ডিফেন্স

আমেরিকার মতো দেশের টেকনোলোজি চুরি করে অস্ত্র তৈরি করলেও বিশ্ব অস্ত্র বানিজ্যে চীনের বড় উত্থান সামনে

নিউজ ডেস্কঃ একের পর এক দেশকে অস্ত্র বিক্রি করে বর্তমানে গোটা বিশ্ব জুড়ে চীনের অস্ত্র বাজারের রমরমা। তবে সবথেকে বড় ব্যাপার এই যে চীনের অস্ত্র বাজারের রপ্তানি গোটা পৃথিবী জুড়ে বিরাটভাবে বাড়তে চলেছে। আগামি ১০ বছরে চীনের কারনে ইউরোপ, আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো দেশকে চীনের অস্ত্র বানিজ্যের সম্মুখীন হতে হবে বলে মত সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

শেষ ৩ দশকে চীন তাদের সামরিক এবং প্রতিরক্ষা খাতের পাশাপাশি রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্টের খাতে বিরাট পরিমান অর্থ ব্যয় করেছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তাদের নিজেদের যুদ্ধাস্ত্র বানাতে সক্ষম হয়নি, কেবলমাত্র আমেরিকার মতো দেশের যুদ্ধাস্ত্র এবং টেকনোলোজি চুরি করে অস্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করেছে। কিছু ক্ষেত্রে তা সফল হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে তারা বিরাটভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু শেষ কয়েক বছরে চীনের অস্ত্র বানিজ্য সেভাবে লাভের মুখ দেখতে পারেনি।

একাধিক রিসার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী শেষ ১০ বছরে অর্থাৎ ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত চীন মোট ১৬.৬ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করেছিক অর্থাৎ প্রতি বছর প্রায় ১.৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে অনেকের মতে তারা শেষ কয়েক বছরে ৩-৪ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র প্রতিবছর বিক্রি করেছে, সেখানে দাঁড়িয়ে ২০২০ সালে আবার তারা মাত্র ৭৫৯ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করেছে। আবার অন্যদিকে আমেরিকা সেই বছরে ১৩৮.২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করেছে। 

বর্তমানে চীন ৩০ টির উপরের দেশের কাছে তাদের যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করে থাকে। তবে তাদের সবথেকে বড় ক্রেতা হল পাকিস্তান। ২০২২ সালের প্রথমের দিকে চীন পাকিস্তানকে অত্যাধুনিক ৩৬ টি 10 c সিরিজের যুদ্ধবিমান বিক্রির চুক্তি সম্পন্ন করেছে। অন্যদিকে আবার তাদের এফ ৭ র মতো বিমানের প্রডাকশান লাইন বন্ধ হওয়ার ফলে ২০১৩ সালের পর তারা আর বড় ধরণের যুদ্ধবিমান গোটা বিশ্বে রপ্তানি করতে পারেনি।

চীন বর্তমানে একাধিক দেশকে যুদ্ধাস্ত্র রপ্তানি করলেও বিরাট পরিমান যুদ্ধাস্ত্র তাদেরকে এখনও আমদানি করতে হয়, কারণ জেট ইঞ্জিন থেকে শুরু করে আধুনিক অনেক অস্ত্রই এখনও তারা তৈরি করতে পারেনা। আর সেই কারনে তাদের রাশিয়ার উপর নির্ভর করতে হয়। 

বর্তমান চীন সেভাবে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করতে না পারলেও ছোট, বড় ড্রোনের মতো ভালো মানের যুদ্ধবিমান, ফ্রিগেট, সাবমেরিন, সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, ব্যালেস্টিক মিসাইলের মতো ছোট খাটো প্রচুর অস্ত্র তৈরি করছে। গোটা পৃথিবী জুড়ে অল্পদামে তারা অস্ত্র রপ্তানি করছে। তারা পৃথিবীর ৩০ টির মতো দেশকে অস্ত্র বিক্রি করলেও গোটা পৃথিবী জুড়ে এখনও সেভাবে তারা তাদের বাজার তৈরি করতে পারেনি। আর তার প্রধান কারণ হল তাদের অস্ত্রের মান। চীনের অস্ত্রের গুনগত মান খারাপ হওয়ার জন্য প্রচুর দেশ তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয় করতে ইচ্ছুক নয়। এছাড়াও তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয় করা দেশের তালিকায় আফ্রিকা বা পাকিস্তানের মতো পিছিয়ে পরা দেশ গুলিই রয়েছে। কারণ অল্প মুল্যে এবং ঋণের মাধ্যমে তারা চীনের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয় করতে সক্ষম হচ্ছে। চীন তাদের ড্রোন বিরাট মানের তৈরি করার কথা ভাবলেও আসলে সেভাবে তারা তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছেনা। আমেরিকা, ইসরায়েল বা তুরস্কের মতো ড্রোন তৈরি করতে গেলে এখনও অনেক সময় লাগবে তাদের।

চীনের অস্ত্র বানিজ্যের বড় জায়গা হল পাকিস্তান। কারণ আমেরিকা বর্তমানে পাকিস্তানকে প্রচুর পরিমানে অস্ত্র দিতে অস্বীকার করছে। আর আমেরিকার সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো না হওয়ার ফলে চীনের থেকে প্রচুর অস্ত্র তাদেরকে ক্রয় করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষ এবং দক্ষিণ এশিয়াতে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতেই চীনের থেকে অস্ত্র ক্রয় করছে পাকিস্তান।

চীনের ধনী দেশের তালিকায় একমাত্র মধ্য প্রাচ্য রয়েছে। চীনের কাছে থেকে সৌদি আরবের মতো দেশ মিডিয়াম রেঞ্জের ব্যালেস্টিল মিসাইল ক্রয় করছে। তবে সবথেকে বড় ব্যাপার হল অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে সৌদি আরব চীনের থেকে পরমানু ক্ষমতা সম্পন্ন ডি এফ ৩ এবং ডি এফ ২১ র মতো মিসাইল সংগ্রহ করছে।

চীন যে এখনও ইউরোপ, রাশিয়া বা আমেরিকার মতো দেশের মতো অস্ত্র তৈরি করতে পারছেনা তা আর নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে অল্প দামে অস্ত্র রপ্তানি করার কারনে পিছিয়ে পরা বহু দেশ চীনের থেকে অস্ত্র ক্রয় করছে, পাশাপাশি ঋণের মাধ্যমে অস্ত্র বিক্রি করার ফলে ক্রেতার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু চিন্তার বিষয় হল এর অধ্যে অনেক দেশই আবার চীনের (ডেবট ট্র্যাপ) লোণের স্বীকার।

২০৩০ এর মধ্যে চীন তাদের অস্ত্র বানিজ্য বিরাটভাবে বাড়াতে চলেছে। আর সেই কারনে তারা রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্টের উপর বিরাটভাবে নজর দিচ্ছে। তবে চীনের অস্ত্রের গুনগত মান খারাপ হওয়ার কারনে ইতিমধ্যে প্রচুর দেশ তাদের থেকে অস্ত্র ক্রয় করা থেকে পিছিয়ে পরছে এবং বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাদের অস্ত্র বানিজ্য কতোটা ফুলে ফেঁপে ওঠে নাকি সমস্যার সম্মুখীন হয় এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *