অফবিট

শয়তানের কাছে নিজের আত্মাকে বিক্রি করেছিলেন যে ব্যাক্তি

কোন শয়তানের কাছে নিজের আত্মা বিক্রি করার ঘটনা খুবই বিরল। বাস্তবে এরকম কোন ঘটনা ঘটানো খুবই অবাস্তবকর বিষয়। কিন্তু একজন ডাক্তার সত্যিই ছিলেন যিনি নিজের আত্মা শয়তানকে বিক্রি করেছিলেন। আপনারা সকলে ঠিকই পড়ছেন। কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে কিছু পার্থক্য। এটা কোন বাস্তব ঘটনা নয় বরঞ্চ নাট্যমঞ্চের একটি অংশ। এই নাটকের প্রধান চরিত্রে যিনি রয়েছেন তার নাম ডক্টর ফস্টাস। 

১৫৮৭ সালে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে প্রকাশিত হওয়া Historia Von D. Jonan Fausten লেখকের রচয়িত ক্রিস্টোফার মার্লোর বিখ্যাত নাটকটি করেছিলেন ইংরেজ নাট্যকার ডক্টর ফস্টাস।

গল্পের সারাংশ হিসেবে বলা যায় নাট্যকার তথা গল্পের প্রধান চরিত্র ডক্টর ফস্টাস নিজেকে এতটাই শক্তিশালী করে তুলতে চেয়েছিলেন যে ১৫১০ থেকে ১৫৪০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি যাদু বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন এবং নিজেকে শক্তিশালী করে তুলতে শয়তানের কাছে নিজের আত্মাকে পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে তার শেষ পরিণতি হয়েছিল মৃত্যু। তাহলে এক নজর দেখে নেওয়া যাক এই নাটকের মধ্যে ঠিক কি কি ঘটনা ঘটেছিল। 

জার্মানির রোডস নামক একটি ছোট্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ফস্টাস। তার পরিবার উচ্চ বংশীয় না হলেও মধ্যবিত্ত ছিল। রোডস শহরেই ফস্টাস তার শৈশব এবং কৌশর জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি যখন যৌবনে পদার্পণ করেন তখন নিজের পরিবারকে ছেড়ে জামানির উইটেনবার্গ শহরে চলে এসেছিলেন বসবাস করতে। সেই সময় তার আর্থিক ভরণ পোষণ এবং দেখাশোনা করতেন তার নিকট আত্মীয়রা। তবে একটা গুণ বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় ছিল যে খুব অল্প বয়সেই ফস্টাস যুক্তিবিদ্যা, আইনশাস্ত্র, চিকিৎসা ও ধর্ম শাস্ত্রের ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। ধর্ম শাস্ত্র ও ঈশ্বর বিষয়ক তর্ক বিতর্ক করতে ফস্টার ভালবাসতেন। কিন্তু ধর্ম ও সামাজ বিষয়ক অধিক জ্ঞান অর্জনের পরেও তিনি কোন গ্রন্থে তৃপ্তি খুঁজে পাননি। ফস্টাসের বরাবরই ইচ্ছে ছিল যে তিনি এমন কোন শক্তি অর্জন করবেন যার মাধ্যমে পৃথিবীর দুই মেরুর সর্ব শক্তি তার আয়ত্তে থাকবে। সে কারণেই ফস্টাস ডাকিনী বিদ্যা ও যাদু বিদ্যা চর্চা শুরু করেছিলেন। কারণ তিনি মনে করতেন এই স্বর্গ সুখের থেকে ইন্দ্রজাল চর্চা বেশি শ্রেয়। তাই তিনি নিজের সর্বশক্তি দিয়ে মনোবাসনা পূরণ করতে ডাকিনি বিদ্যা ও যাদুবিদ্যা চর্চা করে শয়তান লুসিফারের কাছে নিজের আত্মা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। নিজের আত্মা বিক্রি করার মাধ্যমে শয়তান লুসিফারের কাছ থেকে ২৪ বছরের জন্য মানবীয় ক্ষমতা অর্জন করে নিয়েছিলেন ফস্টাস।  অথচ এই টানা ২৪ বছর নিজের ক্ষমতা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয় করেননি তিনি। সকল অযথা ও অবাস্তব কাজে এই ক্ষমতা ব্যয় করেছিলেন বলেই জানা যায়।

যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে – যাদু বিদ্যার মাধ্যমে ডিউক অব ভ্যানহোল্ডের দরবারে ডিউকে জাদুর মাধ্যমে আঙ্গুর ফল খাওয়ানো, পণ্ডিতদের সামনে যাদুবিদ্যা প্রদর্শন করে ট্রয়ের হেলেনকে উপস্থাপন করা এবং নিজের প্রিয়সি হিসেবে কাছে পেতে যাওয়া কামনা-বাসনা জাগানো এছাড়াও ব্যবসায়ীর কাছে ঘোড়া বিক্রির নামে প্রতারণা করে খড় বিক্রি করা, অদৃশ্য হয়ে পোপের ভোজন সভায় সকলের সামনে মশকরা করা, জার্মান সম্রাটের সামনে আলেকজান্ডার ও তার কোনইরূপে দুই প্রকার তাকে হাজির করা ও সম্রাটের নাইটের মাথায় সিং গজিয়ে তোলা সহ ইত্যাদি কাজ।

লোকের সঙ্গে মশকরা ও সামান্য তুচ্ছ কাজ করতে করতে কবে যে ২৪ বছর পার হয়ে গিয়েছিল সেটা অনুমান করতে পারেননি ফস্টাস। এরপরই লুসিফারের দেওয়া এই 24 বছরের সময় যখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল তখন নিজের জীবনের শেষ কটা দিন অস্থিরতা এবং মানসিক অবসাদের মধ্যে দিয়ে কেটেছিল ফস্টাসের। এরপরই এসেছিল সেই দিনটা যেদিন পূর্ণ হয়েছিল ২৪ টা বছর। ২৪ বছরের অন্তিম দিনে যখন রাত প্রায় বারোটা বাজে তখন ঝড় বৃষ্টি এবং বজ্রপাতে প্রলয় ঘটছিল বাইরের দুনিয়ায়। অথচ ফস্টাসের ঘরের ভেতরে লুসিফার ও তার অনুসারীরা তাকে টেনে-হিচড়ে নড়কে নিয়ে যায়। পরবর্তী যখন ফস্টাসের বন্ধুরা পরের দিন তার বাড়িতে আসে তখন তারা দেখতে পেয়েছিলেন যে ফস্টাসের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সারা ঘরে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় ছড়িয়ে রয়েছে।

একাধিক বিশেষজ্ঞের মতে লুসিফারের এই বিষয় নিয়ে প্রচুর মতামত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *