হার্টের সমস্যায় ডায়াবেটিস সাইলেন্ট কিলার
কার জীবনে কখন বিপদ ঘনিয়ে আসে সেটা কেউ বলতে পারে না। এই ভয়ংকর বিপদ গুলির মধ্যে একটি গুরুতর রোগ হল হার্ট অ্যাটাক। কখন কোন মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে এবং তার মৃত্যু হবে সেটা কারোরই জানা নয়। যার সম্প্রতি একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ হল জনপ্রিয় সংগীতকার কে.কে-র আচমকা মৃত্যু। সেক্ষেত্রে কিভাবে নিজের রোজনামচার পরিবর্তনের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক রোধ করা যাবে তা বিস্তারিত জানালেন হার্ট স্পেশালিস্ট, ডাক্তার অনিল মিশ্রা(Bm Birla Heart Research Centre- Ck Birla Hospital )।
১) হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার জন্য সর্বপ্রথম ত্যাগ করতে হবে তামাক জাতীয় খাবার এবং ধূমপান। ধূমপান এবং তামাক জাতীয় খাবার সেবন করলে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে এই ধরনের সেবন এড়িয়ে চলাই ভালো।
২) দ্বিতীয় হল ডায়াবেটিস। যাদের শরীরে ১৫০ কিংবা ২৫০-র লেভেলে ডায়াবেটিস রয়েছে তারা বুঝতেও পারবেন না, কারণ ডায়াবেটিসের কোনও সিমটম দেখা যায় না। এক কথায় বলতে গেলে ডায়াবেটিস হল একটি সাইলেন্ট কিলার। হার্ট, ব্রেন এবং চোখের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে এই ডায়াবেটিস। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের প্রতিনিয়ত চেকআপ করা উচিত। ডায়াবেটিস রোগটি হার্টের উপর বেশি প্রভাব ফেলে।
৩) তৃতীয় হলো হাইপারটেনশন বা হাই ব্লাড প্রেসার। হাইপারটেনশন হলো হার্ট অ্যাটাক এবং ব্রেন স্ট্রোকের মূল কারণ। সাধারণত একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রেসার লেভেল হয় ১৪০/৯০। এই লেভেলের নিচে কোন মানুষের প্রেশার থাকলে সেটা সাধারণ। তবে কারোর যদি এই লেভেলের উপরে সংখ্যা চলে গিয়ে থাকে তাহলে তাদের প্রেসার কন্ট্রোল করা অত্যন্ত জরুরি। মূলত হাই প্রেসার ব্যক্তিদের হার্ট ড্যামেজ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
৪) চতুর্থ হলো, কোলেস্ট্রল। কোন মানুষের শরীরে কোলেস্ট্রল বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা যাচাই করার উপযুক্ত পন্থা হলো মাঝেমধ্যে ব্লাড টেস্ট বা রক্ত পরীক্ষা করা। এই ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসবে কোলেস্ট্রলের মাত্রা। এটাও ডায়াবেটিসের মতো একটি সাইলেন্ট কিলার। মানুষের শরীরে দু’ধরনের কোলেস্ট্রল থাকে। একটি হলো গুড কোলেস্ট্রল এবং আরেকটি হলো ব্যাড কোলেস্ট্রল। ব্যাড কলেস্ট্রলের সাধারণ মাত্রা হল ১০০। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং পূর্বে কোনও ধরনের সার্জারি হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কোলেস্ট্রলের মাত্রা রাখতে হবে ৭০। এছাড়াও তাদের হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস এবং হর্ট সার্জারি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পঞ্চাশের কাছাকাছি কোলেস্ট্রল রাখা খুবই ভালো। এবার গুড কোলেস্টেরল বরাবরি ভারতীয়দের ক্ষেত্রে কম লক্ষ্য করা গিয়েছে। কোন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে একটানা স্মোকিং করার পর হঠাৎ ছেড়ে দিলে তার গুড কোলেস্ট্রলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও রোজ এক্সারসাইজ করার সময়ও বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত এক্সারসাইজ করে, গুড কোলেস্ট্রল বৃদ্ধি করিয়ে ব্যাড কোলেস্ট্রেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
৫) পঞ্চম হলো ওবেসিটি। বর্তমানে উন্নত টেকনোলজির প্রজন্মে এক্সারসাইজ বা শরীর পরিচর্যা করার কথা ভুলেই গিয়েছে এক শ্রেণীর মানুষ। সার্ভে করে দেখা দিয়েছে যে প্রায় ২৫০ মিলেনয়র বেশি মানুষ তার রোজগার গাড়ি করে অফিস এবং অফিস থেকে কাজ করে আবার গাড়ি করে বাড়ি এবং বাচ্চারা সকালে স্কুল এবং স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ভিডিও গেম নিয়ে ফোনের মধ্যে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে তারা খেলাধুলা করা প্রায় ভুলেই গেছে। সেক্ষেত্রে শরীরের পরিচর্যা না করলে অর্থাৎ দীর্ঘ সময় ধরে কিংবা খেলাধুলা না করার ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও যেসকল মানুষের শরীরের ওজন খুব বেশি তাদের ক্ষেত্রে এই রোগ প্রযোজ্য। চিকিৎসকদের গননার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যাদের হার্টে সমস্যা আছে তারা প্রতিনিয়ত এক্সারসাইজ করার ফলে সেই হার্ট সমস্যা নিরাময় হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে না বললেই নয় যে, যাদের হার্টে স্টেন রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ব্যায়াম করার পরও কোনও ফল দেবে না সুতরাং তাদের অপারেশন করা বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরী। পঞ্চাশ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগে বুকের বামদিকে তীব্র বেদনা হয় কিন্তু ১৫ শতাংশের ক্ষেত্রে কোন সিমটম ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হয় যেটা মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যাদের ফ্যামিলিতে হার্ট প্রবলেম হয়েছে তাদের বছরে একবার করে চেকআপ করানো উচিত। যাদের পরিবারে হার্টের কোন সমস্যা নেই তাদের ৪০ বছর বয়স পেরোলেই একবার চেকআপ করানো জরুরী।
৬) ষষ্ঠ হলো স্ট্রেস অর্থাৎ অতিরিক্ত চিন্তা। বর্তমান দিনে ইয়ং প্রজন্ম অর্থাৎ ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী সকল নারী-পুরুষদের মধ্যে অতিরিক্ত স্ট্রেসের বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। অত্যাধিক চিন্তার কারণেও মাঝে মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গত দুবছর ধরে যে হারে ব্যায়াম করার প্রবণতা কমেছে এবং স্ট্রেসের প্রবণতা বেড়েছে তাতে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ একাধিক মানুষের মধ্যে পরিলক্ষিত করা যায়।
** হার্ট সুস্থ রাখতে গেলে অতিরিক্ত পরিমাণে সবুজ শাকসবজি এবং ফল খেতে হবে। এছাড়াও আমন্ড বাদাম খাওয়ার পাশাপাশি তামাক ও ধূমপান বর্জন করতে হবে। শুধুমাত্র যে খাওয়া-দাওয়া অতিরিক্ত কমিয়ে দিলেই হার্ট সুস্থ থাকবে সেই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। সবুজ শাক-সবজি খাওয়ার সঙ্গে যথার্থ পরিমাণ ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। তবে যারা প্রতিনিয়ত পেইন কিলার জাতীয় ওষুধ খেয়ে থাকে তাদের ক্ষেত্রে সেই ওষুধ বন্ধ করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত পেইনকিলার খেলে শুধুমাত্র হার্ট নয় শরীরের অন্যান্য অন্ত্র যেমন কিডনি ও লিভারের উপরেও বাজে প্রভাব পরে।