মহাবিপর্যয়ের মধ্যে টিকে থাকতে গেলে কিভাবে এগিয়ে যাবে ভারতবাসী? আমেরিকা থেকে জানালেন ডাক্তার
নিউজ ডেস্কঃ মহামারীটি সমগ্র বিশ্বে ধ্বংস বয়ে এনেছে এবং কোন দেশ বা সমাজের কোন স্তরকেই বাদ রাখে নি। আমি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুস্টেস মেডিকেল স্কুলের সাইকিয়াট্রি এন্ড ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্টের একজন সহকারী অধ্যাপক। আমি গত দু’মাস ধরে ক্লায়েন্টেদের সঙ্গে অনলাইন সেশন চালাচ্ছি এবং এই সময়কালে ভারতে এমন ধরনের বহু উদ্যোগ সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আমি অ্যাগোরাফোবিয়া ও অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিজঅর্ডারের মত উদ্বেগ সংক্রান্ত রোগসহ গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। সত্যিটা হল এই যে মহামারীটি সমাজের বিভেদকে অস্পষ্ট করে দিয়েছে এবং সকল বয়সের সব ধরনের ব্যক্তিকে প্রভাবিত করেছে। মানুষ হিসেবে, ভিতর থেকে আমরা অত্যন্ত সাদৃশ্যপূর্ণ এবং একই ধরনের প্রয়োজন ও কষ্ট আমাদের সকলের আছে। আমি পর্যবেক্ষণ করেছি যে এই বিপন্নতা মানসিক পরিস্থিতিসমূহকে আরো গুরুতর করে তুলেছে, এবং আপাত সুস্থব্যক্তির জন্য নতুন সমস্যা উত্থাপন করেছে। ভাইরাসটির সংক্রমণের এবং আমাদের চাকরি ও উপার্জনের উপরে এর প্রভাব সম্পর্কিত একটি বৃহৎ আতঙ্ক আছে।
যদিও কোভিড-১৯ সমস্যাটি নজিরবিহীন ও নতুন নতুন সব চিন্তার উত্থাপন করছে, তবুও মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত লক্ষণগুলি পরিচিত এবং এগুলির সমাধান করা অসম্ভব কিছু নয়। আপনার যদি মনে হয় যে আপনার পায়ের তলার মাটি সরে গেছে এবং আপনার চারপাশের পৃথিবীটা ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে যাচ্ছে তবে এমনটি আপনার একার মনে হচ্ছে না। আপনি হয়ত আপনার প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, আপনার চাকরি খুইয়েছেন, বা এমন বিপর্যয়ের অনবরত ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে, আপনি হয়ত আবদ্ধ, বিরক্ত, অস্থির, খিটখিটে মেজাজ, এবং অত্যন্ত মানসিক চাপ অনুভব করতে পারেন। আমরা যদি এই সমস্যাপূর্ণ পরিস্থিতিগুলির মধ্য দিয়ে যাওয়ার কৌশল শিখে নিতে পারি, তবেই সমস্যাগুলির সমাধান করার মত সময় আমরা হাতে পাব। এখানে আমি সবথেকে কঠিন মুহুর্তগুলির মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত কিছু কৌশলের কথা বলতে চাই।
আপনি যখন অত্যন্ত হতবিহ্বল অনুভব করেন, তখনকার প্রথম পদক্ষেপ হল একপা পিছিয়ে যাওয়া এবং এটি উপলব্ধি করা যে আবেগের ঢেউ আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলেও এটি একসময় শান্ত হয়ে যাবে তা সে যত্ই উঁচু মাপের হোক না কেন। এরপরে, আপনার শরীরকে শিথিল করে আপনার আবেগের তীব্রতাকে কমানোর চেষ্টা করুন, হয় প্রচুর ব্যায়াম করে, বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে, বা আপনার মুখমন্ডলে বরফ রেখে। আপনি যখন অতি মানসিক চাপে থাকবেন তখন কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বা আবেগতাড়িত পদক্ষেপ না নেয়ার চেষ্টা করুন। যখন আপনি শান্ত হয়ে যাবেন তখন পুনরায় সমস্যার দিকে নজর দেয়ার অভিপ্রায় নিয়ে, কিছুক্ষণের জন্য মনকে বিক্ষিপ্ত করুন। বর্তমান মুহুর্তটিকে উতরে যাওয়ার দিকে মনোসংযোগ করুন, এবং এটিও একসময় পেরিয়ে যাবে।
আপনার বিশ্বস্ত কোন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলুন। তারা হয়ত আপনার সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না, কিন্তু একজন শ্রবণেচ্ছু ব্যক্তি ও তার আবেগী সমর্থন আপনাকে সামনে এগিয়ে চলার শক্তি যোগাবে। এছাড়াও, অন্যদের কাছে যাওয়ার মানে এই নয় যে আপনি মানসিকভাবে দুর্বল এবং নিজের সমস্যার সমাধান নিজে করতে পারেন না। মনে রাখবেন, অন্যেরা আপনাকে সহযোগীতা করতে পারছেন শুধুমাত্র এই জন্য নয় যে তারা মানসিকভাবে শক্তিশালী, বরঞ্চ তারা সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে সমস্যাটি দেখতে পারছে কারণ তারা তীব্র আবেগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন না। এছাড়াও, ঐক্যবোধ ও মানবিকতা ভাগ করে নেয়াটা পীড়াদায়ক ঘটনা ও বিপর্যয় থেকে উতরে ওঠায় সাহায্য করে থাকে। অন্যের কাছে মনের কথা বলতে বা আর কারো কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে ভয় পাবেন না! মনে রাখবেন যে এই নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলি গ্রহণের পরেও আপনি যদি হতবিহ্বল হয়ে পড়েন, তবে আপনার স্থানীয় কমিউনিটির মাধ্যমে পেশাদার সহযোগীতার খোঁজ করা উচিত।