অফবিট

ভারতবর্ষে এই প্রথম শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী বিশেষ বিস্কুট এবার কলকাতাতে

চটজলদি খিদে মেটানোর একটি উপযুক্ত খাওয়ার হল বিস্কুট। কিন্তু সেটি আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে কতোটা উপকারী? আদৌ উপকারী নাকি ক্ষতিকারক? এই প্রশ্ন নিয়ে সর্বদায় একটা দ্বন্ধ সৃষ্টি হয় মনে। কারন বিস্কুট তৈরি করতে সুগার, সল্ট, ময়দা, রং এবং পাম তেলের মতো বেশ কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্য বিশেষ করে শিশুদের  স্বাস্থ্যের জন্য একদমই উপকারী নয়। কিন্তু এই কারনের জন্য আমাদের খাদ্যের তালিকা থেকে উঠে যাবে বিস্কুট এটাও তো ভাবা যায় না। সমস্যা থাকলে তার সমাধানও বের করতে হবে। আর সেই পথই খুঁজে বের করল ‘দ্য গ্রোয়িং জিরাফ’ নামক ব্র্যান্ডটির কর্ণধার রুক্মিণী ব্যানার্জি। মূলত শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এখানকার বিস্কুটগুলি যা শিশুদের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি বিকাশেও সাহায্য করবে। এই বিস্কুটগুলিতে  যে উপাদানগুলি ব্যবহার করা হয় সেগুলো প্রত্যেকটাই ভীষণ হেলদি বা স্বাস্থ্যকর। শুধু বিস্কুটই নয় নিউট্রেশন বার, ক্র্যাকার সহ হেলদি স্ন্যাকিং-এর অপশনও রয়েছে এই ব্র্যান্ডটিতে। ইতিমধ্যেই কলকাতা লঞ্চ করেছে  ‘দ্য গ্রোয়িং জিরাফ’ ব্র্যান্ডটি। এই ব্র্যান্ডের মূল লক্ষ্য স্ন্যাকিংকে সুস্বাথ্যকর করে তোলা। ফলে তাঁরা প্রত্যেকটা উপাদান বাছাইয়ের উপর জোর দেন। দ্য গ্রোয়িং জিরাফের কর্ণধার রুক্মিণী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দ্য গ্রোয়িং ওয়ার্ল্ডের স্ন্যাকিং আইটেমে রাগি, জোয়ার, ওটস এবং গুড়ের মতো নানারকম স্বাস্থ্যকর উপাদান গুলি ব্যবহার করা হয়। তাই নবীন থেকে প্রবীণ সকলের পক্ষেই স্বাস্থ্যকর।

সম্প্রতি রুক্মিণী বন্দোপাধ্যায় তার বিস্কুটের ব্র্যান্ড নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যেখানে নিজের তৈরি বিস্কুট এবং বিস্কুট ইন্ডাস্ট্রির অনেক তথ্য তিনি জানিয়েছেন। রুক্মিণী বন্দোপাধ্যায় জানান তিনি তার বাচ্চার কারনেই এই বিস্কুটের ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছিলেন। তার বাচ্চার জন্য বিস্কুট খুঁজতে গিয়ে তিনি দেখেন বাজারজাত সমস্ত বিস্কুটেই সাদা চিনি, ময়দা, হাইড্রোজেনেটেড অয়েল, প্রিজারভেটিভ রয়েছে যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। তিনি এটাও লক্ষ্য করেন বাজারে শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ কোনও বিস্কুট নেই। সেজন্য তিনি বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই এই ব্র্যান্ডটি বিশেষভাবে তৈরি করেছেন, এই জন্য বিস্কুটির ব্র্যান্ডের নামও রাখা হয়েছে দ্য গ্রোয়িং জিরাফ। রুক্মিণী বন্দোপাধ্যায় জানান বাজারের বিস্কুটে ময়দা, কৃত্রিম রঙ, সাদা চিনি, হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা পাম তেল ব্যবহার করা হয়, কিছু সংস্থা আটার তৈরি বিস্কুট বাজারে আনলেও তাতে বাকী সমস্ত উপাদান একই থাকে। কিন্তু তার সংস্থার তৈরি বিস্কুটে পাম তেলের বদলে আমুল বাটার, ময়দার বদলে রাগি, ওটস, কৃত্রিম প্রিজার্ভেটিভের বদলে প্রাকৃতিক দামী টোকোফেরল প্রিজার্ভেটিভ এবং সাদা চিনির বদলে কোলাপুরের অর্গ্যানিক গুড় ব্যবহার করা হয়েছে। এই টোকোফেরল একটি প্রাকৃতিক ভিটামিন, গুড় হজমের জন্য অত্যন্ত উপকারী, ময়দাতে কোনওরকম ফাইবার থাকেনা কিন্তু রাগি, ওটসে প্রচুর পরিমানে ফাইবার রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তাছাড়া দ্য গ্রোয়িং জিরাফের তৈরি বিস্কুটে কোনওরকম কৃত্রিম রঙ, কৃত্রিম ফ্লেভার ব্যবহার হয়নি বলে জানিয়েছেন রুক্মিণী বন্দোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন একজন বাচ্চা আটমাস বয়স থেকে সলিড খাওয়ার খাওয়া শুরু করে, এসময়ে বাচ্চাদের বিস্কুট খুবই পচ্ছন্দের থাকে, সেজন্য দ্য গ্রোয়িং জিরাফের বিস্কুট বাচ্চাদের সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করবে।

কোন সময়টি বিস্কুট খাওয়া উচিত? এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন যে ১১ঃ০০-১১ঃ৩০ অর্থাৎ ব্রেকফাস্ট করার পর বিস্কুট খাওয়া উচিৎ এবং সন্ধ্যের দিকে দুধের সাথে বা শুধু বিস্কুট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কিন্তু সকাল ও রাত বিস্কুট খাওয়া উচিৎ নয়। বিস্কুট কিভাবে খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশি উপকারী? দ্য গ্রোয়িং জিরাফের কর্ণধার রুক্মিণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, শুধু বিস্কুট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী তবে দুধের সাথেও খাওয়া যায়। তবে মূলত বিস্কুটের সাথে অন্য কোন কিছুর দরকার পড়ে না কারন বিস্কুটের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস, ফাইবারের মতো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি থাকে। রুক্মিণী বন্দোপাধ্যায় আরও জানিয়েছেন একটা সময় যৌথ পরিবারে পরিবারের সদস্যরা যাবতীয় খাওয়ার তৈরি করতো একসাথে কিন্তু বর্তমানে নিউক্লিয়ার পরিবারে বিশেষ করে বোম্বের মতোন শহরে স্বামী স্ত্রী যৌথভাবে কর্মরত সুতরাং তাদের কাছে সন্তানদের জন্য ব্রেকফাস্ট বা অন্যান্য স্ন্যাকস তৈরি করা সম্ভব নয় কারন এতে অনেকবেশী সময় লাগে এজন্য তাদের প্যাকেজজাত স্ন্যাকসের বেশী প্রয়োজন হয়ে পড়ে যাতে সহজেই বাচ্চাদের দেওয়া যায়। তাছাড়া ভ্রমনের সময়ে বিশেষ করে বিদেশে যাওয়ার সময় অথবা গাড়িতে সবসময় টাটকা খাওয়ার পাওয়া যায়না সেরকম পরিস্থিতিতে উপযুক্ত পুষ্টিগুন সরবরাহের জন্য দ্য গ্রোয়িং জিরাফের বিস্কুট ও স্ন্যাকস খুবই উপযোগী বলে জানিয়েছেন তিনি। 

দ্য গ্রোয়িং জিরাফের বেশ কিছু জিনিস যেমন রাগী কুকিস আট মাস বয়সী বাচ্চারাও খেতে পারে, তবে নোনতা বিস্কুট এক বছরের বেশী বয়সীরাও খেতে পারে বলে জানিয়েছেন রুক্মিণী বন্দোপাধ্যায়। তিনি এটাও জানান যেহেতু তাদের বিস্কুটে পাম অয়েলের বদলে আমুল বাটার ব্যবহার করা হয়েছে এবং কোনও কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করা হয়নি সেজন্য তাদের বিস্কুট খেলে অ্যালার্জি সহ কোনওরকম শারীরিক উপসর্গ হওয়ার সম্ভবনা নেই। 

রুক্মিণী বন্দোপাধ্যায় বলেছেন ডাক্তারি মতে একটি বাচ্চার চার পাঁচ ঘন্টা অন্তর খাওয়া প্রয়োজন সেজন্য এই বিস্কুট সকালে ব্রেকফাস্টের সময় অথবা বিকেলের দিকে খেলে সবচেয়ে ভালো হয়। দ্য গ্রোয়িং জিরাফের কর্ণধার রুক্মিণী বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে একাই মুম্বাইয়ে এই বিস্কুট নির্মান শুরু করেছিলেন সেখান থেকে শুরু করে বর্তমানে মুম্বাইয়ে অনলাইনে অ্যামাজনে ও তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই বিস্কুট পাওয়া যাচ্ছে। মুম্বাইয়ে এই বিস্কুট যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিস্কুট ইন্ডাস্ট্রিতে শিশুদের স্বাস্থ্যপযোগী কোনও বিস্কুট ছিলনা, এই শূন্যস্থান পূরনের দায়িত্ব নিয়েছেন রুক্মিণী বন্দোপাধ্যায়। ভারতবর্ষের সমস্ত শহরে এই বিস্কুট ব্র্যান্ডকে ছড়িয়ে দেওয়াই লক্ষ্য তার, এজন্য কলকাতাতেও নিজের ব্র্যান্ড চালু করলেন তিনি। কলকাতায় নেচার্স বাস্কেট এবং দি ডেইলি ক্যাফেতে ইতিমধ্যেই এই বিস্কুট পাওয়া যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই আরও জায়গায় পাওয়া যাবে এই বিস্কুট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *