ডিফেন্স

ভারতের হাতে এ্যাসল্ট হেলিকপ্টার বা ‘উড়ন্ত ট্যাংক’। জানুন বিস্তারিত

নিজস্ব সংবাদদাতা:কাশ্মীরকে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে যুদ্ধের এক টান টান উত্তেজনা। প্রায়ই পাকিস্তানের তরফ থেকে দেখা যায় সেনা বাহিনীর অগ্রশন। এরকমই এক অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে পেয়েছে মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানী বোয়িং এর তৈরি ‘উড়ন্ত ট্যাংক’ নামে খ্যাত অত্যাধুনিক আক্রমণাত্নক এ্যাসল্ট হেলিকপ্টার এএইচ-৬৪ই এ্যাপাচে গার্ডিয়ান । ভারতের অর্ডার করা ২৪টি এ্যাপাচে রয়েছে বর্তমানে হাতে।

কোনো সাধারণ এ্যাসল্ট হেলিকপ্টার নয় এটি। আক্রমণাত্নক এই এ্যাপাচে হেলিকপ্টার উড়তে পারে ঘন্টায় ২৮৪ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে। এর আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এতে সজ্জিত থাকা বিধ্বংসী ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র। লেসার নিয়ন্ত্রিত এই ক্ষেপণাস্ত্রটি নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এছাড়াও অ্যাপাচে তে রয়েছে এক ৭০ মিলিমিটার রকেট ৩০ কিলোমিটার কামান ও।

আপ্যাচে ক্রয় করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকার সাথে আলোচনা চলছিল ভারতের। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে  বারাক ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ভারতকে ২২০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ২২টি এইচ-৬৪ই এ্যাপাচে এ্যাসল্ট হেলিকপ্টার ও ১৫টি চিনুক সিএইচ-৪৭ হেভি লিফ্ট হেলিকপ্টার ক্রয়ের অনুমোদন দেন তিনি।সেই সময় হওয়া চুক্তিতে ভবিষ্যতে আরও ১১টি এইচ-৬৪ এ্যাপাচে ও ৭টি চিনুক কেনার আগাম অনুমোদনও দিয়ে রাখা হয়েছিলো ভারতকে।

সামরিক সূত্রের খবর ভারতের এএসি (আর্মি এভিয়েশন কোর) এর ৩টি স্কোয়াড্রনে মোট  ৩৯টি এ্যাপাচে সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ্যাপাচেগুলি পাকিস্তান সীমান্তের কাছে পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়েছে বলেই ভারতীয় সামরিক সূত্রে জানা গেছে।  এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখ্য পাকিস্তানও ভারতের মতো আমেরিকার কাছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাতারের সহযোগী দেশ হিসেবে বহুবার এ্যাপাচে হেলিকপ্টার সরবরাহের আবেদন জানিয়েছিল। তবে, মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানের সাথে চুক্তিতে দিতে অনীহা প্রকাশ করায় তাদের কাছে এ্যাপাচে হেলিকপ্টার না থাকলেও আছে খানিক কম আধুনিক মার্কিন এইচ-১এস কোবরা আক্রমণাত্নক হেলিকপ্টার। সামরিক পোর্টাল ‘ডিপ্লোমেট’ এ সাংবাদিক ফ্রেঞ্জ স্টিফেন গ্যাডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে এ্যাপাচের প্রথম চালান ৪টি এইচ-৬৪ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভারতে পৌঁছে গেছে। এ্যাপাচে গুলি রাশিয়ায় নির্মিত এএন-১২৪ ‘কনডোর’ স্ট্র্যাটেজিক এয়ারলিফ্টার বিমানে পরিবহন করে দিল্লীর গাজিয়াবাদের হিন্দন এয়ার ফোর্স স্টেশনে পৌঁছানো হয়েছিল।

পাক সেনার মোকাবিলায় দেশের অস্ত্রভাণ্ডার উন্নত করতে সর্বদাই তৎপর ভারত। এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকা থেকে ক্রয় করা এই অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার সেনার শক্তি বেশ কয়েকগুণ বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। বিশ্বের ধ্বংসাত্মক এবং আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টারগুলোর মধ্যে অন্যতম অ্যাপাচে হেলিকপ্টারের মূল বিশেষত্ব হলো, এক সঙ্গে বিভিন্ন মিশনে একসাথে ব্যবহার করা যেতে পারে এদের। ফলে, অ্যাপাচের অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তি ও মনোবল বেশ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিল। আরো বেশ কিছু তথ্য সামনে এসেছে। ভারতীয় বায়ুসেনার প্রয়েোজন অনুযায়ী এই হেলিকপ্টারের গঠনে বেশ কিছু রদবদল ঘটানো হয়েছে। 

পাক সেনার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মোকাবিলাই  স্থলসেনা ও বায়ুসেনাকে সাহায্য করতে এই ২৪টি অ্যাপাচে খুবই রুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের মতে, ‘এএইচ ৬৪ই’ অ্যাপাচে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত বহুমুখী মারণক্ষমতা সম্পন্ন যুদ্ধযান হওয়াতেই ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’ আক্ষা টি পেয়েছে। পাকিস্তান থেকে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও এই অ্যাপাচে কপ্টারই যে পাকিস্তানের কাছে জুজু হয়ে দাঁড়িয়েছে তা মনে করছে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *