অফবিট

ব্রিটিশদের লুঠ করা ৫০০ বছরের পুরোনো হিন্দু সাধুর ব্রোঞ্জের মূর্তি ভারতকে ফিরিয়ে দিতে চলেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি হিন্দু সাধুর ৫০০  বছরের পুরানো ভাস্কর্য ভারতকে ফিরিয়ে দিতে চলেছে, এই ভাস্কর্য ভারত থেকে লুট করে ইংল্যান্ড নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিরুমানকাই আলভারের ৬০ সেমি উচ্চতা বিশিষ্ট এই ব্রোঞ্জের মূর্তি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাশমোলিয়ান মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছিল। তিরুমানকাই আলভার বা থিরুমঙ্গাই মান্নানকে দক্ষিন ভারতের বারো আলভারের শেষ আলভার বলা হয়। দক্ষিন ভারতে আলভারদের কাব্য সাধক বলা হয়। আলভারদের কাছে ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণু পরম পূজনীয় ছিলেন। আলভাররা তাদের গানের মাধ্যমে ভগবান বিষ্ণুর স্তুতি করতেন। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে পরম পূজনীয় এই আলভাররা। 

৪২০০ বিসিই থেকে ২৭০০ বিসিইর মধ্যে দক্ষিন ভারতে সর্বমোট বারোজন আলভার ছিলেন। কলিযুগের ৩৯৯ সালে বা ২৭০২ বিসিইতে তিরুমানকাই আলভার দক্ষিন ভারতে জন্মগ্রহন করেছিলেন। কর্নাটকের হাম্পি শহরে ভগবান বিঠলদেবের মন্দির কমপ্লেক্সে তিরুমানকাই আলভারেরও একটি মন্দির আছে। প্রতিবছর জানুয়ারী ফেব্রুয়ারী মাসে থিরুমঙ্গাই আলভার মঙ্গলাসাশনা উৎসব হয় দক্ষিন ভারতে।

ভারতীয় হাইকমিশন বলেছে যে ১৬ শতকের এই মূর্তিটি দক্ষিণ ভারতের তামিল কবি ও সাধু তিরুমানকাই আলভারের। ব্রোঞ্জের এই মূর্তিটি একটি ভারতীয় মন্দির থেকে ব্রিটিশরা লুট করেছিল। ব্রিটিশরা ভারত থেকে ধনসম্পদের পাশপাশি প্রচুর মূল্যবান রত্ন, ভাস্কর্যও চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ডে, যার মধ্যে তিরুমানকাই আলভারের পবিত্র ব্রোঞ্জের মূর্তিটিও রয়েছে। অ্যাশমোলিয়ান মিউজিয়াম তাদের একটি বিবৃতিতে বলেছে গত ১১ মার্চ ২০২৪এ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ অশমোলিয়ান মিউজিয়াম থেকে ১৬ শতকের তামিল কবি ও সাধু তিরুমানকাই আলভারের একটি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য ফেরত দেওয়ার জন্য ভারতীয় হাই কমিশনের একটি দাবিকে তারা মেনে নিয়েছে। তাদের এই সিদ্ধান্ত চ্যারিটি কমিশনকে জানানো হয়েছে, কমিশন অনুমোদন দিলেই মূর্তিটি ভারতকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ২০২২ সালে অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় নাইজেরিয়ার কিছু ব্রোঞ্জের মূর্তি ফিরিয়ে দেয় তারপরেই ভারতের হাইকমিশনের পক্ষ থেকে তিরুমানকাই আলভারের মূর্তি ফিরিয়ে দেবার দাবী জানানো হয়। 

১৮৯৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বাহিনী বানিজ্য বিরোধীতার কারন জানিয়ে দুইশোটিরও বেশী প্রত্নতাত্ত্বিক ভাস্কর্য লুঠ করে ভারতে। ব্রিটিশরা সেসময় হাজার হাজার পিতল এবং অন্যান্য প্রত্নসামগ্রী ভারত থেকে নিয়ে গিয়ে লন্ডনে বিক্রি করেছিল সামরিক মিশনের অর্থের জন্য। 

দুইশো বছরের ঔপনিবেশিক শাসনে ব্রিটিশরা ভারত থেকে ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ চুরি করেছে। যেমন ১৮৪৯ সালে দ্বিতীয় অ্যাংলো শিখ যুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জয়ী হয়ে পাঞ্জাব থেকে বিশ্বের অন্যতম বড় কোহিনূর হীরে তাদের অধিকারে নিয়ে নেয়। ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়াকে কোহিনূর হীরে উপহার দেয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। মহারানি ভিক্টোরিয়ার মুকুটে এই কোহিনূর হীরেকে স্থান দেওয়া হয়েছে। লন্ডন টাওয়ারের জুয়েল হাউসে সর্বজনীন প্রদর্শনের জন্য কোহিনূর হীরে রাখা হয়েছে। 

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ভারত বেশ কয়েকবার কোহিনূর হীরের ব্যাপারে দাবী করেছে ইংল্যান্ডের কাছে। ইরান, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের সরকারও কোহিনূর হীরের দাবী করেছে ইংল্যান্ডের কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *