সরিষা নাকি সয়াবিন! কোন ধরনের তেল খাওয়া উপকারী জানেন?
নিউজ ডেস্ক – বর্তমান যুগে শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন বহু মানুষ। অনেকেই হেলথ কনসিয়াসের জন্য প্রত্যক্ষ খাদ্যতালিকায় তারতম্য ঘটিয়ে থাকেন। কেউ কেউ অল্প পরিমাণে রান্নায় তেল ব্যবহার করে উক্ত কেউ সবসময় হেলদি খাবারের দিকেই বেশি মনোযোগী হয়ে পরে। এমন পরিস্থিতিতে রান্নায় ভোজ্যতেল হিসাবে সরিষার তেল নাকি সয়াবিনের তেল উপকারী তা নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন বহু মানুষ। কিন্তু সকলেই সেই সংশয় দূর করেছেন চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকদের মতে, সরিষার তেলে সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ ৬-১০%, একক-অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ ৬৫-৭২% এবং বহু-অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ ২০-২৬%।
আবার, সয়াবিন তেলে সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ প্রায় ১৫%, একক-অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ ২২-২৩%, বহু-অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ প্রায় ৬৪%। এর মধ্যে লিনোলিক অ্যাসিডের পরিমাণ ৪৩-৫৬%। সেক্ষেত্রে মানবদেহে অল্প হলেও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড জরুরী। সে ক্ষেত্রে ভোজ্যতেলের সয়াবিনের তুলনায় সরিষার তেলেরই উপকারিতা বহুগুণ। শুধুমাত্র অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড নয় সরিষার তেলে রয়েছে আরও বেশ কিছু উপকারিতা। যেমন –
l) ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে – রান্নায় অধিক স্বাদ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সরিষার তেলে রয়েছে কপার, আয়রণ, ম্যাগনেসিয়াম এবং সেলেনিয়াম। এই ভোজ্যতেলে এতগুলি খনিজ পদার্থ থাকার কারণে এগুলি মানবদেহের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ আনতে সাহায্য করে।
ll) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় – সরিষার তেলে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এজেন্ট নামে এক প্রকার উপাদান থাকে। যেটা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হতে সাহায্য করে। এই উপাদানটি কারণে শরীরের ভেতরে কোনো রকম জীবাণু প্রবেশ করতে পারে না। যার ফলে মানুষ দীর্ঘদিন জীবাণুমুক্ত থাকে। এছাড়াও কোলন এবং ইন্টেস্টাইনের কারণে মানুষের শরীরে যাতে কোনো রকমে ইনফেকশন কিংবা রোগজীবাণু জন্ম গ্রহণ না করতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখে সরষের তেল।
lll) ডায়াটারি ফাইবার – সরষের তেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এই ফাইবারের কারণে হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়। এমন কি সহজে পেটের সমস্যা দেখা দেয় না।
lv) মাইগ্রেনের ব্যাথা কমায় – মাইগ্রেনের ওষুধ ব্যথা থেকে উপশম দেয় এই সরষের তেল। কারণ এই তেলে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবেই সরিষার তেলে রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি এই তেলে মাছ ভেজে খেলে শরীরে ওমেগা-থ্রি এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
v) আর্থ্রাইটিসের কষ্ট কমায় – আর্থ্রাইটিসের ব্যথা থেকে উপশম দেয় সরষের তেল। বিশেষ করে তেলে উপস্থিত থাকা সেলেনিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে শুধুমাত্র ব্যথা না শরীরে আর্থ্রাইটিসের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
vi) ক্যান্সারের প্রকোপ কমায় – মানব শরীরের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং দীর্ঘস্থায়ী হোক ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও প্রধান ভূমিকা পালন করে সরষের তেল। এই তেলে থাকা গ্লকোসুনোলেট এবং মিরোসিনেস এই দুটি উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
vii) হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায় – শরীরে দু’ধরনের কোলেস্টেরল থাকে। চিকিৎসকদের ভাষায় একটিকে গুড কোলেস্ট্রল এবং অন্যটিকে ব্যাড কোলেস্ট্রল বলা হয়। কিন্তু সরিষার তেলে থাকা মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট খারাপ কোলেস্টেরল তৈরী হতে বাধা দেয়। যার ফলে হার্টের কোনরকম ক্ষতি হয় না।