জার্মানি থেকেই সাবমেরিন ক্রয় করার পথে ভারতবর্ষ?
ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সাবমেরিন প্রজেক্ট পি ৭৫ আই নিয়ে একটি নতুন সমস্যায় দেখা দিয়েছে। বিদেশি সংস্থাগুলি এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে যার জন্য প্রজেক্টেও সময় বেশী লাগছে। পি ৭৫ আই প্রজেক্টে ভারত ছয়টি কনভেনশনাল ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিন কিনবে যা পূর্বের পি ৭৫ প্রজেক্টে নেওয়া স্করপিয়ান ক্লাস সাবমেরিনগুলোর থেকে অনেক বেশী আধুনিক হবে। পি ৭৫ আই সাবমেরিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অত্যাধুনিক সেন্সর, আপগ্রেডেড মিসাইল সিস্টেম, এআইপি সিস্টেম। এই এআইপি সিস্টেম নিয়েই প্রধান সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আধুনিক সাবমেরিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই এআইপি বা এয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রোপালশন সিস্টেম। সাবমেরিন সাধারনত দুই প্রকারের হয় পরমানু শক্তিচালিত এবং ডিজেল ইলেকট্রিক। সমুদ্রের নীচে যত দীর্ঘসময় কোনও সাবমেরিন থাকবে ততই সেই সাবমেরিন আরও বেশী ঘাতক হয়ে উঠবে। পরমানু শক্তিচালিত সাবমেরিন জলের তলায় দীর্ঘকাল থাকতে পারে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিনের ক্ষেত্রে। এই ধরনের সাবমেরিনে ডিজেল জেনারেটর ও ব্যাটারি থাকে। ব্যাটারি চার্জ করার জন্য এই ধরনের সাবমেরিনকে জলের উপরে আসতেই হয়। আধুনিক ব্যাটারি যুক্ত ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিনকে সপ্তাহে অন্তত একদিন জলের উপরে আসতেই হয় ব্যাটরি চার্জ করার জন্য। সাবমেরিন জলের উপরে উঠলেই শত্রুর রেডারে ধরা পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই তৈরি হয়েছে এআইপি সিস্টেম। এআইপি সিস্টেমের মাধ্যমে সাবমেরিনকে বারবার জলের উপরে আসার প্রয়োজন হয়না, জলের তলাতেই এআইপির সাহায্যে সাবমেরিনের ব্যাটারি চার্জ করা হয়। ভারতীয় নৌবাহিনী যে ছয়টি নতুন সাবমেরিন কিনবে তাতে আধুনিক ফুয়েল শেল এআইপি সিস্টেম থাকবে। চার ধরনের এআইপি সিস্টেম রয়েছে যার মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক এই ফুয়েল শেল এআইপি সিস্টেম। ডিআরডিও নিজস্ব এআইপি সিস্টেম তৈরি করছে তবে নৌবাহিনী আগে সেই এআইপি পরীক্ষা করবে তারপর সেটি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হবে। সেজন্য পি ৭৫ আই সাবমেরিন গুলোতে বিদেশী এআইপিই যুক্ত করা হবে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রায় ৪৩,০০০ কোটি টাকার এই পি ৭৫ আই প্রজেক্টে প্রথমে পাঁচটি দেশের সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছিল। রাশিয়ার রুবিন ডিজাইন ব্যুরো, ফ্রান্সের নেভাল গ্রুপ, স্পেনের নাভান্তিয়া, জার্মানির থাইসেনক্রুপ মেরিন সিস্টেমস বা টিকেএমএস, এবং দক্ষিন কোরিয়ার ডেইউ। এই পাচঁটি সংস্থার মধ্যে একটি সংস্থা মাঁজগাও ডক লিমিটেড অথবা এল এন্ড টির সাথে যৌথভাবে ভারতেই সাবমেরিন তৈরির কথা ছিল। তবে বর্তমানে জার্মানি ও স্পেন ছাড়া বাকী তিনটি দেশই এই প্রজেক্ট থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে কারন তাদের আধুনিক এআইপি সিস্টেম নেই। জার্মানির টিকেএমএসও প্রথমে ২০২১ সালেই পি ৭৫ আই প্রজেক্ট থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিল কিন্তু হঠাৎই টিকেএমএস এই প্রজেক্টে ফিরে এসেছে এবং জার্মানি ভারত সরকারের সাথে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সাবমেরিন চুক্তি করতে চাইছে। টিকেএমএস টাইপ ২১৪ সাবমেরিনের প্রস্তাব দিয়েছে ভারতকে। ইতিমধ্যেই সংস্থাটি মাঁজগাও ডক লিমিটেডের সাথে একটি চুক্তিও করে ফেলেছে। স্পেনের নাভান্তিয়া সংস্থা এখনও পর্যন্ত তাদের এআইপি প্রযুক্তির সাফল্যতা দেখাতে পারেনি যার জন্য সম্ভবত জার্মানির টিকেএমএস এর সাথেই পি ৭৫ আই প্রজেক্টের চুক্তি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।