অফবিট

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের যোগ্য উত্তরসূরী যাদবপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ডাঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়!

২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় বিজেপির বিখ্যাত এক জননেতা বলেছিলেন যদি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী না থাকতো তাহলে পশ্চিমবঙ্গ অন্য একটি দেশের অংশ হত এবং পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত বাসিন্দা বাংলাদেশের নাগরিক হত। স্বাধীনতার সময় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কারনেই আজ পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশ হয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট প্রায় দুইশো বছর ব্রিটিশ শাসনের পর ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়। কিন্তু ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়। মহম্মদ আলি জিন্নাহের নেতৃত্বে মুসলিম অধুষ্যিত অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান গঠন হয়। কিন্তু ভারত বিভাজনের সময় ভারত, পাকিস্তান ছাড়াও আরও একটি আলাদা দেশ গঠনের প্রস্তাব উঠেছিল যদিও এটি পরে গ্রাহ্য হয়নি। সেইসময় বর্তমান বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে ইউনাইটেড বেঙ্গল নামে একটি দেশ গঠনের কথা উঠেছিল। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কারনেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি এবং পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুরা সুরক্ষিত হয়েছিল। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভারতীয় জনসংঘ দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এই ভারতীয় জনসংঘ দলই পরবর্তীকালে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি নামে পরিচিত হয়। এই জন্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে বিজেপিরও প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার সভাপতি ছিলেন। তিনি ইউনাইটেড বেঙ্গল পরিকল্পনার বিরোধী ছিলেন। সেসময় বাংলায় মুসলিম লীগের প্রধানমন্ত্রী ছিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সোহরাওয়ার্দীরই পরিকল্পনা ছিল ভারত, পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে একটি ভিন্ন দেশ গঠনের। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিল এই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সোহরাওয়ার্দীর বক্তব্য ছিল যদি বাংলা ভাগ হয় তাহলে বাংলার অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোও বিভক্ত হয়ে যাবে। এজন্য অর্থনৈতিক ভাবে বাংলা পিছিয়ে পড়বে। তাছাড়া অবাঙ্গালী ব্যবসায়ীদের দ্বারাও বাংলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেজন্য বাংলা ভাগ হওয়া উচিত নয়। কলকাতা সেসময় বাংলার সবচেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ শহর ছিল। কলকাতা ভারতের বানিজ্যিক রাজধানীও ছিল সেসময়। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর এই ইউনাইটেড বেঙ্গল পরিকল্পনার বিরোধীতা করেছিলেন কারন বাংলার হিন্দুরা ইউনাইটেড বেঙ্গল চাইছিলনা। 

১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের নেতৃত্বে যখন বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল তখন যে হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গ রোধের জন্য আন্দোলন করেছিল, চল্লিশ বছর পর সেই হিন্দুরাই ইউনাইটেড বেঙ্গলের বিরোধীতা করছিলো কারন বিগত চল্লিশ বছরে বাংলার রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হয়েছিল। হিন্দু মুসলিম সম্প্রতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং ১৯৪৭ সাল আসতে আসতে ধর্মীয় উত্তেজনা চরম আকার ধারন করেছিল। ১৯৩৭ সালে বাংলাতে হওয়া নির্বাচনে জয়লাভ করে সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, কংগ্রেসই এই নির্বাচন বয়কট করে। যার জন্য কৃষক প্রজা পার্টি ও মুসলিম লীগ যৌথভাবে বাংলাতে সরকার গঠন করে। এই সরকার বাংলাতে মুসলিমদের অবস্থা ভালো করবার জন্য কিছু আইনি পদক্ষেপ নেয়। এই ঘটনা বাংলার হিন্দুদের মনে সন্দেহ তৈরি করে। ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে কলকাতাতে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। এই ঘটনার মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যেই ১০ অক্টোবর কোজাগরী লক্ষী পূর্নিমার দিন বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালীতে হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর ব্যাপক আক্রমন হয়। একসপ্তাহ ধরে হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর ধর্ষন, লুঠপাত, হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ৫০,০০০ হিন্দু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। প্রায় পাঁচ হাজার হিন্দুর মৃত্যু হয়েছিল। কোনও কোনও জায়গায় হিন্দুদের স্থানীয় মুসলিম নেতাদের থেকে অনুমতি নিতে হত গ্রামের বাইরে যাওয়ার জন্য। মহাত্মা গান্ধীকে স্বয়ং নোয়াখালী যেতে হয়েছিল এই ধর্মীয় উত্তেজনা বন্ধ করবার জন্য। এসব কারনে বাংলার হিন্দুরা ইউনাইটেড বেঙ্গল গঠনের বিপক্ষে চলে যায়। এজন্য ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হিন্দু মহাসভা ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাকে বিভাজনের প্রস্তাব দেয়। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আরও বলেন জিন্নাহের দ্বিজাতি তত্ত্ব অর্থাৎ মুসলীমদের জন্য আলাদা দেশ ও হিন্দুদের জন্য আলাদা দেশ নীতির কারনে ইউনাইটেড বেঙ্গল সম্ভব নয়। কারন বাংলার অর্ধেক হিন্দু জনসংখ্যা কখনও মুসলিম শাসনের অধীনে থাকবেনা। তাছাড়া হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইউনাইটেড বেঙ্গল চাইলেও মুসলিম লীগের অনেক নেতা, জাতীয় কংগ্রেস ও হিন্দুরা ইউনাইটেড বেঙ্গলের প্রস্তাবের বিরোধীতা করে। এই কারনে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতার সময়ে বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান হয় এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশ হয়। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানতেন ইউনাইটেড বেঙ্গল গঠন হলে সেটি একটি ইসলামিক দেশ হত, একপ্রকার পাকিস্তানই হত যেখানে হিন্দুদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হত যার জন্য তিনি হিন্দু অধুষ্যিত পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের অংশ করার পক্ষে ছিলেন। 

১৯৪৭ সালে জওহরলাল নেহেরু যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তার মন্ত্রীসভায় বানিজ্য ও শিল্প মন্ত্রমালয়ের দায়িত্ব পান কিন্তু পরবর্তীকালে জওহারলাল নেহেরুর সাথে মতবিরোধের কারনে তিনি ১৯৫১ সালের ২১ অক্টোবর আরএসএসের সহায়তায় ভারতীয় জন সংঘ দল প্রতিষ্ঠা করেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কাশ্মীরের উপর ৩৭০ ধারা আরোপের বিরোধীতাও করেছিলেন। অখন্ড ভারত গঠন তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল। ১৯৫৩ সালের ২৩ জুন জম্মু কাশ্মীর পুলিশের হেফাজতেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়। 

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আদর্শে দিল্লিতে পরবর্তীকালে তৈরি করা হয়েছে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মূখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশন বা এসপিএমআরএফ। এই ফাউন্ডেশন জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনা জাগ্রত করা এবং এক মহান ভারতবর্ষ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছে। এই সংগঠন বিজেপির সাথে যুক্ত। আসন্ন ১৮তম  লোকসভা নির্বাচনে এই ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ট্রাস্টি ডাঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়কে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছে বঙ্গ বিজেপি। 

বিজেপির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য তিনি এবং বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ইউনিটের কোর কমিটিরও অংশ তিনি। বরাবর শান্ত স্বভাবের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডাঃ গঙ্গোপাধ্যায় তার কর্মজীবন জুড়ে জননীতি এবং রাজনৈতিক গবেষনায় কাজ করে চলেছেন। এসপিএমআরএফ এর পরিচালক হিসাবে তার নেতৃত্বে সংস্থাটি বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছে। তার নেতৃত্বে এসপিএমআরএফ বিশ্বের শীর্ষ চল্লিশটি রাজনৈতিক দল ঘনিষ্ঠ থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মধ্যে স্থান পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তার। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের সময় পশ্চিমবঙ্গে তিনি মোদির জন্য বাংলা – বাংলার জন্য মোদি, প্রচারাভিযান করেছিলেন। 

২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় লক্ষ্য সোনার বাংলা প্রচারাভিযান করেন তিনি। ২০২১ সালে বোলপুর শান্তিনিকেতন কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ছিলেন তিনি। ডাঃ গঙ্গোপাধ্যায় সেইসময় বোলপুরের মাটিকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিশিষ্ট বাংলা সাহিত্যিক জয়দেবের বলেছিলেন। জয়দেবের রচিত গীতগোবিন্দ বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। এজন্য তিনি বোলপুরে সাহিত্য চর্চার জন্য সর্বভারতীয় স্তরের একটি বাউল কেন্দ্র তৈরি করবার ঘোষনা করেছিলেন। ডাঃ গঙ্গোপাধ্যায়ের কারনে বোলপুর কেন্দ্রে বিজেপির ভোট সংখ্যা বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে পূর্বের তুলনায়।  ওই কেন্দ্রে যেখানে ২০১৬ সালে বিজেপির ভোট ছিল ১৯,০০০ সেখানে ২০২১ সালে বিজেপির ভোট ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪০.৮৯ শতাংশ এবং শাসক দলের ভোট ৪.৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। যার জন্য বিজেপি আবারও তার প্রতি আস্থা রেখেছে এবং যাদবপুরের মতো গুরুত্বপূর্ন লোকসভা কেন্দ্রে তাকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা করেছে। 

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্রে জয়লাভ করেছিল তৃনমূল প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী। আগামী নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্রে ডাঃ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রধান প্রতিপক্ষ তৃনমূল প্রার্থী সায়নি ঘোষ। কিন্ত অতীতে সায়নি ঘোষের দেবাদিদেব মহাদেবকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে যাদবপুর কেন্দ্রে কিছুটা সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে বিজেপি। যাদবপুর কেন্দ্রে বরাবরই সিপিএমের একটি বড় ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে এখানে সিপিএমের ভোটের একটি বড় অংশ বিজেপি পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া যাদবপুরে আইএসএফ প্রার্থীর কারনে মুসলিম ভোটের কিছু হাতছাড়া হবে তৃনমূলের যাতে স্পষ্ট সুবিধাপাবে বিজেপি। এমনিতেও বর্তমানে দেশের যুবসমাজ বিজেপি ঘনিষ্ঠ। মননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতে যেন হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরন ঘটেছে। ইতিমধ্যেই ডাঃ গঙ্গোপাধ্যায় যাদবপুরের সমস্ত কেন্দ্রেই জনসংযোগ যাত্রা শুরু করেছেন। এপ্রিল মাসের চড়া রোদ ও গরম উপেক্ষা করেই অগনিত মানুষের ঢল বুঝিয়ে দিচ্ছে ডাঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের যোগ্য উত্তরসূরী ডাঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায় যেন জাতিধর্ম নির্বিশেষে যাদবপুর কেন্দ্রকে ঐক্যের সুতোয় বাঁধছেন। আগামী ৪ জুন যাদবপুর কেন্দ্রে পদ্মফুল ফোটার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *