কেন ঋষি দুর্বাসা মুনির প্রাণ সংশয় দেখা গেছিল? কিভাবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেলেন তিনি?
নিউজ ডেস্কঃ ঋষি দুর্বাসা নাম আমরা সবাই শুনেছি। যার ক্রোধ ছিল খুবই ভয়ানক। তার এই ক্রোধের কারণে বহু মানুষ অভিশাপগ্রস্ত হয়েছে। ঋষি দুর্বাসা মুনির ক্রোধ যে শুধুমাত্র অন্যদের উপরই অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তা নয় তার নিজের ওপরেও তারই ক্রোধ এক ভয়ানক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল যার ফলে তার প্রাণনাশ নিশ্চিত ছিল। কি এমন ঘটেছিল যার জন্য ঋষি দুর্বাসা মুনির প্রাণ সংশয় দেখা দিয়েছিল। কিভাবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেলেন তিনি?
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, অম্বরিশ নামক এক রাজা ছিলেন। তার রাজ্যে সমস্ত প্রজা এবং সাধারন ব্যক্তি খুব শান্তিতে বসবাস করতেন। তারা সবাই মোহ মায়া থেকে মুক্ত হয়ে বেশিরভাগ সময় ঈশ্বরের আরাধনা ব্যস্ত থাকতেন। রাজা অম্বরিশ ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত। ভগবান বিষ্ণুর নাম স্মরণ করেই তিনি তার প্রজাদের সেবা করতেন এবং স্বয়ং ভগবান ভক্তরূপে সরল জীবনযাপন করতেন। তিনি দান ধ্যান এবং পরোপকারিতা করতেন এবং মনে করতেন যে এই সংসারিক সুখ একদিন নষ্ট হয়ে যাবে কিন্তু ভগবানের ভক্তি তার সাথে সব জায়গায় থাকবে। রাজা অম্বরিশের এমন নিঃস্বার্থ ভক্তিতেই প্রসন্ন হয়ে ভগবান বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র রাজার রক্ষার জন্য নিযুক্ত করে দেন। একবার রাজা অম্বরিশ এক বছর পর্যন্ত দ্বাদশীর ব্রত রাখার কথা ভাবেন। এই সময়ে তিনি ব্রাহ্মণদের ভোজন করার জন্য আমন্ত্রণ করতেন তথা দানও করতেন। এর পাশাপাশি অন্ন জল গ্রহণ করে পালন করতেন। একবার তিনি বছরে অন্তিম দ্বাদশীতে সমাপ্তিতে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করে।
মহাভিষেকের বিধি মেনে সব প্রকার রাজ্য সম্পত্তি দিয়ে ভগবানের অভিষেক করেন তথা ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের ভোজন করান। খুব দান করেন তিনি ওই সময়। এর পর ব্রাহ্মণদের আজ্ঞা পেয়ে যখন রাজা অম্বিরিশ ব্রতের সমাপ্তিতে যোগ্য করতে বসলেন, তখন হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হন মহর্ষি দুর্বাসা। অম্বরিশ ঋষি দুর্বাসাকে দেখে তাকে আপ্পায়ন করেন এবং তাকে ভোজন করার অনুরোধ করেন। রাজার এই অনুরোধ দুর্বাসা মুনি গ্রহণ করলেন এবং তিনি রাজাকে বললেন যে তিনি নদীতে স্নান করে এসে ভোজন করবেন। ঋষি দুর্বাসা স্নান করতে গিয়ে ধ্যানে এতটাই মগ্ন হয়ে গেলেন যে তিনি ভুলে যান যে রাজা তাকে ভোজন করিয়ে নিজের ব্রত ভাঙবেন। এরপর অনেক সময় কেটে যায় তখনও পর্যন্ত সেখানে আসেন না দুর্বাসা এদিকে দ্বাদশীর শেষ হতে চলেছে। দ্বাদশী থাকতে থাকতে অন্ন গ্রহণ না করলে ব্রত ভঙ্গ হত।এদিকে আবার রাজা ঋষি দুর্বাসাকে ভোজন না করিয়ে অন্ন গ্রহণ করতে পারছিলেন না।এরফলে তিনি খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন। তখন ওখানে উপস্থিত ব্রাহ্মনরা তাকে পরামর্শ দিলেন যে তিনি জল পান করে তার ব্রতের নিয়ম রক্ষা করুক।এতে ঋষি দুর্বাসা আগে ভোজন করার জন্য কোনো পাপ হবে এবং তার ব্রতও ভঙ্গ হবে না। যেহেতু ঋষি দুর্বাসা তখন আসে পৌঁছান না এবং দ্বাদশী আর কিছু সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে তাই ব্রাহ্মনদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম রক্ষা করার জন্য তিনি অন্নে বদল জল পান করেন।তিনি যখন জল পান করছিলেন তখনই আসে উপস্থিত হন দুর্বাসা।তিনি দেখেন যে রাজা অম্বরিশ তাকে ভোজন না করিয়েই জল পান করে ব্রতের ভঙ্গ করেছে।এতে রাজা অম্বরিশর উপর খুবই ক্রধিত হয়ে যান ঋষি দুর্বাসা।ক্রধের বশে তিনি তার জটা থেকে একটি চুল ছিড়ে প্রাসাদের মেঝেতে ফেলতেই ওখান থেকে জন্ম হয় কৃত্যা নামক এক রাক্ষসি। ওই রাক্ষসীকে ঋষি দুর্বাসা আদেশ দেয় রাজা অম্বরিশকে হত্যা করার।এরপর যখন ওই রাক্ষসী রাজা অম্বরিশকে হত্যা করতে আসে তখন ভক্তকে রক্ষার জন্য নিযুক্ত সুদর্শন চক্র সেখানে প্রকট হয় এবং রাজা অম্বরিশকে রক্ষা করার জন্য কৃত্যা রাক্ষসীকে বধ করে সুদর্শন চক্র।
এরপর ভগবানের সুদর্শন চক্র ঋষি দুর্বাসা দিকে ধেয়ে আসে ঋষি দুর্বাসা এই দেখে খুব ভয় পেয়ে তিনি ছুটতে লাগেন। কিন্তু চক্র তার পেছনেই আসতে লাগল।চক্র থেকে বাঁচার জন্য তিনি পালাছিলেন।তবে যেখানে তিনি যাচ্ছিলেন চক্র সেখানেই প্রকট হচ্ছিল।এইভাবে তিনি চক্র থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্রহ্মালোকে ব্রহ্মার কাছে যান এবং চক্র থেকে বাঁচার জন্য সাহায্য চান ব্রহ্মার কাছ।কিন্তু ব্রহ্মাদেব তাকে এর রক্ষা করতে পারবে না জানায় এবং বলে তাকে মহাদেবের কাছে যেতে।এরপর দুর্বাসা ভগবান শিবের কাছে যান সুদর্শন চক্রের থেকে নিজের প্রান রক্ষা করার জন্য।কিন্তু মহাদেবও তাকে এর থেকে রক্ষা করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেন এবং তাকে বলেন যে এই চক্র ভগবান বিষ্ণু তাই তিনি চাইলেই তাকে এই চক্রের হাত থেকে বাঁচাতে পারবেন।শেষে ভগবান বিষ্ণুর কাছে যান।চক্রটিও সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়।ঋষি তার প্রাণ ভিক্ষা চায় ভগবান বিষ্ণুর কাছে।তখন ভগবান বিষ্ণু দুর্বাসাকে বলে যে “ এই চক্র রাজা অম্বরিশের প্রান রক্ষা করার জন্য নিযুক্ত ছিল তাই তাঁকে এই চক্র থেকে যদি কেউ বাঁচাতে পারে তাহলে সেটা রাজা অম্বরিশই পারবেন”।এই শুনে ঋষি অম্বরিশের কাছে যান। অম্বরিশ তখনও অন্ন গ্রহণ না করে প্রতীক্ষা করছিলেন দুর্বাসার। দুর্বাসাকে দেখে তিনি তাকে বলেন যে সে এখনও অন্ন গ্রহণ না করে আছে।তখন দুর্বাসা অম্বরিশকে ওই চক্রের হাত তাকে থেকে রক্ষা করতে বললেন।রাজা অম্বরিশ দুর্বাসার কাছে ক্ষমা চান এবং বলেন যে তিনি তাকে ক্ষমা করলে ভগবান
বিষ্ণুর ওই চক্রটিও ক্ষমা করে দেবে তাকে।দুর্বাসা অম্বরিশকে ক্ষমা করতেই অদৃশ্য হয়ে যায় চক্রটি।এইভাবে ঋষি দুর্বাসার প্রাণ রক্ষা হয়।