অফবিট

বিল গেটস বা  মার্ক জুকারবার্গের মতো কলেজ ড্রপআউটেদের অনুপ্রেরক কে?

আমাদের মতো তরুন প্রজন্মের অনেকেই বিলগেটস, জুকারবার্গ, স্টিভ জোভস এদেরকে নিজেদের  অনুপ্রেরণা বলে মনে করি। এটা ঠিক যে এদের আবিষ্কার আমাদের অনেক এগিয়ে দিয়েছে। কলেজ ড্রপ আউট হয়ে স্রোতের বিপরীতে হেটে এরা সাফল্যের শিখরে উঠেছে। কিন্তু জানলে অবাক হবেন এই পৃথিবী বিখ্যাত মানুষ গুলোরও একজন  অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো ছিল। আসুন আজকে সেই মানুষ  টার কথা জানা যাক।

তিনি হলেন এডউইন ল্যান্ড। যিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯০৯ সালের আমেরিকার ব্রিজপোর্টে। ১৯২৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভর্তি হওয়ার মাত্র দু বছরের মাথায় কলেজ ছেড়ে দিয়ে নিজের   আবিষ্কার নিয়ে কাজ শুরু করেন, এবং আলোর মেরুকরণের উপর প্রথম সস্তা ফিল্টার আবিষ্কার করেন। যার নাম দেন পলারোয়েড ফিল্ম। 

১৯৩২ সালে  পোলারাইজিং প্রযুক্তির বাণিজ্য করণের জন্য হার্ভার্ড  বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জর্জ হুইলরাইটের সাথে ল্যান্ডহুইল রাইট ল্যাবরেটরীজ প্রতিষ্ঠা করেন। হুইলরাইট এই ল্যাবরেটরি বানাতে অনেক মোটা অর্থ বিনিয়োগ করেন।

সানগ্লাস ও ফটোগ্রাফিক ফিল্টার গুলোর জন্য পোলারাইজিং ফিল্টার তৈরিতে তিনি সফলতা অর্জন করেন। এরপর নিজের কোম্পানিকে সম্প্রসারণের জন্য ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারিদের থেকে ভালো টাকার ইনভেস্টমেন্ট পান। এরপরে  ১৯৩৭ সালে তিনি তার কোম্পানির নামকরণ করেন পলারোয়েড কর্পোরেশান। এই পোলারয়েড ট্রেড মার্কের অধীনে ল্যান্ড আরও উন্নত পোলারাইজড শিট তৈরী করে।

এছাড়াও  দ্বিতীয়  বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক ক্ষেত্রে অনেক  আবিষ্কার  করেছিলেন।  যেমন- অন্ধকার-অভিযোজন গগলস, টার্গেট ফাইন্ডার, প্রথম প্যাসিভলি গাইডেড স্মার্ট বোমা ইত্যাদি। এছাড়াও চেক উদ্বাস্তু জোসেফ মাইলআর সাথে স্টেরিওস্কোপিক ভিউয়িং সিস্টেম যেটার নাম দেওয়া হয়েছিল ভেক্টর সেট ইনভেন্ট করেন।

কি ভাবে আবিষ্কার হল পোলারয়েড ক্যামেরা?

কথায় বলে পৃথিবীর সব বিখ্যাত আবিষ্কার এসেছে কোনো না কোনো সমস্যা থাকে। ঠিক সেই ভাবেই নিজের ফ্যামিলির সাথে নিউ মেক্সিকো সান্তাফেতে ঘুরতে গিয়ে তিনি তার তিন বছরের মেয়ের একটা ছবি তোলেন। ছবি তোলার পর তার মেয়ে যখন তার বাবার কাছে সেই তোলা ছবি দেখতে চায় । সেই সময় এই কাজটা অসম্ভব ছিল , কারণ সেই সময় ছবি তুলে তা ডেভেলপ করে দেখতে হতো এবং সেটা করতে প্রায় তিন থেকে চার দিন সময় লাগত। তাই সেই সময়  এডউইন ল্যান্ড সিদ্ধান্ত নেন এমন একটা ফিল্ম ক্যামেরা বানানোর যেখানে সাথে সাথে ছবি দেখা যাবে। পেটেন্ট অ্যাটর্নি আর ডোনাল্ড ব্রাউন সেই সময় উপস্থিত ছিলেন সান্তাফিতে। তাই আর দেরি না করে এডউইন ল্যান্ড সাথে সাথে তার আইডিয়া শেয়ার করেন ডোনাল্ড ব্রাউনকে। সাথে সাথে তার আইডিয়া তে শিল মোহর দেন তিনি।

এরপরে তিনি ছুটি কাটিয়ে নিজের কাজের জায়গায় ফিরে পোলারয়েড ক্যামেরা নিয়ে কাজ শুরু করেন। ঠিক তিন বছর পরে ১৯৪৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ল্যান্ড আমেরিকার অপটিক্যাল সোসাইটির কাছে একটি ক্যামেরা ও ফিল্ম প্রদর্শন করেন। যেটাকে সেই সময় নাম দেওয়া হয়েছিল ল্যান্ড ক্যামেরা। যদিও এটা বাণিজ্যিকভাবে বাজারে এসেছিল  ১৯৪৯ সাল নাগাদ। প্রথমে এই ক্যামেরার মাত্র ষাটটা ইউনিট তৈরি করে রাখা হয়েছিল বোস্টনের জর্ডান মার্শ ডিপার্টমেন্ট স্টোরে। পোলারয়েড বিপননকারীরা প্রথম ইউনিটর বিক্রি কেমন হবে সেটা নিয়ে  খুব চিন্তিত ছিল। কিন্তু লঞ্চ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব কয়টি ক্যামেরা বিক্রি হয়ে যায়।

তার  কোম্পানি পোলারয়েডে থাকাকালীন ল্যান্ড তার ম্যারাথন গবেষণার জন্য বেশ বিখ্যাত ছিলেন। তার মাথায় যখন নতুন কোনো আইডিয়া আসতো তখন একেবারে তিনি সেটার ব্রেইন স্ট্রম করে ছাড়তেন। আপনি জানলে অবাক হবেন পোলারাইজিং ফিল্মের বাণিজ্যিক প্রযোজনার সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি টানা ১৬ দিন একই পোশাক পড়ে কাজ করে গেছিলেন। পোলারয়েড কোম্পানির বৃদ্ধির সাথে সাথে ল্যান্ড তার শিফটে কাজ করার জন্য একটা সরকারি দল রেখেছিলেন একটা দল তার শিফটের কাজ শেষ করা হয়ে গেলেই সাথে সাথে পরবর্তী দল এসে সেই কাজ ধরতো। তিনি এতটাই দ্রুত কাজ করতে পছন্দ করতেন।

তার সংস্থার একজন কর্মী তার সম্মন্ধে বলেছিলেন যে ল্যান্ড সত্যিকারের স্বপ্নদর্শী ছিলেন। তিনি জিনিস গুলি কে অন্য মানুষদের থেকে একদম আলাদা করে দেখতেন। যেটা তাকে অন্যদের থেকে একদম আলাদা করে। যিনি ভীষণ ভাবে অন্যদের সাথে কাজ করাটা উপভোগ করতেন। এছাড়াও  ১৯৫০ এর দশকে ল্যান্ড এবং তাঁর দল লক ইউ টু স্পাই প্লেনের অপ্টিক ডিজাইন তৈরি করতে সাহায্য করেছিল। তিনি কেলি জনসনকে বিমানের ডিজাইন তৈরী করতে সাহায্য করেন। যে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ছেড়ে তিনি চলে গেছিলেন ১৯৫৭ সালে সেই ইউনিভার্সিটি তাকে ডক্টরেট উপাধি প্রদান করে। মাসাচুস্টের একটি রাস্তার নাম তার নামে রাখা হয়।

তার তাৎক্ষণিক ক্যামেরার অসাধারন সাফল্য সত্যেও ল্যান্ডের পোলাভিষন তাতৎক্ষনিত মুভি সিস্টেম একটা বিপর্যয় ছিল। এরপর  ১৯৮২ সালের ২৭  জুলাই পোলারয়েডের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। যখন তিনি অবসর নেন তখন তার নামে ৫৩৫ টা পেটেন্ট ছিল। যা থমাস এডিশন ও এলিহু থমসনের থেকে বেশি। এরপরে  ১৯৯১ সালের ১ লা মার্চ মাত্র ৮১ বছর বয়সে এডউইন ল্যান্ড শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *