চার গুন শক্তি থাকা সত্ত্বেও ফিনল্যান্ড দখল করতে কেন ব্যর্থ হয়েছিল রাশিয়া জানেন?
নিউজ ডেস্কঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা সকলে জানলেও এর মধ্যেও ঘটেছিল একাধিক যুদ্ধ যা সেভাবে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ নেই ইতিহাসের পাতায়। কারন বাকি যুদ্ধ গুলিতে যে ক্ষতি হয়েছিল তা প্রধান শক্তিধর রাষ্ট্র গুলি স্বীকার করতে রাজি হয়নি।বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক কথাই সেভাবে সামনে আসেনি, বিশেষ করে তাদের পরাজয়ের কথা।
সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ফিনল্যান্ডের যুদ্ধের কথা অনেকেরই অজানা। কারন এই যুদ্ধে বিরাটভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু দিকে অর্থাৎ ১৯৩৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসক জোসেফ স্টালিনের ইচ্ছা হয় ফিনল্যান্ড আক্রমন করা। আর হটাত ই সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে বসে ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তবে এই হটাত আক্রমনের বিরুদ্ধে জবাব দিতে মোটেও প্রস্তুত ছিলনা এই শান্তি প্রিয় দেশটি।
ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন বেশ ভালোভাবেই যুদ্ধের ময়দানে নেমেছিল, তারা হাজার হাজার সামরিক অস্ত্র, যুদ্ধের ট্যাঙ্ক, আর্টিলারি সহ ৪,৬৫,০০০ স্থলসেনা এবং ৩৮০০ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছিল ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
আর সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়তে সেভাবে প্রস্তুত ছিলনা ফিনল্যান্ড এবং সামরিক শক্তিতে তারা যথেষ্ট পিছিয়ে ছিল। তারা মাত্র ৩২ টি ব্যাটেল ট্যাঙ্ক এবং ১১৪ টি যুদ্ধবিমান নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নামে।আসলে হটাত আক্রমণ করাতে সেভাবে প্রস্তুত ছিলনা ফিনল্যান্ড আর সেই কারনে সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ডের এক বিরাট অংশ দখল করে নিয়েছিল।
তবে খুব শীঘ্রই ফিনল্যান্ড তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়েছিল। তাদের সেনাবাহিনী মাত্র ৬৫০০০ সেনা নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নামে এবং তাদের বেসামরিক ২ লক্ষের কাছাকাছি স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে এক বিরাট প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে ফিনিশরা।আর এই প্রতিরোধের জবাব দিতে মোটেও প্রস্তুত ছিলনা সোভিয়েত ইউনিয়ন। আসলে স্ক্যান্ডিনেভীয়ান অঞ্চলে যুদ্ধের কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় বিরাট মূল্য দিতে হয়েছিল রাশিয়াকে। অল সময়ের আক্রমনে সোভিয়েত স্টালিন বাহিনীর প্রায় ১,৬৭,৯৭৬ জন সেনা নিহত কিংবা নিখোঁজ হয় এবং আহত হয় আরো ২,০৭,৫৩৮ সেনা ও অফিসার। অপরদিকে ফিনল্যান্ড মাত্র ২৫ হাজার সেনার মৃত্যু হয় এবং ৪৪ হাজার সেনা আহত হন। পাশাপাশি ফিনল্যান্ডের ৩০ টি ব্যাটেল ট্যাঙ্ক এবং ৬০ টি যুদ্ধবিমান ধংস হয়েছিল। তবে তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের ১১০০ ট্যাঙ্ক এবং প্রচুর সামরিক যান তাদের দখলে নেয়। ৫০০ টির কাছাকাছি যুদ্ধবিমান ধংস হয়েছিল।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এই যে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়তে ফিনিশরা কাঁচের বোতলে পেট্রোল ভরে তা রাশিয়ার সেনাদের গাড়িতে এবং ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল যার ফলে সোভিয়েতের বিরাট সংখ্যক সেনার মৃত্যু হয়।সোভিয়েত কিছুটা হলেও কাপুরুষের মতো কাজ করেছিল সেইসময়। তারা আকাশ পথে হামলা চালিয়ে প্রচুর বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয়ের অনেক কারন ছিল বলে মনে করেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
প্রথমত এক বিরাট কারন ছিল – ৪৩ ডিগ্রীর হীমশিতল ঠাণ্ডা।
দ্বিতীয়ত ফিনিশদের স্কী বাহিনি এবং স্লো হাইড স্নাইপার ইউনিট। কারন দুই ইউনিট রীতিমত ঘুম কেড়ে নিয়েছিল সোভিয়েতের। বলা বাহুল্য যে সোভিয়েত-ফিনিশীয় যুদ্ধ ছিল সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি স্নাইপার ইউনিট ব্যবহারের প্রথম কোন সফল উদাহরণ।
তবে এই যুদ্ধে সিমো হায়া নামে এক সাধারন কৃষকের কথা উঠে আসে। কারন মাত্র ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির এই কৃষক অতি সাধারন মানের স্নাইপার নিয়ে কমপক্ষে ৬০০ জনকে মেরেছিলেন কিছু সুত্রের মতে ১০০০। এবং সবথেকে বড় ব্যাপার হল এই যে এই কৃষক যে স্নাইপার ব্যবহার করেছিলেন তাতে কোন লেন্স ছিলনা, তিনি চোখের আন্দাজেই স্নাইপার চালিয়ে গেছিলেন। শত্রুপক্ষের ত্রাসের কারন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। যদিও যুদ্ধের শেসে সোভিয়েতের হাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন।
এই ছোট্ট এবং শান্তিপ্রিয় দেশটির বিরুদ্ধে হামলা করা যে সোভিয়েতের উচিৎ হয়নি তা কার্যত হারে হারে বুঝতে পেরেছিলেন স্টলিন। ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে যুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে স্টালিনের অর্ডারে সোভিয়েত বাহিনীকে মস্কো ফিরে আসতে বলা হয়। ১৯৪০ সালের ১৩ মার্চ এক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ফিনল্যাণ্ডের ১১% ভূমি ছাড় প্রদানের মাধ্যমে এক অসম যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।