেখা নয় বরং ভিনগ্রহের কোন মানুষই এটিকে পৃথিবীতে রেখে গেছেন?  এর উত্তর হল 1500 শতকে প্রচলিত কোন ভাষা এমনকি বর্ণমালার সাথে এই পান্ডুলিপির ভাষার সামান্যতম মিল ও নেই ।এছাড়া এই পান্ডুলিপির পাতায় পাতায় রয়েছে অদ্ভুত সব ছবি ও রেখাচিত্র ।সেই সঙ্গে রয়েছে এমন কিছু বৃক্ষের ছবি যার সাথে পৃথিবীর কোন উদ্ভিদ প্রজাতির মিল নেই ।পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই দীর্ঘদিন বিশ্বের সবচেয়ে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অনেক নামকরা পন্ডিত এই পান্ডুলিপির সারমর্ম উদ্ধারের চেষ্টা করেছে কিন্তু কেউই সফল হতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি অংশ মনে করে এই প্রাচীন পুস্তকে মধ্যযুগের নানা চিকিৎসার বর্ণনা রয়েছে।এতে সেই সময়ের অ্যালকেমিস্ট দের কিছু গুপ্ত বিদ্যা ও লেখা থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। এই পান্ডুলিপিতে জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কীয় অনেক ছবি ও আছে।

প্রথমদিকে অনেকে মনে করেছিলেন যে কেউ  তামাশা করার জন্য এটি রচনা করেছেন তবে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন গবেষণা করে জানিয়েছেন যে এই পান্ডুলিপি তৈরি করতে যা সময় লেগেছে তা নিছক কেও মজা করার জন্য বানাতে পারে না  । পাপাণ্ডুলিপিটি কে রচনা করেছেন তা নিয়ে প্রচুর গবেষণা পরে কয়েকটি নাম সামনে এসেছে । কারোর কারোর মতে   এটি  ত্রয়োদশ শতকের  ইংরেজি দার্শনিক রজার বেকনএর লেখা । আবার কারও কারও মতে, এই পান্ডুলিপিটি ষষ্ঠদশ শতকের  ইংরেজি তান্ত্রিক এডওয়ার্ড কেলির লেখা। তবে পান্ডুলিপির লেখক কে বা ভাষা সম্পর্কে না জানা গেলেও পাণ্ডুলিপিটি পড়ে কিছু কিছু জিনিস অনুমান করা গেছে যেমন, পান্ডুলিপির এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো এর কিছু কিছু লেখা বাম দিক থেকে ডান দিকে লেখা হয়েছে আবার কিছু লেখা বামদিক থেকে ডানদিকে ।  এতে প্রায় 1 লাখ 70 হাজার স্বতন্ত্র চিহ্ন আছে, প্রতিটির মাঝখানে আছে একটু ফাঁক। দুই থেকে দশ অক্ষরের সমন্বয়ে পান্ডুলিপিটির প্রতিটি শব্দ গঠিত। শব্দের মধ্যে অক্ষরের বিন্যাসও বেশ অদ্ভুত। কোনো কোনো অক্ষর ব্যবহৃত হয়েছে শব্দের প্রথমে আবার কোনটি শুধু শেষে, কোনটি ব্যবহৃত হয়েছে কেবল শব্দের মাঝখানে। বিশেষজ্ঞরা পান্ডুলিপিটির ছবিগুলো পর্যালোচনা করে এটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। ব্যাপক গবেষণার পর তাদের কাছে মনে হয়েছে, পান্ডুলিপিটি ছয়টি ভাগে বিভক্ত, প্রতিটি ভাগরে বিষয় ও লেখার বিন্যাস ভিন্ন। এই ছয়টি ভাগ হচ্ছে ভেষজবৃক্ষ, জ্যোতির্বিদ্যা, মহাবিশ্বতত্ত্ব, ওষুধ-শাস্ত্র ও ওষুধের ব্যবস্থাপত্র বা প্রস্তুত প্রণালী। 1930 সালে উইলফ্রিড ভয়নিচ মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী ইথেল লিলিয়ান ভয়নিচ এই পান্ডুলিপিটির মালিক হন। 1996  সালে ইথেল লিলিয়ান ভয়নিচ মারা যান। মৃত্যুর পূর্বে এই পান্ডুলিপিটি তিনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অ্যান নিলকে দিয়ে যান। অ্যান নিল হ্যান্স ক্রাউস নামের এই বই ব্যবসায়ীর কাছে এটি বিক্রি করে দেন।

ক্রাউশ 1996 এ এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়কে উপহার হিসেবে প্রদান করেণ। বর্তমানে এই পুস্তক টি ওই বিশ্ববিদ্যায়ের দুষ্প্রাপ্য বই ও পান্ডুলিপি বিভাগে সযত্নে রক্ষিত আছে। ভয়নিচ পান্ডুলিপি নিয়ে এ পর্যন্ত বহু গবেষণা ও লেখালেখি হয়েছে। এই পান্ডুলিপিকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি উপন্যাসও রচিত হয়েছে। যার মধ্যে রাজ কানিংহামের ‘দ্য ভয়নিচ এনিগমা, এনরিক জোভেন- এর দ্য বুক অব গড অ্যান্ড ফিজিক্স ও রাসেল বেক এর ‘দ্য ভয়নিচ সাইফার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *