ডিফেন্স

বিরাট দুর্ঘটনা ঘটেছিল ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের সাবমেরিনের মধ্যে। কিন্তু কেন?

নিউজ ডেস্কঃ অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে উন্নত দেশ গুলিতে। ইউরোপের একাধিক দেশ আমেরিকার কাছে এমন কিছু অস্ত্র রয়েছ যা ভবিষ্যতে নিজেদের মধ্যেই দুর্ঘটনা হতে পারে। বিমানি বাহিনী থেকে শুরু করে নৌবাহিনীর যুদ্ধাস্ত্র গুলি উন্নত হওয়ার কারনে ইতিমধ্যে একাধিকবার নিজেদের মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কেন এই দুর্ঘটনা?

এমনই এক বিরাট দুর্ঘটনা ঘটেছিল ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের সাবমেরিনের মধ্যে।

ফ্রান্সের কাছে একাধিক ঘাতক সাবমেরিন রয়েছে, যা পৃথিবীর অনেক দেশেরই ঘুম কেড়ে নিতে পারে যেকোনো সময়। লে ট্রায়মফ্যন্ট হল ফ্রান্সের পরমানু শক্তি চালিত ব্যালেস্টিক মিসাইল সাবমেরিন। ১৫০ মেগাওয়াটের পরমানু রিএ্যক্টর দ্বারা চালিত হয়ে থাকে বিশেষ এই সাবমেরিনটি। ১৩৮ মিটার লম্বা সাবমেরিনটি ৪০০ মিটার জলের নীচে গিয়ে হামলা করতে সক্ষম। শুধু তাই নয় ৪৬ কিমি/ঘণ্টার গতিবেগে ছুটতে পারে। ১২৬৪০ টনের বিশেষ এই সাবমেরিনটি ১৬টি ৬০০০ থেকে ৮০০০ কিমি পাল্লার এম-৪৫ আইসিবিএম ক্লাস এসএলবিএম সহ, এক্সোসিট এ্যন্টিশিপ ক্রুজ মিসাইল ও ৪টি ৫৩৩এমএম টর্পেডো বহনে করতে পারে।

এইচএনএস ভ্যনগার্ড। ১৬০০০ টনের ব্রিটেনের এই সাবমেরিনটি পরমানু শক্তি চালিত ব্যালেস্টিক সাবমেরিন। বিধ্বংসী এই সাবমেরিনটি ১৬ টি ৭৬৩০ কিমি পাল্লার এসএলবিএম বহনে সক্ষম, পাশাপাশি ৪৬কিমি/ঘণ্টার গতিবেগে এগিয়ে যেতে পারে।

এই দুটি ভয়ংকর সাবমেরিন ২০০৯ সালে ৩-৪ ফেব্রুয়ারি রাতে দুটি দেশের দুটি হাই ভ্যালু স্ট্রাটেজিক পয়েন্টে ধাক্কা খায় একে অপরের সাথে। বলা বাহুল্য যে দুটি সাবমেরিন ই একটিভ এবং প্যাসিভ সোনার সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে। আর দুই সাবমেরিনই ব্যালেস্টিক মিসাইল ব্যবহার করে থাকে। আর এই মিসাইল হল যেকোনো দেশের দ্বিতীয় স্ট্রাইকের সবথেকে বড় অস্ত্র ধরা হয়ে থাকে। ফ্রান্স এবং ব্রিটেন এই দুই দেশের ভূমি কম হওয়ার কারনে তারা ল্যান্ড বেসড বা ভূমি থেকে উৎক্ষেপণ করা যায় এমন কোন পরমানু মিসাইল রাখেনি। তারা সবকটি মিসাইল জলের তলায় অর্থাৎ সাবমেরিন গুলিতে ইন্সটল করে রেখেছে। তবে আমেরিকার মতো দেশ আবার সমুদ্রে ৭০ শতাংশ পরমানু মিসাইল রেখেছে।

সেই কারনে প্রয়োজন না পরলে সাবমেরিন গুলি একটিভ সোনার ব্যবহার করেনা। কারন তাদের এ্যক্টিভ সোনারের ফ্রিকুয়েন্সি শত্রুর প্যসিভ সোনারে ধরা পরবে। সেই কারনে শত্রুর উপস্থিতি জানতে গিয়ে নিজেদের বর্তমান স্থান শত্রুর কাছে তুলে ধরবে সাবমেরিনটি। তাই দুটি সাবমেরিন নিজেদের এ্যক্টিভ সোনার বন্ধ রেখে সেইসময় ভীষণ ধীর গতিতে চলাফেরা করছিল।

ফ্রান্সের লে ট্রায়মফ্যন্ট এবং ব্রিটেনের এইচএনএস ভ্যনগার্ড একে ওপরের সাথে ধাক্কা খেলে দুই দেশের নৌবাহিনীর মাথায় হাত পরে যায়। প্রথামাবস্থায় এই ঘটনাটি লোকাতে চেষ্টা করেছিল তারা। তবে সেটি জানাজানি হয়ে যায়। তবে কারও কোন ক্ষতি হয়নি। পাশাপাশি রেডিয়েশান লিক হওয়ারও কোনোরূপ প্রমাণ পাওয়া যায়নি।  তবে এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায় যে আসলে এই দুটি সাবমেরিনের স্টেল্থ বৈশিষ্ট থাকার কারনেই এই সমস্যা। দুটি সাবমেরিন এতটাই স্টেল্থ এবং ধীর গতিতে চলাফেরা করছিল যে দুই সাবমেরিনের সেন্সিটিভ প্যসিভ সোনারও একে অপরের উপস্থিতি বুঝতে পারে নি। ফলে দুটি সাবমেরিন একে অপরের সাথে ধাক্কা খায়। ভেবে দেখুন এই দুই দেশের সাবমেরিন গুলি কতোটা উন্নত। তবে অত্যাধুনিক ক্ষমতা থাকার ফলেও যে বিরাট বিপত্তি ঘটতে পারে তা বলাই বাহুল্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *