পৃথিবী সত্যিই ধ্বংস হয়ে যাবে! এমন কথা বলার পেছনে কি কারন রয়েছে?
২০০৯ সালে একটি হলিউড ছবি মুক্তি পেয়েছিল “2012: End of the world”, সিনেমাটির নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে সিনেমাটি ঠিক কি নিয়ে। পরে অবশ্য এই সিনেমাটির হিন্দি ডাবিং বেরিয়েছিল। হলিউড ইন্ডাস্ট্রি এবং বলিউড ইন্ডাস্ট্রি দুই জায়গাতেই এই সিনেমা রীতিমতো সারা ফেলে দিয়েছিল। সিনেমাটি দেখার পর অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিল, হয়তো সত্যি সত্যি ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু ২০১২ সালের পর কেটে গেছে এতোগুলো বছর, আপাততো এখনও সবাই নিশ্চিতেই আছেন। কিন্তু সত্যি সত্যি এই কল্পায়িত সিনেমা বাস্তবায়িত রূপ নেবে না তো?!
নিশ্চয়ই ভাবছেন হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেনো? চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
যখনই আমরা মহাকাশের কথা শুনি, তখনই প্রায় আমাদের সকলের চোখের সামনে এক সুন্দর আকাশের ছবি ভেসে ওঠে। যে আকাশের রং গাঢ় কালো, আর সেই আকাশে মিটমিট করে জ্বলছে হাজার তারা। কিন্তু আসলে, অনন্ত মহাকাশ মানে পরতে পরতে বিস্ময়। কিছুটা ভয়, কিছুটা চমক। সেখানে বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের মধ্যে চলে নানান ধরনের খেলা। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন। আমেরিকার একদল গবেষক জানালেন, পৃথিবী থেকে ৩৬ আলোকবর্ষ দূরে, মহাকাশের কোথাও ‘নিউট্রন স্টার মারজার’-এর মতো ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটলে তার ধাক্কায় এই গ্রহে প্রাণের সবটুকু শেষ হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের বিস্ফোরণের বৈজ্ঞানিক নাম কিলোনোভা (kilonova) । মহাকাশে যে বিস্ফোরণ চলতে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ এই কিলোনোভা (kilonova) ।
আমাদের মাথার উপর এই যে এক অসীম মহাকাশ বিরাজমান তার আকার, আয়তন, গভীরতা আরো অনেক তথ্যই আমাদের অজানা। স্বাভাবিক ভাবে এই নিয়ে প্রশ্নও অগুনতি। এর মধ্যে অন্যতম প্রশ্ন, মহাবিশ্বে পৃথিবীর মতো গ্রহ কি আর একটাও নেই? প্রাণের হদিশ পাওয়া যেতে পারে, এমন গ্রহ কি থাকতে পারে না? তাই নিয়ে গবেষণাও চলছে। পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা এই নিয়েও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন যে, ব্রহ্মাণ্ডে যে ধরনের মহাজাগতিক ঘটনা ঘটে চলে তার প্রভাব পৃথিবীর উপর ঠিক কতটা? এই প্রশ্নের নিরিখে আমেরিকার Illinois Urbana-Champaign বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদলের একেবারে সাম্প্রতিক দাবি দুশ্চিন্তা বাড়াতে পারে সাধারণ মানুষের।
তাঁদের প্রধান বিজ্ঞানী হেল পারকিন্স বলেন, ‘পৃথিবী থেকে ৩৬ আলোকবর্ষ দূরত্বের মধ্যে যদি কোনও নিউট্রন স্টারের মারজার হয়, তা হলে সেখান থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হবে, তা প্রাণের বিলুপ্তি ঘটানোর পক্ষে যথেষ্ট।’ প্রসঙ্গত, বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় ‘নিউট্রন স্টার’ আসলে খুব ক্ষুদ্র ব্যাসার্ধের (সাধারণত ৩০ কিলোমিটার) তৈরি একটি মহাজাগতিক বস্তু। তবে এর ঘনত্ব মারাত্মক। ঠাসাঠাসি করে নিউট্রন দিয়ে তৈরি এই নক্ষত্র সাধারণত সুবিশাল কোনও নক্ষত্রের ‘সুপারনোভা’-র পর তৈরি হয়। মার্কিন গবেষকদলের ব্যাখ্যা, নিউট্রন স্টারের মধ্যে সংঘর্ষ হলে যে শক্তিশালী বিস্ফোরণ হবে তা আমাদের পৃথিবীর ওজোন স্তরকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে। ফলে এই ঘটনা যদি ঘটে তারপর থেকে প্রায় ১ হাজার বছর পর্যন্ত এই পৃথিবীকে অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণের মুখে ফেলে দেবে।
তবে এসবের মধ্যে বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় মহাজাগতিক রশ্মিকে নিয়ে। মার্কিন গবেষকদলের মতে, মহাকাশের এই ধরনের বিস্ফোরণ হলে এক ধরনের ‘কসমিক রে বাবল’ তৈরি হবে। এই ‘বাবল’-র গতিপথে যা আসবে, সব কিছুকে সেটি ছেয়ে ফেলবে। অত্যন্ত শক্তিশালী ঋণাত্মক বা ধনাত্মক কণা ছড়াতে থাকবে। পৃথিবীতেও সেই কণা আছড়ে পড়বে। একই রকম ভয় রয়েছে গামা রশ্মি নিয়ে, জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে এখনই চিন্তার কোন কারণ নেই জানিয়েছেনগবেষকদলের প্রধান হেল পারকিন্স। তাদের মতে, ঘটনাটি যেখানে ঘটবে, তার উপকেন্দ্রের ১৬ আলোকবর্ষের মধ্যে থাকলে তবেই পৃথিবীর এতো বড়ো ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে। তাছাড়াও তাদের দাবি, কিলোনোভার মতো বিস্ফোরণও সচরাচর মহাকাশে ঘটে না। ফলে, সব মিলিয়ে ভয়ের কিছু নেই।