ডিফেন্স

৫০ বছর আবারও পুরনো যুদ্ধবিমান তৈরি করতে আগ্রহী আমেরিকা। হটাত এমন সিদ্ধান্ত কেন বাইডেন সরকারের?

নিউজ ডেস্কঃ পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কিছু যুদ্ধবিমান এসেছে যা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সার্ভিস দেওয়ার পর আজও আকাশে স্বমহিমায় দাদাগিরি করছে। বিশেষ করে যদি আমেরিকা এবং রাশিয়ার যুদ্ধবিমান গুলির দিকে তাকানো যায়। কারন ৭০ এর দশকে আসা যুদ্ধবিমান সারা পৃথিবীর ভীত নড়িয়ে দিয়েছিল।

২১ র দশকে এসেও আমেরিকা সহ পৃথিবীর বহু দেশের সার্ভিসে আছে আমেরিকার এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান।কমবেশি পৃথিবীর ৩০টি দেশের বায়ুসেনাতে এখনো পর্যন্ত নতুন এবং পুরনো যুদ্ধবিমান মিলিয়ে মোট ২,৭০০টি এর কাছাকাছি সিঙ্গেল ইঞ্জিনের এই এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন রয়েছে।

১৯৭৩ সালে প্রথম সার্ভিসে আসে এই যুদ্ধবিমান। এখনও পর্যন্ত মোট ৪,৫৮৮টি বিভিন্ন ব্লকে এবং সিরিজের এই যুদ্ধবিমান তৈরি হয়েছে। যুদ্ধবিমানটির নির্মাতা মার্কিন লকহীড মার্টিন কর্পোরেশন। তবে মার্কিন লাইসেন্স এবং টেকনোলোজি ট্র্যান্সফারের মাধ্যমে তুরস্ক, বেলজিয়াম, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং নেদারল্যাণ্ড এই ৫টি দেশ তাদের নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচারিং বা এসেমব্লীতে এই যুদ্ধবিমান তৈরি করে।

অন্যদিকে তুরস্ক তার নিজের টেকনোলোজি ব্যাবহার করে এফ-১৬ এর অধিকাংশ যন্ত্রাংশ তৈরি করছে, পাশাপাশি পুরনো এফ-১৬ এর আপগ্রেডেশনের কাজ তুরস্ক নিজেই করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে অনুমতি নিয়ে তুরস্ক মিশরের কাছে এর আগে মোট ৪০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রয় করেছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের পুরনো এফ-১৬ যুদ্ধবিমান গুলির একটা বড় অংশকে তুরস্কের নতুন টেকনোলোজি ইনস্টল এবং আপগ্রেড করে দিয়েছিল। তবে সবথেকে বড় সমস্যা হল এই যুদ্ধবিমান গুলির ইঞ্জিনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ এখনো পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করতে হয়। উল্লেখ্য আমেরিকার সাথে তুরস্কের সম্পর্ক এখন আদায় কাঁচকলায় কারন, রাশিয়ার থেকে এস ৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয় করার জন্য তুরস্ককে আমেরিকা এফ ৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করেনি, পাশাপাশি তুরস্ককে সবরকমের টেকনোলোজি থেকে শুরু করে যন্ত্রাংশ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তারা, আর সেই কারনে তুরস্কের বহরে থাকা বিমান গুলিকে আর সেভাবে আপগ্রেড বা খারাপ হয়ে গেলে ঠিক করতে পারছেনা, ফলে বিরাট সমস্যায় পরতে হয়েছে তাদের।

বর্তমানে আমেরিকার লকহীড মার্কিনের তৈরি চতুর্থ প্রজন্মের একেবারে সর্বশেষ সিরিজের এফ-১৬ ভাইপার ব্লক-৭০/৭২ এর সার্ভিস লাইফ টাইম ধরা হয়েছে ২০৭২ সাল পর্যন্ত। অর্থ্যাৎ এপিজি-৮৩ এইএসএ রেডার সহ এফ-১৬ ব্লক ৭২ জেট যুদ্ধবিমান গুলি আগামি ৪০ বছর আকাশে রাজত্ব করে বেড়াবে। পাশাপাশি ভারতের ভবিষ্যতের (এমএমআরসিএ ২ টেণ্ডার) জন্য ১১৪টি এই যুদ্ধবিমান অফার করেছে। আর সেই কারনে তারা এফ-১৬আইএন সুপার ভাইপার জেট যুদ্ধবিমান প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছিল। যদিও ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এখনো পর্যন্ত এফ-১৬ ক্রয়ের ব্যাপারে কোন রকম আগ্রহ প্রকাশ করেনি।

বর্তমান যুগের আধুনিক এফ-১৬ এর জন্য অন্যতম অস্ত্র হলো মার্কিন রেইথন কোম্পানির ১৬০ কিলোমিটার রেঞ্জের এআইএম-১২০সি/ডি (বিভিআর) অত্যাধুনিক মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার টু এয়ার মিসাইল। এছাড়াও এ আই এম-৯ সাইডউইণ্ডার ও এআইএম-৭ স্প্যারো। আবার ভূমিতে আক্রমন করার জন্য এজিএম-৮৮/১৫০ এয়ার টু সারফেস মিসাইল এবং এন্টিশীপ মিসাইল হিসেবে এজিএম-৮৪ হারপুন মিসাইল ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

তবে সার্ভিসে আসার পর এখনও পর্যন্ত মোট ৬৭২ টির কাছাকাছি  এই যুদ্ধবিমান বিভিন্ন কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট মিশনে ধ্বংস হয়েছে।

এখনও পর্যন্ত মোট ১৫টি ব্লকে এবং এ, বি, সি, ডি, ই এফ, আইএন সিরিজে ধাপে ধাপে আপগ্রেডেশন এবং নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আরো অত্যাধুনিক এফ-১৬ভি বা ব্লক-৭০/৭২ পর্যায়ে এসে পৌছেছে।

১৯৭৩ সালে এই যুদ্ধবিমানের বিরাট প্রডাকশান শুরু হয়েছিল যা আজ পর্যন্ত ১, ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩২, ৪০, ৪২, ৫০, ৫২, ৬০, ৭০ এবং ৭২ ব্লকে তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর কোন যুদ্ধবিমান এতগুলি ব্লকে এবং ভ্যারিয়েন্টে তৈরি হয়নি। পাশাপাশি ভেবে দেখুন ১৯৭০ সালে আসা একটি যুদ্ধবিমান ২০৭০ সাল পর্যন্ত থাকতে চলেছে। অর্থাৎ ১০০ বছরের উপর আকাশে রাজত্ত্ব। আগে কোন যুদ্ধবিমান এভাবে সার্ভিস দেওয়ার পাশাপাশি পরাক্রমতা দেখাতে সম্ভব হয়নি।

বিগত চার দশকে এফ-১৬ আনুমানিক মোট ৮৮টি শত্রু পক্ষের যুদ্ধবিমান, বোম্বার, হেলিকপ্টার এবং বিভিন্ন ধরণের এরিয়াল সিস্টেম সরাসরি এয়ার টু এয়ার মিসাইল হীটে ধ্বংস করার রেকর্ড রয়েছে।

এই বিশেষ যুদ্ধবিমানটি আমেরিকার বিভিন্ন মিশনে ব্যবহারের পাশাপাশি অনেক যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৯০-৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধ, ১৯৯৪-৯৫ সালে বসনিয়ায় সার্বিয়া সামরিক আগ্রাসন প্রতিরোধে, কসভো স্বাধীনতা যুদ্ধে, গ্রীক-তুর্কী সামরিক সংঘর্ষ ছাড়াও আফগানিস্থান, লিবিয়া, সিরিয়া, লেবানন এবং ইরাকের আকাশে ব্যাপকভাবে ব্যাবহার করা হয়েছে।

এছাড়াও ইসরায়েল প্রতি নিয়ত গাজা ও সিরিয়ায় সামরিক আগ্রাসন ও ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে হামলা করেছে এই যুদ্ধবিমান দ্বারা।

মিগ-২১, মিগ-২৩, মিগ-২৯, এফ-৪, এফ-১৬ এমআই-৮ ও এম আই-১৭ হেলিকপ্টার, এসইউ-২২, এসইউ-২৫, এসইউ-২৪, এটি-২৭ টুকনো, অরিয়ন-১০ ড্রোন ছাড়াও বেশকিছু ইউএই এণ্ড এরিয়্যাল সিস্টেমকে ধ্বংস করেছে আমেরিকার এই ভয়ংকর যুদ্ধবিমানটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *