ডিফেন্স

আমেরিকার সহায়তায় যুদ্ধবিমান তৈরি করেছিল চীন এবং পাকিস্তান। কোন দেশের হাতে আছে জানেন?

নিউজ ডেস্কঃ jf 17 এমন এক যুদ্ধবিমান যা একাধিক মিশনে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি এক জঘন্য যুদ্ধবিমান, যা চীন এবং পাকিস্তান একসাথে তৈরি করলেও চীন ব্যবহার করেনা। পাকিস্তান, নাইজেরিয়ার মতো আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পরা দেশ গুলি এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে থাকে। JF-17 এর ভেতরে চীন-আমেরিকা-রাশিয়া-পাকিস্তান চার দেশেরই ছোয়া রয়েছে। তবে প্রশ্ন হল কি করে?  পাকিস্তানের হাতে থাকা চীনা J-7 , যেটি সভিয়েত রাশিয়ার Mig-21 এর কপি ছিল, তা অন্তত Mig-29(সদ্য সার্ভিসে আসা) এর সামনে টিকতে পারত না। আর মিগ ২৯ এর বিরুদ্ধে এক বিধ্বংসী বিমান তৈরি করতে এই প্রোজেক্ট শুরু হয়। এমত অবস্থায় পাকিস্তান সাহায্য চায় চীনের। আর আমেরিকা তো আগে থেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেখেছিল। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সোভিয়েত Mig-29 কে কাউন্টার করতে পাকিস্তানের J-7 গুলিকে বিরাটভাবে মর্ডানাইজেশন করা হবে। সেই অনুযায়ী চিনের চেংদু এরোস্পেস কর্পোরেশন (CAC) , আমেরিকার গ্রুমম্যান সেই মর্ডানাইজেশন প্রোগ্রামে একত্রে কাজ করা শুরু করে। প্রোগ্রাম এর নাম দেওয়া হয় “প্রজেক্ট স্যারর-২”। আমেরিকা, চীনের প্রচেষ্টায় এত কিছু করার পর J-7 এর যে রূপটি দাড়িয়েছিল, তাকে যখন আকাশে আমেরিকান ফাইটারের সামনে রাখা হয়, তার পারফরম্যান্স অতি জঘন্য ছিল। ফলে তাকে আর সভিয়েত Mig-29 এর সামনে রাখার সাহস করে উঠতে পারে নি তারা। আর এই ভাবেই “প্রজেক্ট স্যারর-২” এর মৃত্যু ঘটে। যাই হোক ব্যর্থ হলেও তারা একেবারে ছেড়ে দেয় নি। পুনরায় চীন এবং আমেরিকা এর কাজ শুরু করে, তবে এবার প্রজেক্ট “সুপার-৭” নামে। এমত অবস্থায় গ্রুমম্যান তাদের তুরুপের তাস F-16 এর কিছুটা টেকনোলোজি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রজেক্ট “সুপার-৭” পরিকল্পনা অনুসারেই এগোচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ জন্ম নেয় এক মহাবিতর্কের! ১৯৮৯ সালে চীনা আর্মি বিক্ষোভ কারীদের ওপর চালায় অমানবিক আক্রমণ, যা ইতিহাসে “টিয়ানানমেন স্কয়ার গনহত্যা” নামে পরিচিত। এই নিন্দনীয় ঘটনার পরে ইউরোপীয় দেশ গুলি একত্রে চীনকে বয়কট করা শুরু করে, বাধ্য হয় আমেরিকাও। সুপার-৭ প্রজেক্ট থেকে বেড়িয়ে আসে গ্রুমম্যান। ফলস্বরূপ পাকিস্তানের স্বপ্নের “সুপার-৭” প্রজেক্ট মুখ থুবরে পরে। বন্ধ হয়ে যায় প্রজেক্ট সুপার-৭।

এর পরে প্রায় দশ বছর অতিক্রম করেছে। পৃথিবীতে বহু ঘটনা ঘটে গেছে। আফগান যুদ্ধ শেষ হয়েছে। বিরাট সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে। রাশিয়ার জন্ম হয়েছে। এক সময়ের মিত্র দেশ চীন-আমেরিকার সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের ও। ১৯৯৮ সালে চীন ও পাকিস্তান সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা দশ বছর আগের সেই প্রজেক্ট সুপার-৭ এর উন্নয়ন পুনরায় শুরু করবে। প্রজেক্টের নাম হয় JF-17। গ্রুমম্যান বেড়িয়ে যাওয়ায় নতুন ইঞ্জিনের দরকার ছিল। তখন রাশিয়া এগিয়ে আসে। তাদের বাতিল হয়ে যাওয়া Mig-33 বিমানের কিলমোভ RD-93 ইঞ্জিন JF-17 এর জন্য অফার করে। এই RD-93 ছিল, সেই সময়ের Mig-29 এর RD-33 এর অত্যাধুনিক ভার্সন। কি অদ্ভুত এই পৃথিবীর কূটনৈতিক সম্পর্ক তাই না? যে Mig-29 কে হারানোর জন্য JF-17 কে তৈরী করা হচ্ছিল, তাকেই এখন প্রান দিয়েছে সেই Mig-29 এর ইঞ্জিন। পুরনো ডিজাইন কিছুটা সমস্যায় ফেলছিল JF-17 প্রজেক্ট কে। এমন অবস্থায় আবার ও সহযোগী হল রাশিয়া। ১৯৮০ এর দিকে সোভিয়েত রাশিয়া ,আমেরিকার F-16 কে কাউন্টার করার জন্য “প্রজেক্ট-৩৩” নামের একটি এক ইঞ্জিনের ফাইটার জেট তৈরীর আদেশ দেয় মীকোয়ান কে। তারা তৈরী করে এক ইঞ্জিনের Mig-33। কিন্তু ১৯৮৬ তে ক্রমাগত অর্থনৈতিক ভাবে অবনতি হ‌ওয়া রাশিয়ার সেই সক্ষমতা ছিল না যে,আরো একটি নতুন প্রজেক্ট শুরু করবে। তাই তারা সেই Mig-33 বানানো বন্ধ করে দেয়। ১৯৯৮ সালে চীন রাশিয়া থেকে সেই বাতিল প্রজেক্টের Mig-33 এর ব্লুপ্রিন্ট ক্রয় করে। আর তার‌ই ডানা, যা অনেকটাই F-16 এর মতো ছিল, কাজে লাগানো হয় JF-17 এ।

আর এভাবেই প্রথমে আমেরিকার সহায়তায়, পরে রাশিয়ার সহায়তায় , চীন ২০০৩ এ প্রথম JF-17 কে আকাশে ওড়ায়। ২০০৬ এ এটির ফাইনাল প্রোডাকশনে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়। ঐ এক‌ই বছর চীন পাকিস্তানে JF-17 এর মূল ম্যানুফাকচারিং ইউনিট পাকিস্তানে সরিয়ে নেয়। ২০০৮ সালে পাকিস্তান নিজেদের কারখানায় চীনা টেকনোলজি ট্রান্সফার এর মাধ্যমে প্রথম JF-17 বানাতে সক্ষম হয়। ২০১০ সালে পাকিস্তানের তৈরী প্রথম JF-17 কে অপরাশনাল ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়।

এবার আসি যাক JF-17 এর সেই দূর্লভ সফলতার কথার ব্যাপারে। ২০১০ এই JF-17 এর প্রথম স্কোয়াড্রন গঠিত হয়। তাদের টাস্ক দেওয়া হয় পাকিস্তান অধিকৃত ওয়াজিরিস্তানের দক্ষিণ অংশে,উপজাতি দের ওপর বোম্বিং অপারেশন চালানো। খুব সম্ভবত JF-17 ই একমাত্র আধুনিক ফাইটার জেট,যাকে পাকিস্তান নিজের দেশের মানুষের ওপর ব্যবহার করেছে। এটি লজ্জাজনক এবং কাপুরুষতা হলেও JF-17 এর জন্য দূর্লভ সফলতাই বটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *