ডিফেন্স

আকাশ যুদ্ধের রাজা বলে খ্যাত যুদ্ধবিমান গুলির দাম সম্পর্কে আন্দাজ আছে?

নিজস্ব সংবাদদাতা:বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় বেশিরভাগ দেশেই নিজ সুরক্ষার কথা ভেবে সামরিক সেনাবাহিনীকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সুসজ্জিত করে তুলতে আরম্ভ করেছে। আর এই যুদ্ধের আবহে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে বিভিন্ন দেশের সামরিক অস্ত্র তৈরির কর্পোরেশন গুলি। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বিক্রি বেড়েছে যুদ্ধবিমানের। আর এই উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন যুদ্ধবিমান বিক্রয় করে প্রচুর পরিমাণে মুনাফা লুটছে এই কোম্পানিগুলো।  আজ যখন যুদ্ধবিমান নিয়ে কথা উঠলোই তখন আসুন একটু জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের কোন যুদ্ধবিমানের দাম ঠিক কতো। এখনো পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমান বলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-২২ সুপার স্টিলথ র‍্যাপ্টার যুদ্ধবিমানকেই বোঝায়। ১৬২ মিলিয়ন ডলার খরচ করে তৈরি এই এফ-২২ র‍্যাপ্টার এখনো পর্যন্ত ব্যবহারের জন্য কোনো দেশের তুলে দেওয়া হয়নি ঠিকই তবে সূত্রের খবর লকহীড মার্টিন এভিয়েশন কর্পোরেশনের তৈরি ৮,০০০ কেজি পে-লোড ক্যাপাসিটি বিশিষ্ট আধুনিক প্রযুক্তির এই যুদ্ধ বিমানের প্রতি ঘন্টায় অপারেটিং কস্ট ছুঁয়ে যাবে প্রায় ৫৫,০০০ ডলার। দামে খুব একটা পিছিয়ে নেই মার্কিন জয়েন্ট স্টাইক এফ-৩৫এ লাইটনিং-২ স্টিলথ, এফ-৩৫সি এবং এফ-৩৫বি ও। আন্তর্জাতিক বাজারে এই তিন যুদ্ধবিমান এর গড় বিক্রয় মূল্য যথাক্রমে  ৯০ মিলিয়ন ডলার,১১৫ মিলিয়ন ডলার এবং ১০৫ মিলিয়ন ডলার। এ তো গেল শুধু বিক্রয় মূল্য। এছাড়াও এফ-৩৫ সিরিজের ৮,১০০ কেজি পে লোড ক্ষমতা বিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি ঘন্টায় খরচ পড়ে আনুমানিক ৩৬,০০০ ডলার। বিশ্বের অপর এক শক্তিশালী যুদ্ধবিমান ১০,৪০০ কেজি পে লোড ক্ষমতা বিশিষ্ট জয়েন্ট স্টাইক এফ-১৫ ঈগলের বিক্রয় মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে যেমন ১০০ মিলিয়ন ডলার, তেমন প্রতি ঘন্টায় রক্ষণাবেক্ষণের খরচ পরে প্রায় ২২-২৪ হাজার ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপর এক শক্তিশালী যুদ্ধবিমান এফ-১৮ সুপার হর্নেটের বিক্রয়মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ৭০-৭৫ মিলিয়ন ডলার। ৮০০০ কেজি পে লোড ক্যাপাসিটি সম্পন্ন এই যুদ্ধবিমান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রত্যেক ঘন্টায় খরচ হয় প্রায় ৯,০০০ ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি যুদ্ধবিমানের দাম তো জানা হলো । এবার আসুন একটু জেনে নেওয়া যাক রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক এসইউ-৫৭ স্টিলথ যুদ্ধ বিমানের কথা। আন্তর্জাতিক বাজারে এই শক্তিশালী যুদ্ধবিমানের বিক্রয় মূল্য প্রায় ৬৫-৭০ মিলিয়ন ডলার। ৯০০০ কেজি পে লোড ক্যাপাসিটি বিশিষ্ট অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমানে র প্রতি ঘন্টায় মেনটেনেন্স কস্ট প্রায় ২০,০০০ ডলার। রাশিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান যুদ্ধবিমানগুলির মধ্যে অন্যতম হলো এসইউ-৩৫এস এডভান্স। ৮,০০০ কেজি পে লোড সম্পন্ন এই যুদ্ধবিমানের আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রয়মূল্য ৭০-১০০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রতি ঘন্টায় মেনটেনেন্স কস্ট প্রায় ২৪ থেকে ২৬ হাজার ডলার। ৮,০০০ কেজি পে লোড বিশিষ্ট রাশিয়ার অপর এক যুদ্ধবিমান হলো এসইউ-৩০ সিরিজের যুদ্ধ বিমান। এই বিমানের আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রয় মূল্য ৬৫ মিলিয়ন ডলার এবং প্রত্যেক ঘন্টায় পরিচালনা খরচ ১৪-১৮ হাজার ডলার। এছাড়া রাশিয়ার বহু চর্চিত মিগ-৩৫ জেট ফাইটারের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য ৫৫ মিলিয়ন ডলার, পে লোড ক্যাপাসিটি ৬,৫০০ কেজি এবং প্রতি ঘন্টায় পরিচালনা খরচ ৭,৭০০ ডলার। রাশিয়ার তৈরি আরেক বিশেষ যুদ্ধবিমান হলো এসইউ-৩৪। ১০,০০০ কেজি পে লোড বিশিষ্ট গ্রাউণ্ড এ্যাটাক সুবিধা সম্পন্ন এই যুদ্ধবিমানের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য ৬০ মিলিয়ন ডলার, এবং প্রত্যেক ঘন্টায় রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা খরচ ১৫,০০০ ডলার। 

এবার একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক ফ্রান্সের যুদ্ধবিমানগুলোর আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে। রাশিয়া এবং আমেরিকার ছাড়া ফ্রান্সও যুদ্ধবিমান বিক্রয়ে বিশেষ পিছিয়ে নেই। ফ্রান্সের বিশ্ব বিখ্যাত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন  রাফাল যুদ্ধবিমানের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য ৮০-১০০ মিলিয়ন ডলার। ৯,৫০০ কেজি পে লোড সম্পন্ন এই বিমানের পার আওয়ার অপারেটিং এণ্ড মেইটেনেন্স কস্ট ১৮,০০০ ডলার। এতো গুলো যুদ্ধবিমানের কথা যখন উঠলোই তখন আকাশের রাজা নামে খ্যাত ইউরোফাইটারের কথা না বলাটা নেহাতই অন্যায়। ৯ হাজার কেজি পে লোড ক্যাপাসিটি সম্পন্ন এই বিমানের বিক্রয় মূল্য  ১২৫ মিলিয়ন ডলার এবং প্রত্যেক ঘন্টায় পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে খরচ ৯-১০ হাজার ডলার।

গত বেশ কয়েক বছরে যুদ্ধ বিমান তৈরিতে রেড ড্রাগন চীন বেশ কিছু দেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পে লোড ক্ষমতাধারী বিমানের কথা উঠলেও সবচেয়ে প্রথমে নাম উঠে আসে চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি জে-২০ স্টিলথ যুদ্ধ বিমানের। ১১,০০০ কেজি লোড ক্ষমতা বিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমানের উৎপাদন খরচ আনুমানিক প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রত্যেক ঘন্টায় পরিচালনার খরচ প্রায় ২২-২৪ হাজার ডলার। তাছাড়া চীনের জে-১১ যুদ্ধ বিমানও হালফিলে আন্তর্জাতিক সামরিক বাজারে বেশ হৈচৈ ফেলেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এর ক্রয় মূল্য ৪০ মিলিয়ন ডলার, পে লোড ক্ষমতা ৮,০০০ কেজি এবং প্রত্যেক ঘন্টায় পরিচালনা এবং মেনটেনেন্স খরচ ৯,০০০ ডলার। এছাড়া চীনের ক্যারিয়ার বেসড যুদ্ধবিমান জে-১৫ জেট ফাইটারের আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রয়মূল্য ৫৫ মিলিয়ন ডলার। এই বিমানের পে লোড ক্ষমতা ৮,০০০ কেজি এবং প্রত্যেক ঘন্টাই পরিচালনা এবং দেখভালের খরচ প্রায় ১০,০০০ ডলার।তবে কথা যদি ওঠে সিঙ্গেল ইঞ্জিন যুদ্ধ বিমান নিয়ে তবে তাতে সেরার সেরা হলো একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধ বিমান। জানলে অবাক হবেন এই মুহুর্তে বিশ্বের মোট ৩০টি দেশের বিমান বাহিনীতে সার্ভিস রয়েছে এমন যুদ্ধবিমানগুলির তালিকা যদি তৈরি করা হয় তবে তাতে দেখা যাবে  প্রায় ২,৬০০টি যুদ্ধবিমান ই এফ-১৬। রেকর্ড সৃষ্টি করা এই এফ-১৬ ব্লক-৭০/৭২ এর আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য ৬৫ মিলিয়ন ডলার।  ৭,৭০০ কেজি পে লোড ক্ষমতা বিশিষ্ট এই বিমানের প্রত্যেক ঘন্টাই অপারেটিং এণ্ড মেইটেনেন্স কস্ট ৭,০০০ ডলার। তাছাড়া শান্তিপ্রিয় দেশ জাপানের এফ-২ যুদ্ধ বিমানেরও সামরিক বাজারে রয়েছে বেশ কদর। ৮০০০ লো পেড ক্যাপাসিটি বিশিষ্ট এই যুদ্ধ বিমানের আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রয়মূল্য ১২০ মিলিয়ন ডলার এবং এর মেরামতি খরচ ৯,০০০ ডলার। এবার আসা যাক ইউরোপীয় দেশ সুইডেনের কথায়। এই দেশে তৈরি সাব গ্রীপেন-ই এডভান্স যুদ্ধ বিমানের বিক্রয়মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে ৫০ মিলিয়ন ডলার।  ৫,৩০০ কেজি পে লোড ক্ষমতা বিশিষ্ট এই বিমানের প্রতি ঘন্টাই পরিচালনা এবং মেইটেনেন্স খরচ ৪,৭০০ ডলার। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সুইডেনের নিজস্ব ডিসাইন ব্যবহার করে এই যুদ্ধবিমানগুলি তৈরি করা হলেও এর ইঞ্জিন, রেডার এবং এভিয়নিক্সসহ প্রায় ৮০% পর্যন্ত যন্ত্রাংশই কিন্তু আমদানি করা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, যুক্তরাজ্য, জার্মানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে।

অনেকটা এই একই গল্প ভারতের যুদ্ধবিমান তেজসেরও। একেবারে নিজস্ব দেশীয় ডিসাইন এ তৈরি করা হলেও ভারতের নতুন এই যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন, রেডার এবং এভিয়নিক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ ৫৫ শতাংশ যন্ত্রাংশই  আমদানি করা হই অন্যান্য দেশ থেকে। ৫,৭০০ কেজি পে লোড ক্ষমতা বিশিষ্ট  তেজাস জেট ফাইটারের আন্তর্জাতিক বিক্রয়মূল্য আনুমানিক ৪০ মিলিয়ন ডলার এবং মেইটেনেন্স কস্ট আনুমানিক ৬,৫০০ ডলার। অপরদিকে চীন এবং পাকিস্তানের যৌথভাবে এক যুদ্ধবিমান তৈরি করে ফেলেছে। জেএফ-১৭ থাণ্ডার লাইট নামক এই যুদ্ধবিমানের অধিকাংশ প্রযুক্তি চীনের এবং ইঞ্জিন রাশিয়ার কিমভ আরডি-৩৩/৯৩। ৫.৫০০ কেজি পে লোড বিশিষ্ট এই জেএফ-১৭ থাণ্ডার লাইট যুদ্ধবিমানের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ৩০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রত্যেক ঘন্টায় অপারেটিং কস্ট প্রায় ৫,৫০০ ডলার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *