ডিফেন্স

মেক ইন্ডিয়া নীতির জয়জয়কার। আগামি ৫ বছরের মধ্যে ৫ ধরনের দেশীয় যুদ্ধবিমান হাতে আসতে পারে সেনাবাহিনীর

নিউজ ডেস্কঃ একটা সময় ছিল যখন ভারতকে একাধিক বিরোধের মুখে পড়তে হত। বিশেষ করে আমেরিকার একাধিক বাঁধা ভারতবর্ষের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রির অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে দিন পাল্টেছে সময়ের সাথে ভারতবর্ষের গুরুত্ব বেড়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। একটা সময় শুধু রাশিয়ার তৈরি যুদ্ধাস্ত্র ভারতের সেনাবাহিনীর হাতে ছিল, আর এখন আমেরিকা ঠেকে শুরু করে ফ্রান্স এবং ইউরোপের বহু দেশের তৈরি যুদ্ধাস্ত্র ভারতের সেনাবাহিনীর হাতে দেখা যায়। অর্থাৎ একটা কথা স্পষ্ট যে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ভারতের গুরুত্ব কতোটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই দশককে অর্থাৎ ২০২০ ঠেকে ২০৩০ ভারতীয় অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির জন্য ব্যস্ত দশক বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে যুদ্ধবিমান প্রোগ্রামের কথা বলতে হয় তাহলে প্রমান স্বরূপ প্রচুর প্রোজেক্ট রয়েছে সেনাবাহিনীর হতে। কারণ ২০৩০ এর মধ্যে ভারত দেশীয় প্রযুক্তির তৈরি প্রচুর যুদ্ধবিমান সেনাবাহিনীর হাতে আসতে চলেছে।

● Tejas LCA AF MK-1A

● Tejas MK-2 (MWF)

● ORCA AF

● TEDBF IN

● AMCA

তবে এরও পরিমাণ এবং এতো ধরনের যুদ্ধবিমান তৈরি করা কি এতোটাই সোজা ছিল?আজ ভারতের অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কোথায় দাড়িয়ে রয়েছে ভাবতে পারছেন?

আশির দশকে ভারতীয় বায়ুসেনায় নিজস্ব সিঙ্গেল ইঞ্জিন যুদ্ধবিমান তৈরীর কথা ভাবা হয়েছিল। যা আধুনিক যুদ্ধের উপযোগী হওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় বায়ুসেনার পুরনো MIG-21 গুলিকে রিপ্লেস করবে। তবে পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের মধ্যে অনেক পার্থক্য। কারণ এটি নিজের দেশে কোনও গাড়ি তৈরীর কাজ নয় যুদ্ধবিমান তৈরীর পরিকল্পনা। শুধু যে কারিগরি বাধা বা আর্থিক বাধার সম্মুখীন হতে হবে তাই নয় পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আর্মস মার্কেট এর শক্তিশালী লবির বিরুদ্ধেও দাড়াতে হবে যা এককথায় সোজা নয়। তারপর আবার আমেরিকার অবরোধ, কারণ ভারতের পারমাণবিক শক্তি প্রদর্শন, যা আমেরিকা এবং ইউরোপীয় বন্ধুরাষ্ট্র গুলির মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এতো বাধার পরেও ১৯৯০ এর দিকে ভারতের আধুনিক যুদ্ধবিমান প্রকল্পের প্রথম ডিজাইন গৃহীত হয়। যা আজকের তেজাস যুদ্ধবিমানের প্রথম প্রথম রূপ ছিল। এরপর এক দশক ধরে তেজাসের বিভিন্ন প্রোটাইপ তৈরী করা হয়েছে,তাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে অবশেষে ২০০১ সালে ভারতের আধুনিক তেজাসকে প্রথম আকাশে উড়তে দেখা যায়। যদিও ততদিনে ভারত পৃথিবীর বুকে নতুন অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ হিসাবে নিজেকে প্রমান করেছে। পাশাপাশি ভারতের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক মজবুত হয়েছে। অবশেষে প্রথম উড্ডয়নের প্রায় পনেরো বছর পর ২০১৫ সালে প্রথম তেজাস ফাইটার জেট ভারতীয় বায়ুসেনার অংশ হয়।

অর্থাৎ তেজাসকে তৈরী করতে গিয়ে ভারতকে অনেক ধরনের অনেক বাধা বিপত্তীর সম্মুখীন হতে হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে তেজাসের উন্নয়নের সময়‌ও বেশি মনে হতে পারে (যদিও অনেক ইউরোপের ইউরোপীয় ফাইটার জেটের উন্নয়নের সময় তেজাসের মতো বা তেজাসের থেকে বেশি লেগেছে) বিভিন্ন বাধা বিপত্তি কাটিয়ে তেজাস আজ ভারতের সফল প্রজেক্ট। প্রায় ছয় স্কোয়াড্রন তেজাস ফাইটার জেট ভারতীয় বায়ুসেনার অংশ হতে চলেছে।এই যুদ্ধবিমান ক্রয় করতে আগ্রহ দেখিয়েছে পৃথিবীর বহুদেশ।

তেজাস তৈরী করতে এত সময় লেগেছে। তাহলে এত গুলি যুদ্ধবিমান তৈরী করতে ভারতের আরো সময় লাগবে। তবে সেরকম নয়, আসলে তেজাস প্রজেক্ট হওয়ার ফলে বিভিন্ন বাধা বিপত্তির মধ্যে একবার কাটিয়ে ওঠা গেছে, ফলে পরবর্তী ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে। তেজাস প্রজেক্ট সফল হ‌ওয়ার পর অ্যাভিয়েশন টেকনলোজির বিভিন্ন কঠিন ধাপ সম্পর্কে আরো ভালো ভাবে অবগত হয়েছে সেনাবাহিনী। ভারতের সাথে আমেরিকা-ইউরোপ-রাশিয়ার সম্পর্কের উন্নয়ন চরম পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি ভারত সরকারের দেশীয় প্রযুক্তির ওপর বিশ্বাস। তেজাসের টেকনলোজির ওপর ভর করে,এবং এর অত্যাধুনিক পরিকাঠামোর উপর ভর করে Tejas MK-2 তৈরী হতে চলেছে। যার প্রথম উড্ডয়ন ২০২৩ এ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি ২০২৫ এর মধ্যে  তৈরি শুরু হয়ে যাবে। ২০২৫ থেকে ২০২৬ এর মধ্যে ভারতে অত্যাধুনিক চতুর্থ প্রজন্মের দুই ইঞ্জিনের ORCA এবং TEDBF এর ও প্রথম প্রোটাইপ আকাশে উড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এক‌ই সময়ে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান AMCA এর প্রথম উড্ডয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। বায়ুসেনার পরিকল্পনা অনুসারে ২০৩০ এর মধ্যেই এই যুদ্ধবিমান গুলির প্রোডাকশন শুরু হতে চলেছে।

সময় একটু এদিক ওদিক হতে পারে তবে তেজাসের মতো এতো সময়ের হেরফের হবেনা বলে মনে করছে সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ সম্পুর্ন ভাবে ভারতীয় প্রযুক্তির পক্ষে। ভারতের প্রোগ্রাম কে ভারত সরকারের সাথে সাথে বিদেশী টেক-জায়েন্ট রাও সাপোর্ট করছে। ফলে ভারতের অ্যাভিয়েশন শিল্প সেভাবে আর কোনও বাঁধা নেই। যুদ্ধবিমানের আধুনিক ইঞ্জিন এবং আধুনিক রাডার বানানোর কাজটা অতি কঠিন একটি কাজ,পৃথিবীর হাতে গোনা তিন চারটি দেশের কাছে এই টেকনলোজি আছে,যাদের জিনের উপর ভরসা করা যেত পারে।

ভারত ২০২৪ এর মধ্যে ঐ সব দেশের সাহায্যে ইঞ্জিন টেকনলোজিতে স্বয়ং সম্পুর্ন হতে চলেছে। আধুনিক রাডার টেকনলোজি ইতিমধ্যেই ভারতের হস্তাগত করা হয়েছে।, যদি যুদ্ধবিমানের অস্ত্রের কথা বলা হয়, তাহলে বলতে হবে আগামী দুই বছরছর মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত রকম মিসাইল টেকনলোজি সেনাবাহিনীর হাতে আসতে চলেছে। পাশাপাশি ভারত পরবর্তী প্রজন্মের আকাশ যুদ্ধের কথা ভেবে যে প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে — ‘কমবেট এয়ার টিমিং সিস্টেম’ (CATS) ,এর প্রথম আনম্যান্ড লয়াল উইংম্যান CATS WARRIOR কে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে আকাশে উড়তে দেখে যেতে চলেছে। ভারতের এই অ্যাভিয়েশনের এই সক্ষমতা একদিনে তৈরী হয়নি।এতদিন বহু কাঠখর পোড়াতে হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *