বিশ্ব সাউন্ড সিস্টেমে এক নাম্বার। ‘Bose’ কোম্পানি “বোস” কে নিজের হাতে তৈরী করেছিলেন সুদূর আমেরিকাতে বসে এক বাঙালি
Bose” নাম টা শুনলেই প্রথমে যেটা সামনে আসে সেটা হল দামী দামী হেডফোন, মিউজিক সিস্টেম, হোম থিয়েটারের কথা । অন্যান্য সাউন্ড কোম্পানীর প্রোডাক্ট এর দাম এর থেকে “বোস” এর প্রোডাক্টের দাম অনেকটাই বেশি। আরও একটু বাড়িয়ে বললে যা প্রায় মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। ইউএস আর্মি থেকে শুরু করে বড়ো বড়ো মাল্টিপ্লেকস, অডিটোরিয়ামে ব্যবহার করা হয় বোস -এর অডিও সিস্টেম।
আর এই “বোস” কে নিজের হাতে তৈরী করেছিলেন সুদূর আমেরিকাতে বসে এক বাঙালি, যার নাম “অমর গোপাল বোস”। বাঙালি হিসাবে হয়তো এটা প্রত্যেকটি বাঙালির কাছে গর্বের বিষয়।
অমর গোপাল বোস- এর বাবা ননি গোপাল বোস ছিলেন একজন বাঙালি বিপ্লবী। যিনি পলিটিক্যাল কারণে ব্রিটিশ আমলে জেল খেটেছেন। জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর তিনি আর রাজনীতিতে ফিরে আসেননি। এরপর সোজা আমেরিকা পারি দেন,তারপর নিজের ব্যবসা শুরু করেন। বিয়ে করেন এক আমেরিকান স্কুল শিক্ষিকাকে। এরপর 2 নভেম্বর 1929 সালে জন্মগ্রহণ করেন “অমর গোপাল বোস”।
ছোটোবেলা থেকেই ইলেকট্রনিক জিনিস এ বিশেষ ঝোঁক ছিল অমর গোপাল বোসের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাবার ব্যবসায় ভীষণ ক্ষতি হয়। তখন তিনি হাত খরচ চালানোর জন্য একটা সামান্য রেডিও সারাই করার দোকানে কাজ করতেন আর উপার্জন এর টাকা তুলে দিতেন বাবার হাতে।
“বোস “এর স্কুল জীবন শুরু হয় “Abington senior high school” পিনসেলভ্যানিয়া থেকে। স্কুল শেষ করে এম আই টি থেকে( bachelor in science) ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ গ্রাজুয়েশন সম্পূর্ণ করেন তিনি। তারপর এই MIT থেকেই পিএইচডি করে ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়ার পর এই কলেজে অনেক দিন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে অধ্যাপনার কাজ করেছেন অমর গোপাল বোস।
যদিও “Bose” এর শুরু টা হয়েছিল একটু অন্য ভাবে, যেটাকে কাকতালীয় বলা যেতে পারে। অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসার থাকার সময়ে অমর গোপাল বোস জোরে আওয়াজ হবে এইরকম একটা সাউন্ড সিস্টেম কেনেন। যেটা খুব দামি ছিল। কিন্তু তাতে গান শুনে কিছুতেই যেন মানুষিক শান্তি হচ্ছিল না তার। কোথাও কিছু যেনো একটা মিসিং ছিল। অডিটোরিয়ামে লাইভ পারফরম্যান্স এর ক্ষেত্রে যে শব্দ সরাসরি কানে আসে, তার সাথে যেন অনেক পার্থক্য। আর তা ছাড়া সেই সময়ে বাজারে ভালো কোনো ব্র্যান্ডও ছিল না, যেটা একদম নিখুঁত শব্দ তুলে আনতে পারে। এখান থেকেই শুরু হয়” বোস ” এর যাত্রা। প্রথমে তিনি কাজ শুরু করেন aquastick এর উপর, যেটার থেকে উচ্চ শব্দ তৈরী হতে পারে। “অমর কান্তি বোস” এর লক্ষ্য ছিল psychoacoustics।
যদিও পরবর্তী কালে বোস সাউন্ড সিস্টেম এর উপর কাজ শুরু করে। 1964 সালে যাত্রা শুরু করে “বোস কর্পোরেশন”। যার অন্যতম বিনিয়োগকারী ছিলেন অমর গোপাল বোস এবং তার প্রফেসর, (যার আন্ডার এ তিনি পিএইচডি করেছিলেন) Y W LEE।
এখন বিশ্বজুড়ে “বোস ” কর্পোরেশন এ কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় বারো হাজার। বোস এর সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হয় পোরসে, মারসিডিস এর মত বিলাস বহুল গাড়িতে।” অমর গোপাল বোস” একবার বলেছিলেন তিনি যদি চাকরি করতেন তার ক্রিয়েটিভ মানসিকতার জন্য হয়তো তাকে অনেকবার চাকরি হারাতে হতো, কিন্তু তিনি ব্যবসা শুরু করেছিলেন বড়োলোক হওয়ার জন্য না, বরং যেটা করতে চান যাতে সেটা করতে পারেন সেটার জন্য। ফোরবস ম্যাগাজিন-এ এই বাঙালির স্থান ছিল 241 নম্বরে।
2013 সালের জুলাই মাসে আমেরিকাতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন “অমর গোপাল বোস “। আজও বিশ্বসাউন্ড সিস্টেমে এক নম্বর জায়গাটা “Bose” এর দখলে। প্রত্যেকটি বাঙালির কাছে যেটা সত্যি গর্বের বিষয়।