অফবিট

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ ও অশ্বত্থামা

অশ্বত্থামা মহাভারতের মুখ্য চরিত্র না হলেও তার গুরুত্ব কম ছিল না মহাভারতের যুদ্ধে। তিনি বেশ কিছু অস্ত্রবিদ্যায় অত্যন্ত পারদর্শীয় থাকার পাশাপাশি একজন বীর যোদ্ধা ছিলেন। কার কাছে থেকে যুদ্ধ বিদ্যা প্রাপ্তি করেছিলেন অশ্বত্থামা? শেষ পর্যন্ত তার সাথে কি ঘটেছিল? 

জন্ম :

গুরু দ্রোন এবং দ্রোণ শরদ্বানের কন্যা তথা কৃপাচার্য এর ভগিনী কৃপীর পুত্র ছিলেন অশ্বত্থামা । জন্মের সময় অশ্বের মত শব্দ করার কারনে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল অশ্বত্থামা।

যুদ্ধশিক্ষা :

অশ্বত্থামাকে যুদ্ধ শিক্ষা দিতেন তার পিতা গুরু দ্রোণ। গুরু দ্রোণ ছিলেন একজন ব্রাক্ষ্মণ তবে তিনি ক্ষত্রিয়ের মতোই পারদর্শী ছিলেন যুদ্ধবিদ্যায়। গুরু দ্রোণকে যুদ্ধশিক্ষা শিখিয়েছিলেন তার পিতা ভরদ্দাজ মুণি। তার পিতার থেকে লাভ করা শিক্ষাই তিনি তার ছাত্রদের শেখাতেন। একবার গুরু দ্রোণ তার বাল্যকালের মিত্র রাজা দ্রুপদের কাছে যান এবং সেই সময় তাঁকে রাজা দ্রুপদ অপমান করেন। সেই প্রতিশোধ নিতে তিনি হস্তিনাপুরে যান তার যোগ্য শিষ্য খুঁজতে। এরপর কৌরব এবং পাণ্ডব কুমাররা গুরু দ্রোণের কাছ থেকে যুদ্ধে শিক্ষা গ্রহন করতে আসেন। সেই সময় তাঁদের সাথে গুরু দ্রোণ তার একমাত্র ছেলে অশ্বত্থামাকেও যুদ্ধ শিক্ষা দিতেন। অর্জুন ধনুর্বিদ্যাতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করছে দেখতে পেয়ে গুরু দ্রোন তার পুত্র অশ্বত্থামাকে সেরা ধনুর্বি‌দ হবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। অশ্বত্থামা তার পিতার কাছ থেকে বহু গুপ্ত অস্ত্র প্রয়োগের কৌশল শিখেছিলেন।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ ও অশ্বত্থামা :

কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে অশ্বত্থামার বিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি এই যুদ্ধে কৌরবদের পক্ষ থেকে লড়াই করেছিলেন। শুধু তিনি নয় তার প্রতি স্নেহের কারণে তার পিতা গুরু দ্রোণাচার্যও এই যুদ্ধে কৌরবদের পক্ষ থেকে লড়াই করেছিলেন। অশ্বত্থামা পাণ্ডবদের বহু সেনা হত্যা করেছিলেন। অশ্বত্থামাকে হত্যা করা  প্রায় অসমম্ভ হয়ে পড়েছিল। অন্যদিকে দ্রোণাচার্য কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল, যার কারনে তাঁকে হত্যা করা একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল। দ্রোণাচার্যকে বধ করতে শ্রীকৃষ্ণ পরামর্শ দেন যে  কোন ভাবে অশ্বত্থামার মৃত্যুর খবর গুরু দ্রোণের কানে পোঁছাতে হবে তাহলেই ধৃষ্টদ্যুম্নের দ্বারা তাঁকে হত্যা করা সম্ভব হবে। শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ অনুযায়ী যুধিষ্ঠিরকে সাথে নিয়ে ভীম বনের এক হাতিকে হত্যা করেন। সেখানে যুধিষ্ঠির উপস্থিত ছিলেন কারন গুরু দ্রোণ একমাত্র যুধিষ্ঠিরের কথাকে বিশ্বাস করবেন। এরপর  যুধিষ্ঠির গুরু দ্রোণের উদ্দেশ্যে ‘অশ্বত্থামা হতঃ- ইতি গজ’ (অশ্বত্থামানামক হাতী নিহত হয়েছে) বাক্য উচ্চারণ করেন। যুধিষ্ঠিরের মুখ থেকে এই বাক্য শোনার পর দ্রোণচার্য মনে করেন যে তাঁর পুত্র অশ্বত্থামার মৃত্যু হয়েছে। এরপরই অস্ত্র ত্যাগ করেন দ্রোণাচার্য এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁকে হত্যা করেন। পিতাকে হত্যা করার জন্য অশ্বত্থামা খুব ক্রোধিত হয়ে যায় পাণ্ডবদের উপর।

শেষ জীবনে অশ্বত্থামা :

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কর্ণের মৃত্যুর পর দুর্যোধন সেনাপতি পদে অশ্বত্থামাকে নিযুক্ত করেন। দুর্যোধন তার সব ভাইদের হারিয়ে নিজের ক্ষমতা হারিয়ে মৃত্যুর দোরগোড়ায় এসে দাড়িয়ে ছিলেন, সেই সময় অশ্বত্থামা দুর্যোধনকে বলেন যে কি করলে দুর্যোধন খুশিতে মৃত্যু বরণ করতে পারবেন। তখন  দুর্যোধন তাকে উত্তরে বলেন যে পাণ্ডবদের বংশকে তিনি নিঃচিহ্ন করে দেখতে চান। তার মিত্রের কথা রাখতে অশ্বত্থামা পাণ্ডবদের শিবিরে যান। তার সাথে ছিলেন কৌরবপক্ষী কৃপাচার্য এবং কৃতবর্মা। তিনি ঘুমন্ত অবস্থায় পাণ্ডবদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেন। এই নীচ কাজে কৃপ আর কৃত আপত্তি করলেও কোন কথা শোনেন নি অশ্বত্থামা। এরপর তারা পাণ্ডবদের শিবিরে যান এবং ধৃষ্টদ্যুম্নকে শিবিরে দেখা মাত্র হত্যা করেন। তারপর অশ্বত্থামা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্র, শিখণ্ডী এবং অন্যান্য পাণ্ডব বীরদের হত্যা করেন। ওই সময় পঞ্চপাণ্ডবরা কৃষ্ণ গঙ্গাতীরে অবস্থান করছিলেন। অশ্বত্থামা এই হত্যালীলা শেষ করার পর সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পুত্রদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে অশ্বত্থামাকে হত্যা করতে যায় পঞ্চপাণ্ডব। তাঁদেরকে দেখার পর যখন অশ্বত্থামা জানতে পারে যে উত্তরার গর্ভে পাণ্ডবদের বংশধর রয়েছে সেই সময়  উত্তরার গর্ভে পাণ্ডবদের বংশধরকে হত্যা করার জন্য শক্তিশালী ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রয়োগ করে। তখন ব্রহ্মশির অস্ত্রকে প্রতিরোধ করতে অর্জুনও ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রয়োগ করে। এরপর ব্যসদেবের মধ্যস্থতায় বিপর্যয় নিবৃত্ত হলেও উত্তরার গর্ভে থাকা সন্তানকে আঘাত করে এই অস্ত্র।

অশ্বত্থামার শাস্তি :

অশ্বত্থামার এই পাপের শাস্তি দিতে শ্রীকৃষ্ণ তার কাছ থেকে তার মাথার মনিটি কেড়ে নিয়েছিলেন। এই মনিটি ছিল তার বীরত্ব ও গৌরবের প্রতীক। শ্রীকৃষ্ণ অশ্বত্থামাকে অভিশাপ দেন যে তার মৃত্যু হবে না, সে চাইলেও মৃত্যুবরণ কোনদিন করতে পারবেন না, আজীবন অমর হয়ে বেঁচে থাকবেন পৃথিবীর কোলে। এই ঘটনার পর আর কোথাও পাওয়া যায়নি অশ্বত্থামাকে। তবে মনে করা হয় যে এখনও বেঁচে আছেন অশ্বত্থামা।

মহাভারতের একাধিক বিষয় নিয়ে বহু মতামত প্রচলন রয়েছে। একাধিক তথ্য ভিত্তিক লেখা, এই নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *