অফবিট

বাম শাসনে নৃশংস নানুর হত্যাকান্ড

সুদীর্ঘ ৩৪ বছরে বাম শাসনে পশ্চিমবঙ্গবাসী বামফ্রন্টের একাধিক দুর্নীতি, একাধিক নৃশংস হত্যাকান্ডের সাক্ষী। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না থাকায় বামেদের কীর্তিকালাপের খবর সেসময় মানুষের কাছে সার্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। যার জন্য একাধিক অত্যাচারের পরেও দীর্ঘদিন বামেরা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু ইন্টারনেটের সম্প্রসারনের সাথে সাথে বামফ্রন্ট সরকারের আমলের একাধিক কালো অধ্যায়, অত্যাচারের খবর সাধারন মানুষ জেনে যায় যার ফলস্বরূপ আজ পশ্চিমবঙ্গে বামেরা শূন্য। একটা সময় দাপটের সাথে বাংলায় শাসন করা সিপিআইএম আজ অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। বাম শাসনে একাধিক কলঙ্কিত অধ্যায়ের মধ্যে একটি হচ্ছে নানুর হত্যাকান্ড যা আজও বামেদের গলার কাঁটা।

নানুর ব্লকে চব্বিশটি গ্রামাঞ্চল রয়েছে। বীরভূম জেলার এই নানুর বরাবরই অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকা যা এখানকার রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রধান কারন। ২০০০ সালে জুলাই এই নানুরে একটি নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটে। ২০০০ সালের ২৭ জুলাই নানুরের সূচপুরে এগারো জন ক্ষেতমজুরকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। স্থানীয় সিপিআইএম কর্মীদের বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ করা হয়। নারকীয় এই ঘটনার পর সিপিআইএম প্রথমে জানায় মৃত ব্যক্তিরা ডাকাত। এমনকী সেসময় নানুরের সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় নিহতদের ডাকাত, গুন্ডা, সমাজ বিরোধী হিসাবে ঘোষনা পর্যন্ত করেছিল। কিন্ত পরে সিপিআইএম স্বীকার করতে বাধ্য হয় নিহত ব্যক্তিরা সাধারন ক্ষেতমজুর ছিল। নিহত এগারোজন মানুষ তৃনমূল কংগ্রেস সমর্থক ছিল। সেসময় সিপিআইএম এই ঘটনার সাথে তাদের কোনও কর্মী সমর্থক জড়িত নেই বলে জানায় বরং ভূমি সংক্রান্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে দাবী করে সিপিআইএম। নানুর হত্যাকান্ডের নিন্দা করেছিল অনিল বসু, বিমান বসুর মতোন প্রথমসারির সিপিআইএম নেতারা। কিন্তু এই ঘটনার পেছনে যে বামেদের যোগ রয়েছে তা জানা যায় ২০০৫ সালে। সেই বছর ১২ মে আব্দুল খালেকের উপর দুর্বৃত্তরা আক্রমন করে। কিন্তু প্রানে বেঁচে যান তিনি, এই আব্দুল খালেক নানুর গনহত্যার প্রধান সাক্ষী ছিলেন। পুলিশ এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করে যাদের সাথে সরাসরি সিপিআইএমের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। কোর্টে নানুর মামলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সিপিআইএম কর্মীদের বিরুদ্ধে নানুরে সাক্ষীদের ভয় দেখানো ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে নানুরে পুলিশ ক্যাম্প পর্যন্ত বসাতে হয়। এরকম নৃশংস কান্ডের পরেও সিপিআইএম এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনিরুজ্জামান ও নিত্যনারায়ন চট্টোপাধ্যায়কে ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী করে।

নানুর হত্যাকান্ডে মামলা দীর্ঘ হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত তৎকালীন সিপিআইএম সরকারের নিন্দা করে। অবশেষে ২০১০ সালে নানুর হত্যাকান্ডে ৪৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে দায়রা আদালত। অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ৪৪ জনের মধ্যে চল্লিশ জন সিপিআইএম সমর্থক এবং চারজন সিপিআইএমের সদস্য ছিল। নানুরে নিহত তৃনমূল কর্মীদের স্মরনে ২৭ জুলাই দিনটাকে নানুর দিবস হিসাবে পালন করে তৃনমূল কংগ্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *