রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছে ইউক্রেন?
ইন্সটিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার বা আইএসডব্লিউ এর তথ্য অনুযায়ী ইউক্রেন এই বছরের শেষের দিকে এফ ১৬ যুদ্ধবিমান পেতে চলেছে মিত্র দেশগুলোর থেকে। তবে এফ ১৬ পাওয়ার আগেই রাশিয়ান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে ইউক্রেন। গত ১২ জুন আমেরিকার আইএসডব্লিউ সংস্থাটি জানিয়েছে যুদ্ধবিমানের ব্যবহার কার্যকর করতে ইউক্রেনে রাশিয়ান এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে দুর্বল অথবা ধ্বংস করার চেষ্টা শুরু করেছে। এই জন্য বিগত কিছু দিন ধরে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লক্ষ্য করে আক্রমন শুরু করেছে ইউক্রেন। গত ১১-১২ জুন রাশিয়া অধিকৃত ক্রিমিয়ার সেবাস্তোপোল এবং বেলবেকের কাছে একটি এস ৩০০ ও দুটি এস ৪০০ ব্যাটরিতে আঘাত করে ইউক্রেন। উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে রাশিয়ার এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ডিঝাকোই এর দক্ষিনে একটি এস ৪০০ রেডারকে সম্পূর্ন ধ্বংস করে দিয়েছে ইউক্রেন এবং ইয়েভপাটোরিয়ার উত্তরে একটি এস ৩০০ সিস্টেমও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউক্রেনের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স বিভাগের (ডিআইইউ) ক্রাকেন রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা কোস্টিয়ানটিন নেমিচেভ জানিয়েছেন ইউক্রেনের সেনাবাহিনী হিমার্স রকেট ব্যবহার করে বেলগোরোড ওব্লাস্টের চারটি এস ৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। যদিও নেমিচেভ এই অপারেশনের সঠিক তারিখ উল্লেখ করেনি। ক্রিমিয়াতে ইউক্রেনের ক্রমাগত আক্রমনের কারনে রাশিয়া জুন মাসের শুরুতেই ক্রিমিয়া থেকে বেলগোরড ওব্লাস্টে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরিয়ে নিয়ে যায় যার জন্য ক্রিমিয়ার চার পাশে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তেমন মোতায়েন ছিলনা। কিছু দিন আগেই ইউক্রেন রাশিয়ার বিমান ঘাঁটিটিতে ড্রোন হামলা করেছিল। ডিআইইউ এর মুখপাত্র আন্দ্রি ইউসভ রাশিয়ার আস্ট্রাখান ওব্লাস্টের আখতুবিনস্ক বিমান ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার কথা জানিয়ে বলেছিলেন রাশিয়ার দুটি পঞ্চম প্রজন্মের এসইউ ৫৭ যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ড্রোন হামলায়। রাশিয়ার এস ৪০০ এয়ারডিফেন্সকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলা হয়। এস ৪০০ আমেরিকার এফ ৩৫ এর মতোন পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানকে শনাক্ত করতে সক্ষম। সেই তুলনায় চতুর্থ প্রজন্মের এফ ১৬কে অনেক সহজেই ধ্বংস করতে পারবে এস ৪০০, এই জন্য ইউক্রেনে রাশিয়ার এস ৩০০, এস ৪০০ এর মতোন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করর চেষ্টা করছে। তবে রাশিয়া এস ৫০০ নামে আরও একটি আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে যা পূর্বের সমস্ত ভার্সনের থেকেও অনেক বেশী শক্তিশালি। এস ৫০০কে বিশ্বের সর্বাধুনিক এয়ারডিফেন্স সিস্টেম বলা হচ্ছে।
বেলজিয়ামে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দপ্তরের একটি বৈঠকে দেশটির জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল চার্লস কিউ. ব্রাউন জুনিয়র জানিয়েছে আগামী কয়েকমাসের মধ্যে ইউক্রেন প্রথম ধাপে বেশ কয়েকটি এফ ১৬ যুদ্ধবিমান পেতে চলেছে। কিছু দিন আগেই নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী কাজসা ওলংগ্রেন জানিয়েছে তারা ইউক্রেনকে এফ ১৬ যুদ্ধবিমান দেবে। তবে প্রথমধাপে নেদারল্যান্ডস কতগুলো এফ ১৬ ইউক্রেন পেতে চলেছে তার সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। নেদারল্যান্ডসের পাশপাশি ডেনমার্ক, বেলজিয়াম এবং নরওয়েও তাদের এফ ১৬ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত মে মাসে বেলজিয়াম ইউক্রেনের সাথে একটি নিরাপত্তা চুক্তি করে যাতে বলা হয় ২০২৮ সালের মধ্যে বেলজিয়াম ৩০টি এফ ১৬ দেবে ইউক্রেনকে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির জেলেনেস্কি জানিয়েছে এবছরের শেষ থেকেই বেলজিয়ামের যুদ্ধবিমান ইউক্রেনে আসা শুরু করবে। বেলজিয়াম আমেরিকা থেকে এফ ৩৫এ যুদ্ধবিমান কিনছে। যত তাড়াতাড়ি বেলজিয়াম আমেরিকা থেকে এফ ৩৫ পাবে তত তাড়াতাড়ি বেলজিয়াম তাদের এফ ১৬ গুলি ইউক্রেনকে দেবে।
নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্কও আমেরিকা থেকে এফ ৩৫ কিনছে যার জন্য দেশগুলি যথাক্রমে ২২টি, ২৪টি ও ১৯টি এফ ১৬ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে দেবে। যার অর্থ ইউক্রেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৯৫টি এফ ১৬ যুদ্ধবিমান পেতে চলেছে। এই চারটি ইউরোপীয়ান দেশ ইউক্রেনের পাইলটদের প্রশিক্ষন দেওয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনের কারিগরী কর্মীদের যুদ্ধবিমান রক্ষনাবেক্ষনের প্রশিক্ষনও দেবে। আমেরিকা প্রথম ব্যাচে ১২ জন ইউক্রেনীয় পাইলটকে ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষন দেওয়া শুরু করে দিয়েছে, এবছরের শেষে তাদের প্রশিক্ষন সম্পূর্ন হয়ে যাবে। ডেনমার্ক ও রোমানিয়াতেও ইউক্রেনের পাইলটদের প্রশিক্ষন চলছে। গত ১৩ জুন ইতালিতে হওয়া জি ৭ সম্মেলনে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির জেলিনেস্কি ও আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের মধ্যে দশ বছরের নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এছাড়া ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানির সাথেও পনেরোটি নিরাপত্তা চুক্তি করেছে ইউক্রেন।