ডিফেন্স

Area 51। সত্যিই যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টপ সিক্রেট বেস হত এটি তাহলে কি এতো সহজে আমেরিকা মেনে নিতো?

নিজস্ব সংবাদদাতা:হালফিলের বেশ কয়েক বছরে বিভিন্ন conspiracy রিসার্চে ভরে গেছে ইন্টারনেটের কিছু সাইট। এর মধ্যে অর্ধেক আর্টিকেলেই নেই কোন যুক্তি তর্কের আগামাথা। ফলে পাঠকদের কাছে পৌঁছাচ্ছে ভুল তথ্য। আর ঠিক এই কারণেই conspiracy theory গুলিকে ভালো করে বিশ্লেষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে, সব থিওরি তো আর একসাথে আলোচনা করা সম্ভব নয় তাই আজ বরং আলোচনা শুরু করা যাক প্রায় সকলেরই চেনা  এরিয়া-51 conspiracy theory নিয়ে। বহুবছর থেকেই আমেরিকার নেভাডায় অবস্থিত এই অঞ্চল নিয়ে মানুষের মধ্যে দেখা গেছে নানা কৌতূহল। 

Area 51 নিয়ে নতুন করে কোন তথ্য দেওয়ার না থাকলেও বিশ্লেষণ করা বাকি রয়েছে অনেক কিছুই। কোন ঘটনা সম্পর্কে সঠিকভাবে বাস্তব প্রমাণ সমূহের উপর ভিত্তি করে অনুমান করাটাকেই তো সত্যঘটনার মূল হিসাবে ধরা হয়। আজকের আলোচ্য থিওরিগুলো খুব একটা অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হবে না বলেই আশা। কথাটা হচ্ছে অনেকেই মনে করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাস এর উত্তরে নেভাডা মরুভূমিতে রয়েছে এক গোপন গবেষণাগার যেখানে আমেরিকা নাকি চালাচ্ছে তাদের গোপন কোনো মিশন। অনেকে তো আবার এমনটাও বলেন যে ওটি নাকি আদপে এলিয়েনদের এক বেস। আর তা প্রমাণ করার জন্য অনেকে যুক্তি দেন ” পৃথিবীতে যখন কেউ কম্পিউটার জিনিসটা কি সেটাই ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারেনি তখন আমেরিকা এমন এক একটি জিনিস তৈরি করে ফেলেছে যা এলিয়েন টেকনোলজির ছাড়া সম্ভবই না।” তবে, শুধু এলিয়েনের কথা তুলেই কি গোটা ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে দেওয়া যায় এত সহজে? বিশ্বের বহু এক্সপার্ট এমনকি নেভাডা মরুভূমিতে ক্যম্প করতে আসা বহু আমেরিকানরা অব্দি দাবি করেন যে বিভিন্ন সময় এরিয়া 51 এর  দিকে আকাশে নানা অস্বাভাবিক লাইট কে ভাসতে দেখা যায়। ওগুলোকে তারা ইউএফও হিসাবেই দাবি করেন। অথাৎ UFO বা সাধারণ মানুষ যেগুলোকে ufo হিসেবে গণ্য করে তা রয়েছে সেখানেই।         

জনগণের অদম্য কৌতূহলের চাপে বাধ্য হয়ে আমেরিকা কিন্তু নিজেই স্বীকার করে নিয়েছে যে area ৫১ এ তাদের টপ সিক্রেট জিনিসপত্র থাকায় সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে সত্যিই যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টপ সিক্রেট বেস হত এটি তাহলে কি এতো সহজে আমেরিকা তা মেনে নিতো? নিজেই ভেবে দেখুন না এখন ভারত যদি লাদাখের নির্দিষ্ট কোনো একটি স্থানে নিউক্লিয়ার মিসাইলের সাইলো গোপন করে রাখতো তাহলে নিজে থেকেই কি চীনের কাছে তা স্বীকার করে নিত? বা চাপের মুখে লোকেশন ডিস্ক্লোজ করতো?                                      

মাঝে মাঝেই নেভাডার পশুপালকরা দাবি করেন যে area-৫১ এর আশেপাশে অনেক সময় নাকি সার্জিক্যাল ছুরি দিয়ে অঙ্গ কেটে নেওয়া গরু ঘোড়ার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। কেউ কেউ তো আবার এমনও দাবি করেন যে তারা স্বচক্ষে দেখেছে কিছু মিলিটারি ঘোড়া মেরে তার অঙ্গ সাবধানে প্যাক করে area 51 এর দিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। ব্যাপারটা কি একটু কিছু হাস্যকর শোনাচ্ছে না? “এলিয়েন নিয়ে রিসার্চ করার জন্যই এই সব অঙ্গ দরকার হচ্ছে,” না বলে একবার ভাবুনতো যে আমেরিকা ওয়ান বিলিয়ন ডলার খরচ করে তাদের নানা রকম গোপন প্রোজেক্টের জন্য সেখানে এতটা গোপনীয় একটা প্রজেক্টের জন্য বাইরে থেকে কেন অঙ্গ সংগ্রহ করা হবে মানুষের সন্দেহ বাড়িয়ে? আর মিলিটারিরা চিনুক বা চপার নিয়ে এরকম গুপ্ত কাজের নামবে আর প্লেনের বিকট আওয়াজ পাওয়া সত্বেও সেখানকার আশেপাশের লোকজন একবারও বাইরে বেরোবে না এটা কি স্বাভাবিক? গোপন কাজে এত বড় রিস্ক নেবেই বা কেন মিলিটারি

আরেকটা কথা ভেবে দেখুন, যে লোক ফাইটার প্লেন চালাচ্ছে সেই নিশ্চয়ই আবার গৃহপালিত প্রাণীর দেহ কাটা ছেড়ার কাজটি করবে না! এত বড় গোপনীয় এক কাজের জন্যই যখন অঙ্গগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে তখন তার জন্য আলাদা ফরেনসিকের লোকজনও নিশ্চয়ই থাকবে। একটি বেসের মধ্যে এই সমস্ত রকমের কাজ করা হচ্ছে এটা কি কখনো বিশ্বাস যোগ্য হতে পারে? আর গোপনীয়তার সাথে ফরেনসিকের কাজটা মরুভূমির নিচে থেকে করাটা সুবিধার নাকি আলাস্কার জনবিহীন ঠান্ডা বরফজমা পরিবেশে দূর্গম জঙ্গলের ভেতর করা ভালো?                                     

ফরেনসিকের কাজের সাথে জড়িয়ে রয়েছেন যারা তারা সকলেই আশা করি সমর্থন করবেন যে অস্ত্রবিজ্ঞান হচ্ছে একটি শিল্প। দীর্ঘদিন ধরে গোপন ঘরে আত্মগোপন করে হয়না এসব কাজ। সেই 1950-60 এর দশকে যখন প্রযুক্তি আজকের মতো এতো উন্নতি করেনি তখনো  SR71°,B2°, F22° এর মতো জিনিস বানাতে হলে ইন্জিনিয়ারদের মানসিক চাপের কথা মাথায় রেখে পর্যাপ্ত ফাঁকা সময় দেওয়া হতো তাদের।  

কিন্তু তাহলে আসল ঘটনাটা ঠিক কি?area-৫১ এর মতো জায়গায় রয়েছে টা কি?এখানে কি সত্যিই এলিয়েন নিয়ে কাজ হচ্ছে? আর তা যদি নাই হবে তাহলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ কেন? লেখার প্রথম এর পয়েন্টটা পড়লে দেখবেন area-৫১ এ কিছু একটা যে রয়েছে এই কথা নিশ্চিত আবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পয়েন্টটা পড়লে দেখবেন হিসাব মিলছে না একেবারেই! আসলে ব্যাপারটা হল ওই অঞ্চলে প্রবেশ না করতে পারলে কারোর পক্ষেই জানা সম্ভব নয় যে ওই অঞ্চলের ভেতরে ঠিক কি চলছে। তবে এলিয়েন নিয়ে যে গবেষণা হচ্ছে না বা সেটি যে এলিয়েনদের কোন গোপন ঠেক নয় এ বিষয়ে থাকতে পারেন নিশ্চিন্ত। অন্য কিছুই নয় বরং যতদূর সম্ভব এটি আমেরিকার এক গোপন অস্ত্র পরীক্ষাগার বা এআর বেস। তাই স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ সেখানে। আর তাই ই হয়তো এখন চাপে পড়ে আমেরিকা গোটা সত্য স্বীকার করতে না পারলেও অর্ধেক স্বীকার করছে। আজ থাক এতটা অব্দি। পরের দিন না হয় আবার আলোচনা করা যাবে নতুন এক কন্সপিরেসি থিওরি নিয়ে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *