ভ্যালেন্টাইনস ডে-এর ইতিহাস, জেনে নিন কেনো পালন করা হয় দিনটি
ফেব্রুয়ারি মাস মানেই প্রেমের মাস। আর প্রেম মানেই হাতে গোলাপ, মনে বসন্তের ছোঁয়া আর একরাশ ভালোবাসার অনুভূতি। ইতিমধ্যে এই বছরের প্রেম পার্বণ শুরু হয়ে গেছে। রোজ ডে (৭ই ফেব্রুয়ারি) দিয়ে শুরু, তারপর একে একে প্রপোজ ডে ( ৮ই ফেব্রুয়ারি), চকলেট ডে (৯ ই ফেব্রুয়ারি), টেডি ডে (১০ ই ফেব্রুয়ারি), প্রমিস ডে (১১ ই ফেব্রুয়ারি), হাগ ডে (১২ ই ফেব্রুয়ারি) , কিস ডে(১৩ ই ফেব্রুয়ারি) এবং সবশেষে আসে ভালোবাসার দিন অর্থাৎ ১৪ ই ফেব্রুয়ারি।
প্রতিবছরই ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করা হয় কিন্তু এই দিনটি কেন পালন করা হয় জানেন কি? যদি না জেনে থাকেন, তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন এই দিনটি পালিত হয়।
প্রতি বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করা হয়। বেশিরভাগই মনে করেন এই দিনটি প্রেমিক-প্রেমিকা অথবা দম্পতিরা মিলে পালন করে। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণভাবে ভুল। আপনি আপনার যে কোনো কাছের মানুষ যারা আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ তাদের সাথে করে নিয়ে এই দিনটি পালন করতে পারেন।
দিনটির নামকরণ করা হয়েছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে। পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকে পোপ গেলাসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। তবে আমরা যদি ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখি, তাহলে দেখতে পাবোতৃতীয় শতাব্দীর সময় রোমের বাসিন্দা, পুরোহিত ও চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের স্মরণে উদযাপিত হয়েছিল এই দিনটি। যিনি ছিলেন একজন ধর্ম প্রচারকও। পাশাপাশি তিনি রোমান সৈন্যদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য বিবাহের অনুষ্ঠানও করতেন।
দ্বিতীয় ক্লডিয়াস, একজন রোমান সম্রাট ছিলেন। যিনি বিশ্বাস করতেন যে, অবিবাহিত সৈন্যদের বিবাহিতদের চেয়ে বেশি দক্ষতা আছে , তাই তাদের বিয়ে করতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি একটি আইন তৈরি করেন যাতে বলা ছিল, সেনাবাহিনীতে চাকরি করা যুবকেরা বিয়ে করতে পারবেনা। ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন যখন এই আইন সম্পর্কে জানতে পারেন তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই আইনটি অন্যায়। তাই যে সকল সৈন্যরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান তাদের জন্য গোপনে বিবাহের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য লোকেদের মধ্যেও ভালবাসা জাগিয়ে তুলতে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু, খুব তাড়াতাড়িই দ্বিতীয় ক্লডিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এই কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার আদেশ দেন। যিনি প্রেমের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন, সেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্বীকার করে সেখানকার মানুষেরা তাঁকে একটা দিন উৎসর্গ করার কথা ভাবে।
তবে এই প্রসঙ্গে ভিন্ন মতেরও দেখা মেলে, যেখানে বলা হয়েছে যে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ধর্ম প্রচারের মামলায় অভিযুক্ত করে কারাবাসে পাঠানো হয়। কারাবাসে থাকার সময় তাঁর চিকিৎসার জাদুতে একজন কারারক্ষীর অন্ধ মেয়ের দৃষ্টি তিনি ফিরিয়ে দেন। এরপরেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে মেয়েটির পরিবারসহ অনেকেই খ্রীস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং মেয়েটির সঙ্গে ভ্যালেন্টাইনের একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। সেখানকার রাজার কানে এই খবর পৌঁছোনো মাত্রই, আইনকে অমান্য করে ধর্ম প্রচারের অপরাধের জন্য ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লেখেন, যাতে চিঠির শেষে লেখা ছিল ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। সেই থেকে মানুষ তাঁর নামটিকে ভালবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে। পরে পোপ গেলাসিয়াস প্রথম ১৪ ই ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করে।
