ফিচার আর্টিকেল

বৈদ্যুতিক বাতি। যার অবদান ভোলার নয়- দ্বিতীয় খণ্ড

বৈদ্যুতিক বাতির ক্ষেত্রে যার অবদান ভোলার নয়- প্রথম খণ্ড

বৈদ্যুতিক বাতির উদ্ভাবক হিসাবে বেশিরভাগ মানুষই জানে টমাস আলভা এডিসনকে। হ্যাঁ এটা ঠিকই যে বৈদ্যুতিক বাতির উদ্ভাবনের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এডিসন। তবে শুধু যদি তারই অবদান রয়েছে এটা ভাবাটা ভুল কারন বৈদ্যুতিক বাতির উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এডিসন ছাড়াও আরো অনেকের কৃতিত্ব ছিল। ছিল তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, যার ফলস্বরুপ ফল এই বৈদ্যুতিক বাতি। এক্ষেত্রে অবদান রাখা মানুষদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন উইলিয়াম কুলিজ।

বৈদ্যুতিক বাতিতে টাংস্টেন ধাতুর ব্যবহার নিয়ে আমরা কমবেশি অবগত আছি। এ ধাতুকে বাতিতে ব্যবহারযোগ্য করতে কিন্তু কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। এতে বিশেষ অবদান রেখেছেন উইলিয়াম কুলিজ৷ আজকে সে গল্পই আপনাদের শোনাব।

অধিকাংশ মানুষই বৈদ্যুতিক বাতিতে টাংস্টেন ধাতুর ব্যবহার সম্পর্কে অবগত। কিন্তু বাতিতে এই ধাতুর ব্যবহারযোগ্য করে তোলার পেছনে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। আর এই বিষয়ে অবদান রেখেছেন উইলিয়াম কুলিজ।

সময়টা ছিল বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক। ওই সময় এম.আই.টি-তে শিক্ষকতা ও পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণায়  উইলিয়াম কুলিজ ব্যস্ত ছিলেন। তখন জেনারেল ইলেকট্রনিকের পক্ষ থেকে তার কাছে একটি লাভজনক চাকরির প্রস্তাব এসেছিল৷ তবে তার ইচ্ছে ছিল না যে তিনি তার প্রানের শহর বোস্টন এবং পদার্থবিজ্ঞান গবেষণা ছেড়ে যেতে। কিন্তু তার কাছে উপায়ও ছিল না কারন তার উপর ঋণের বোঝার ভার থাকার পাশে বেতনও ছিল অল্প। যার ফলে তাকে জেনারেল ইলেকট্রনিকের পক্ষ থেকে আসা চাকরিটিকে গ্রহণ করতে হয়েছিল। তিনি যখন ১৯০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেনারেল ইলেকট্রিক রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে এটি একটি কাঠের কেবিনের সমতুল্য এবং এটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে এম.আই.টি-র ধারেকাছেও নেই। তবে এই সম্পর্কে ভাবার অবকাশ ছিল না তার কাছে কারন শেখানে প্রবেশ করার সাথে সাথেই বড় বড় দায়িত্ব ভার তার উপর দেওয়া হয়েছিল।   

বৈদ্যুতিক বাতি ছিল জেনারেল ইলেকট্রিকের প্রধান ক্রয়যোগ্য পণ্য। আমাদের সবার অতি সুপরিচিত বিজ্ঞানী এডিসন ফিলামেন্ট  ১৮৭৯ সালে বিশ্ববাসীকে বাতির সাথে পরিচিত করেছিলেন এটা ঠিক তবে এই বাতিটি ছিল নানাবিধ সমস্যা জড়িত। যেমন- এর প্রজ্বলন ক্ষমতা ছিল মৃদু, অতি মাত্রায় ভঙ্গুরতা প্রকৃতির, স্থায়িত্ব ছিল স্বল্প মেয়াদি ইত্যাদি। জানা যায় যে তিনি কিন্তু ফিলামেন্ট তৈরি করতে ব্যবহার করেছিলেন কার্ডবোর্ড ও বাঁশ। পরবর্তীকালে  কার্বন ফিলামেন্টের উন্নতি ঘটিয়েছিল জেনারেল ইলেকট্রিক যেখানে ৫০০ ঘণ্টার উপর বাতির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়৷

অন্যদিকে ইউরোপেও শুরু করেছিল জোরদার প্রচেষ্টা। ইউরোপীয়ান বিজ্ঞানীরা ফিলামেন্ট তৈরি করার কাজে অসমিয়ামের মতো কঠিন উপাদান ব্যবহার করার প্রচেষ্টা করেছিলনে যেটি বেশি দক্ষ ছিল তুলনামূলকভাবে। তবে সেখানেও সমস্যা ছিল। আর এই সমস্যাটি হল যে এটি ছিল দুর্লভ এবং উচ্চমূল্যের। সেই জন্য ট্যান্টেলাম ও টাংস্টেন ধাতু দিয়েও ইউরোপীয়ানরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এদিকে টেক্কা দেওয়ার জন্য আরও উন্নত ফিলামেন্ট দরকার হিসাবে অনুুুধাবন করল আমেরিকা।

উইলিয়াম হুইটনি যিনি ছিলেন উইলিয়াম কুলিজের প্রাক্তন রসায়নের অধ্যাপক তথা রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে প্রথম পরিচালক। তিনি রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে একটি বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন  ফিলামেন্টের উন্নতির জন্য। তিনি কয়েকজন বিজ্ঞানীর উপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন যে এমন এক ধাতুর অনুসন্ধান করার জন্য যেটি চুলসদৃশ ফিলামেন্ট গঠন করতে সক্ষম হবে ও অতি মাত্রায় তাপ সহনশীল হবে এবং পাশাপাশি এই ধাতুকে বাল্বে উপস্থিত অক্সিজেনের প্রতি নিষ্ক্রিয় হতে হবে যাতে পার্শ্ববিক্রিয়া এড়ানো যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *