ডিফেন্স

মুজাহিদদের সাথে ভারতীয় প্রশাসনের যে সরাসরি কোনো ঝামেলা নেই, তা পূর্বে তালিবান স্বয়ং স্বীকার করেছে

নিউজ ডেস্কঃ   দীর্ঘ বহু বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমী দেশগুলির সমর্থনে আফগানিস্তানে তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছে। কিন্তু সেই অধ্যায় এবার শেষের পথে। আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শোনা যাচ্ছে এই পুরো প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়ে হবে ২০২১ এর মধ্যেই।কিন্তু, সেই সঙ্গেই ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে মধ্য এশিয়ায় দেখা দিচ্ছে এক চরম অনিশ্চয়তা। স্টেটস এবং ইউনাইটেড নেশন আফগানিস্তান থেকে মিলিটারি বেস তুলে নিলে মধ্য এশিয়ায় তৈরি হবে পাওয়ার গ্যাপ। বহু চেষ্টাতেও আফগানিস্তান থেকে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে উৎখাত করা যায় নি ঠিক ই তবে মার্কিন সেনার ভয়ে তারা ছিল কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। এবার মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান ছাড়লে পুনরায় ব্যাপক মাত্রায় ঘটবে মুজাহিদ উত্থান। হয়তো মধ্য প্রাচ্যের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে এখানেও। মধ্য থেকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় রেডিক্যাল ইসলামিক চিন্তা ধারা বৃদ্ধি পেলে, এই উগ্রবাদের মাশুল গুনতে হবে ভারতের মতো দেশকেও। দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ, জঙ্গি হামলা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তো দেখা দেবেই সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যেমন গতি হারাবে তেমনই অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ভারতের কাছে আমেরিকার আফগানিস্তান থেকে এই সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা এক স্ট্র্যাটেজিক ডিলেমা। সঠিক কূটনৈতিক চাল না চাললে অদূর ভবিষ্যতে সেই ভুলের মাশুল দিতে হবে ভারতকে।

মুজাহিদদের সাথে ভারতীয় প্রশাসনের যে সরাসরি কোনো ঝামেলা নেই, তা পূর্বে তালিবান স্বয়ং স্বীকার করেছে। কিন্তু, বিগত কয়েক বছরে ভারত ও আফগানিস্তানের সক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটাই। ফলে ভবিষ্যতে তালিবান যে ভারতে কোনো ঝামেলা করবে না তার প্রতিশ্রুতি নেই একদম ই।

আফগানিস্তানের ইতিহাস কিন্তু সব সময় এরকম করুন ছিলো না। যেখানে ব্রিটিশরা ভারত জয় করতে পেরেছিল সেখানে আফগানিস্তানকে মুষ্টিময় করতে ব্যার্থ হয়েছিলো তারা। কিন্তু, ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় পাল্টায় চিত্র। সেই সময় আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব আটকাতে আমেরিকাই গোপনে অস্ত্র ও অর্থের মাধ্যমে তৈরি করেছিলো মুজাহিদদের। সেই সময় তাদের সাথে সংঘর্ষে সোভিয়েত পেরে ওঠেনি ঠিকই কিন্তু শীঘ্রই এই তালিবান হয়ে ওঠে আমেরিকার কাছে গলার কাঁটার মতো। পরবর্তীতে আমেরিকা এই ভুল শুধরাতে রাষ্ট্র সংঘের সাথে জোট বেঁধে মিলিটারি বেস বানিয়ে আফগানিস্তানে ডেমোক্রাসি ফিরিয়ে আনার জন্য সেনা ডেপুট করেছে ঠিকই কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। আফগানিস্তান থেকে জঙ্গিদের উৎখাত করতে না পেরে অবশেষে প্রায় দুই দশ পর আমেরিকার সৈন্য তুলে নেওয়ার কারণ মূলত একটি:-

দীর্ঘদিন ধরে বহু অর্থ খরচ করা হলেও এখনো আমেরিকা তালিবানকে নিশ্চিহ্ন করতে না পারায় সেদেশের জনগণের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। সঠিক প্রত্যুত্তরে দিতে না পারায় রাজনৈতিক দলের ওপরে ক্রমশ বাড়ছে চাপ। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভোট ব্যাংকেও। অপরদিকে আফগানিস্তানে তালিবানের সাথে লড়াইয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে অনেকটাই। ফলে, আমেরিকা এই সৈন্য পালনের খরচ ও অতিরিক্ত ঝামেলা এবার কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, গত ৭৫ বছর ধরে মধ্য প্রাচ্য এর দেশগুলি বারংবার রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন যুদ্ধে। প্রতিনিয়ত এই অঞ্চলে প্রাণ হারায় অসংখ্য মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এই অশান্তির পেছনে কিন্তু আমেরিকার ভূমিকাও নেহাত কম নয়। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধের পরিস্থিতি পরোক্ষে আমেরিকার অর্থনীতিতে গতি আনে ফলে লাভ আমেরিকারই।  মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকা নিজের জিওপলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্সকে যেমন বজায় রাখছে তেমনই আর্মস ট্রেডিং এর মাধ্যমেও আয় করছে প্রচুর অর্থ।

বিশ্ব বাজারে তেলের দাম,ব্যালেন্স অফ পাওয়ার এমনকি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডেও প্রভাব ফেলে মধ্যপ্রাচ্যের এই যুদ্ধের পরিস্থিতি।

এহেন পরিস্থিতিতে, আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সৈন্য সরলেই আফগানিস্তানও যে মধ্যপ্রাচ্যের মতোই এক যুদ্ধের পটভূমি হয়ে উঠবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এক কথায় যা ঘটতে পারে তা অত্যন্ত ভয়ানক। আমেরিকার প্রত্যেক পদক্ষেপের ওপর রাশিয়ার ও নজর থাকবে যথেষ্ট। আমেরিকা পিছু হটলে মধ্যে এশিয়ায় ইসলামিক এক্সট্রিমিজম বাড়লে তা রাশিয়ার ও দুশ্চিন্তা বাড়াবে।

অপরদিকে এর ফলে ভারতের ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে আফগানিস্তান হয়ে সেন্ট্রাল এশিয়ায় বাণিজ্য করার স্বপ্ন একপ্রকার ধূলিস্যাত হয়ে গেলোই বলা চলে। বহু ক্ষেত্রে আফগানিস্তান ভারতকে সমর্থন করে যেমন তীব্র পাকিস্তান বিরোধী অবস্থান নিয়েছিলো তেমনই আফগানিস্তানের বন্ধু দেশ হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে মোদী সরকার ও না না পদক্ষেপ নিয়েছিলো। যার সবই এখন চরম অনিশ্চিয়তার মুখে। ভারত সরকার আফগানিস্তানকে সাহায্য করতে যে আফগান পার্লামেন্ট বানিয়েছিলো তার দফারফা তো হলোই সেই সঙ্গে সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশ গুলোতে তেল নিয়ে ONGC র মতো সংস্থা যে তেল বেস বানানোর প্ল্যানিং করছিল তার ও বিরাট ক্ষতি হলো। এর ফলে ভারত সরকারের ওভার্সিজ ফান্ডিং প্রায় জলে গেল বলে চলে। আফগানিস্তান এর পর নিজের ঘর কিভাবে সামলাবে তাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।

তবে এখনও ভারতের সামনে খোলা রয়েছে এক পথ। সমস্ত ক্ষতিকে স্বীকার করে নিয়ে ভারত এখনও নি:শব্দে আফগান সেনাকে অস্ত্র , প্রযুক্তিগত ও ইন্টেলিজেন্স এর সহায়তা দিয়ে যেতে পারে। ঠিক যেমন বেলুচিস্তানের ইনসার্জেন্ট এ ভারত করেছিলো ।ভবিষ্যতে আফগানিস্তানে ঠিক কি হবে তা অনিশ্চিত হলেও এই মুহূর্তে ভারতের ভূমিকা আফগান প্রশাসনের কাছে যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ  তা অনস্বীকার্য।  আশা করা হচ্ছে ভারত নিজের স্বার্থ বজায় রেখে ঠাণ্ডা মাথায় ঠিক ই আফগানিস্তানকে ও সাধ্য সামর্থ্য অনুযায়ী যথা সম্ভব সাহায্য করে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *