ডোকলামে চীন রাস্তা তৈরি করতে না পারলেও ভারত সড়ক নির্মান করতে চলেছে
জলপাইগুড়ি থেকে ডোকলাম পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মানের ঘোষনা করেছে ভারত। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে জলপাইগুড়ি থেকে সিকিম হয়ে ডোকলাম পর্যন্ত সরাসরি নির্মিত হতে চলা এই সড়ক তিনটি কারনে স্ট্রাটেজিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হতে চলেছে। প্রথমত আজ থেকে সাত বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালে ভুটানের ডোকলাম উপত্যকাতে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল ৭২ দিন ধরে। দ্বিতীয়ত ডোকলামে ভারত ও চীনের মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়েছিল চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির অবৈধ ভাবে রাস্তা নির্মানকে কেন্দ্র করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বাধায় চীনের সেনাবাহিনী সড়ক নির্মান বন্ধ করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল সেসসময়। তৃতীয়ত ভারত সরকার যে সড়ক নির্মান করতে চলেছে তা শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছে হতে চলেছে যার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হতে চলেছে এই সড়ক। শুধু ভারতীয় সেনাবাহিনীই নয় বরং বেশ কিছু স্ট্রাটেজিক ও ভূ রাজনৈতিক সুবিধাও রয়েছে এই সড়কের। এই সড়ক নির্মানের মাধ্যমে ভারত ও ভুটানের কুটনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।
জলপাইগুড়ির খুনিয়া মোরে অঞ্চল থেকে নক্সাল, ঝালং, পারেন, টোডে, টাংটা, আরিতার, রাংলি, জুলুক, নাথাং উপত্যকা, কুপুপ এবং জেলেপ লা হয়ে ডোকলাম পর্যন্ত ১৭৯ কিলোমিটার লম্বা এই রাস্তা ভারত চীন সীমান্তের কাছাকাছিই অবস্থিত। জেলেপ লা পাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন কারন এখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে। সড়কপথে ভারত থেকে ভুটান প্রধানত দুটি পথে যাওয়া যায়, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির কাছে ফুন্টশোলিং হয়ে এবং আসামের জেলেফু হয়ে। এই নতুন সড়ক নির্মানের ফলে আরও একটি নতুন পথে ভুটানে প্রবেশ করা সম্ভব হবে। এই নতুন পথ তৈরি হয়ে গেলে সিকিম থেকে ডোকলামে পৌঁছাতে সময় আরও কম লাগবে। যার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী আরও তাড়াতাড়ি ডোকলাম পৌঁছাতে পারবে। ডোকলাম থেকে জেলেপ লা পর্যন্ত ইতিমধ্যেই একটি রাস্তা আছে যা ভারতীয় সেনাবাহিনী ব্যবহার করে কিন্তু সেই রাস্তা প্রচুর পরিমানে সেনাবাহিনীর গাড়ি যাওয়ার জন্য ততটা উপযুক্ত নয়, এই নতুন রাস্তা তৈরি হয়ে গেলে সেনাবাহিনীর জন্য খুবই সুবিধা হবে।
ডোকলামের অবস্থান স্ট্রাটেজিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। ডোকলাম বা ঝংলান বা ডংলং জাকারলুং এবং পাসামলুং এর মতই চীন ও ভুটানের মধ্যে একটি বিতর্কিত এলাকা। ডোকলাম মালভূমি ও উপত্যকা যুক্ত একটি অঞ্চল যা ভারতের কাছে ভুটান চীন সীমান্তে অবস্থিত। ডোকলামের একদিকে রয়েছে সিকিম, আরেক দিকে রয়েছে চীন অধিকৃত তিব্বতের ইয়াডং এলাকা এবং অন্যদিকে রয়েছে ভুটানের মূল ভূভাগ। উত্তরে তিব্বতের চুম্বি উপত্যকা, পূর্বে ভুটানের হা উপত্যকা এবং পশ্চিমে ভারতের সিকিমের মধ্যে অবস্থিত এই ডোকলাম ভারত, চীন ও ভুটান তিন দেশের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। ডোকলাম অঞ্চল যদি চীনের হাতে চলে যায় তাহলে ভুটানের পাশাপাশি ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্যও এটা একটি বড় হুমকী। চীন যদি ডোকলাম দখল করে তাহলে ডোকলমের উচ্চভূমি থেকে ভুটানকে যেকোনও যুদ্ধে পরাজিত করা চীনের জন্য খুবই সহজ হবে। তাছাড়া ডোকলাম থেকে ভারত সীমান্তে ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি সহ যুদ্ধাস্ত্র বহন করে নিয়ে যাওয়া চীনের জন্যও অত্যন্ত সুবিধাজনক হবে। শিলিগুড়ি অঞ্চলের ২০-২২ কিলোমিটার সংকীর্ন পথ দিয়ে ভারতের মূল ভূভাগের সাথে উত্তর পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের সংযোগ রয়েছে। শিলিগুড়ির ২০-২২ কিলোমিটার লম্বা এই পথকে শিলিগুড়ি করিডর বা চিকেন নেক বলে। চীন ডোকলাম দখল করতে পারলে উচ্চ অঞ্চল থেকে খুব সহজেই চিকেন নেকে আক্রমন করতে পারে কারন চিকেন নেকে আক্রমনের অর্থ সমগ্র উত্তর পূর্ব ভারতের সাথে সংযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়া। যার জন্য যেকোনও মূল্যে ডোকলামকে রক্ষা করতে প্রস্তত ভারতীয় সেনাবাহিনী।
২০১৭ সালে তিব্বতের ইয়াডং এলাকা থেকে ডোকলাম পর্যন্ত সড়ক নির্মান শুরু করেছিল চীন। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর বাধায় চীনের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বর্তমানে ভারত সেই ডোকলাম পর্যন্ত সড়ক নির্মান করতে চলেছে। চীন যে সড়ক নির্মান করতে পারেনি, এবার ভারত তা করতে চলেছে যা প্রমান করে ডোকলাম উপত্যকাতে ভারত অনেকবেশী শক্তিশালী। এই রাস্তা নির্মান চীনের বিরুদ্ধে ভারতের একটি স্ট্রাটেজিক বিজয়ও বটে। কিছুমাস আগেই ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে এসেছিলেন, তিনি সেসময় ভারত সরকারকে অনুরোধ করেন জেলেফুতে একটি স্মার্ট শহর তৈরির। এসব ঘটনা প্রমান করে চীনের তুলনায় ভারতের সাথে ভুটানের কুটনৈতিক সম্পর্ক অনেক বেশী মজবুত।