ফুচকা কি আদতে আমাদের শরীরের ক্ষতি করছে?
আট থেকে আশি পছন্দের স্ট্রীট ফুড এর তালিকায় ফুচকা থাকবে না এমন মানুষ সংখ্যা খুবই কম। ফুচকা এমন একটি খাবার যা গ্রাম অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরতলীর অলিতে গলিতে রাজ করে বেড়াই। তবে বর্তমান দিনে মানুষ স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে তাদের খাদ্য তালিকা থেকে অনেক সময় বাদ দিয়ে দেয় তাদের পছন্দের খাদ্যগুলো। আর এই পছন্দের খাদ্যগুলোর মধ্যে বাদ পড়ে যাওয়ার তালিকায় নাম থাকে ফুচকার। কারণ অনেকে মনে করে যে ফুচকা খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। তবে ফুচকা কি আদতে আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক নাকি এর মধ্যে উপকারিতাও আছে? এই প্রশ্নটা বেশিরভাগ মানুষের কাছে করলেই তাদের থেকে উত্তর আসবে ক্ষতিকারক। তবে এই ধারণাটি ভুল কারণ ফুচকার মধ্যে এমন কিছু গুন আছে যা আমাদের শরীর পক্ষে ক্ষতির বদলে উপকার করে।
যেমন- বর্তমান দিনে অনিয়মিত জীবনযাপন যেমন খাবার এড়িয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত খাওয়া, মাঝরাতে খাবার খাওয়া, মোটা হওয়া ইত্যাদি কারণে কম বেশি বেশিরভাগ মানুষই হজমের সমস্যা ভুগে থাকে। যার ফলে কোনও কিছু খেলেই ঘনঘন অম্বল হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে ফুচকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুচতার জলে যে মশলাগুলি থাকে তার মধ্যে থাকে জিরেও। যা অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। এছাড়াও থাকে তেঁতুল, ধনেপাতা, বিট নুন, ধনেগুঁড়ো, লঙ্কা আর লেবু। এই সমস্ত উপকরণগুলি আপনার শরীরের হজমক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। গ্রীষ্ম হোক বা শীত, এক প্লেট টক জল সমেত ফুচকা আপনার মেজাজ ঠিক রাখতে সাহায্য করতে পারে।
এই স্ন্যাকটি স্বাদের পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও খুবই উপকারী, কারণ এটি আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করার সহজতম উপায়ে। ফুচকাতে আয়রন থাকে, যা গোটা বিশ্বে অধিকাংশ মহিলার অভাব পাওয়া যায়। এই উপাদানটি আমাদের রক্তকে অক্সিজেনযুক্ত রাখতে সহায়তা করে, তাই এটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এছাড়াও ফুচকার মধ্যে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, ফোলেট, জিংক এবং ভিটামিন এ, বি -6, বি -12, সি এবং ভিটামিন ডি ইত্যাদি উপাদান যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
বর্তমানদিনে ওজন কমানোর জন্য মানুষ কি না করে থাকে। এই ওজন কমানোর জন্য অনেকে ফুচকা খাওয়া থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখে। তবে এটি ভুল করছেন কারন ফুচকা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সহায়তা করে। একটি ফুচকায় কম-বেশি ৩৬ ক্যালোরি থাকে। ফুল প্লেট ফুচকা থেকে আনুমানিক ২১৬ ক্যালোরি থাকে। যাঁদের শরীরে একটু ভারির দিকে তাঁরা স্ন্যাক্স হিসাবে ফুচকা বাড়িতে তৈরি করে খেতে পারেন। টক জল সহকারে ফুচকা খেলে পরের কয়েক ঘণ্টা আর খিদে পায় না। যার ফলে খিদে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফুচকা আমাদের সাহায্য করতে পারে। তাই ফুচকা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। তবে এই ব্যাপারে দুটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। এক হল ফুচকা যেন বাড়িতে তৈরি করা হয়। আরেকটি হল, কোনওভাবেই নিয়মিত শরীর চর্চা, হাঁটা, দৌড় বন্ধ করা যাবে না।
ঘন-ঘন সর্দি-কাশি, জ্বরে ভুগে থাকলে, তাঁদের পক্ষে এই ফুচকা খুবই উপকারী । এছাড়াও ফুচকার মধ্যে থাকা উপাদান ব্যাক্টিরিয়াজনিত সমস্যার হাত থেকেও রক্ষা করতে সাহায্য করে।
তবে অতিরিক্ত কোনো কিছুই করা উচিত নয় এতে ভালো পরিবর্তে খারাপ হয়ে যেতে পারে। যেমন – বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুচকার মধ্যে আলু দিয়ে পুর তৈরি করা হয়। আর আলু যে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, এই বিষয়টা সবারই জানা। এই জন্য ডায়াবিটিস রোগীদের পক্ষে অবশ্যই ভেবে চিন্তে ফুচকা খাওয়া উচিত। তা নাহলে ফুচকা খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা হু হু করে বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমান দিনে কম বেশি বেশিরভাগ মানুষই প্রেশারের সমস্যা ভোগে। বিশেষজ্ঞরা আর এই অসুখকেই নীরব ঘাতক বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন। কারণ প্রেশার নিয়ন্ত্রিত না থাকলে একাধিক অসুখ যেমন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এই কারণে বিশেষজ্ঞরা সর্বদা উচ্চ রক্তচাপের মতো ঘাতক অসুখকে নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের পক্ষে ফুচকা খাওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখা উচিত কারণ ফুচকা প্রেশার বৃদ্ধি করতে পারে। আসলে ফুচকায় মেশানো থাকে অনেকটা পরিমাণে নুন। আর এই উপাদানটি প্রেশার বৃদ্ধি করার কাজে সিদ্ধহস্ত। তাই প্রেশার রোগীদের ফুচকা খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
ফুচকার স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য এর মধ্যে নানা ধরনের মশলা মেশানো হয়। তবে এইসব জিভে জল আনা মশলাই কিন্তু আবার কোলোনের ক্ষতি করে। গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে এইসব মশলা নিয়মিত খেলে কোলোনে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কয়েকগুণ পর্যন্ত কমতে পারে। যার ফলে একাধিক পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
যাদের ওবেসিটির সমস্যা আছে তাদের ফুচকাকে এড়িয়ে চলায় ভালো কারণ ফুচকা একটি হাই ক্যালোরি ফুড। এতে থাকে সিম্পল কার্ব থেকে শুরু করে হাই ফ্যাট। যা ওজনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
ভালো হোক বা খারাপ জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় একটা জায়গা গড়ে তুলেছে এই স্ট্রীট ফুডটি। যা এবার রাজ করতে চলেছে বিনোদন জগতেও। কি ভাবছেন বিনোদন জগতের সাথে আবার ফুচকার কি সম্পর্ক। 31 জানুয়ারি ফাউ the fuchka song অ্যালবাম থেকে
লগ্নজিতা চক্রবর্তী এবং সমীধ মুখার্জির গাওয়া “ফুচকা” গানটি রিলিজ করেছে। Udita performing arts r প্রযোজনা এবং গানটির মিউসিক দিয়েছে দীপজ্যোতি দে।
Youtube Embed Link 1