ডিফেন্স

দেশীয় যুদ্ধজাহাজের জন্য কেন দেশীয় প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান চাইছে নৌবাহিনী? আদৌ কি হাতে পাবে?

নিউজ ডেস্কঃ চিনে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়তে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে। বিশেষ করে চীনকে আটকাতে গেলে জল পথে আরও শক্তিশালি হতে হবে ভারতের নৌবাহিনীকে। আর সেই কারনে একাধিক যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভারতের দেশীয় প্রযুক্তির উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। ভারতের নৌসেনাতে কিছু মাসের মধ্যে যোগ দেবে আই এন এস ভিক্রান্ত। আর এই যুদ্ধজাহাজের জন্য ভারতীয় প্রযুক্তির উপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ এই যুদ্ধজাহাজটি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে, এবং এই যুদ্ধজাহাজে যাতে দেশীয় প্রযুক্তির তৈরি যুদ্ধবিমান রাখা যায় তার উপর বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে। সেই কারনে ভারতের TEDBF  প্রোজেক্ট নিয়ে এতো তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে। তবে এই TEDBF প্রোজেক্ট নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন আছে যে এটি কি?

TEDBF এর অর্থ হল Twin Engine Deck Based Fighter। ভারতবর্ষের দেশীয় সংস্থা HAL এটি ভারতের নৌবাহিনীর কথা মাথায় রেখে ডিসাইন করছে। তবে এই TEDBF কেন ভারতবর্ষের প্রয়োজন?

সোজা কথায় বলতে গেলে ভারতবর্ষের নৌবাহিনীর হাতে যুদ্ধবিমানের সংখ্যা খুব কম। বর্তমানে ভারতের নৌবাহিনী রাশিয়ার মিগ 29 k যুদ্ধবিমানটি ব্যবহার করছে, যা যেকোনো আবহাওয়ায় লড়তে সক্ষম। এই যুদ্ধবিমান যে ভারতের নৌসেনার এক সম্পত্তি তা আর নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে এই যুদ্ধবিমানের সময় ফুরিয়ে আসছে, কিছু মাস আগেই এই বিমান দুর্ঘটনায় কম্যান্ডার নিসান সিং কে হারিয়েছে ভারতবর্ষ। এখনও পর্যন্ত ৩ টি এই যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে অর্থাৎ আর ৪২ টি হাতে রয়েছে ভারতের নৌবাহিনীর।

বর্তমানে ভারতের নৌবাহিনীর হাতে আই এন এস ভিক্রমাদিত্য রয়েছে, তবে কিছুদিনের মধ্যে দেশীয় প্রযুক্তির যুদ্ধজাহাজ আই এন এস ভিক্রান্ত আসতে চলেছে। আর সেখানেই হল সবথেকে বড় প্রশ্ন যে এই কয়টি যুদ্ধবিমান দিয়ে কিভাবে দুটি যুদ্ধজাহাজে মোতায়েন করা যাবে। কারন দুটি যুদ্ধজাহাজের জন্য চার স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন। তবে সাধারন সময় অর্থাৎ শান্তিকালীন অবস্থায় একটি রণতরীর জন্য এক স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন হয়, কিন্তু যুদ্ধকালীন অবস্থায় ৩৬ টি বিমানের প্রয়োজন হয়ে পরে।

অর্থাৎ সেইদিক থেকে বিচার করতে গেলে ভারতের এই মুহূর্তে ৭২ টি যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন রয়েছে, দুটি রণতরীতে মোতায়েন করার জন্য। বর্তমানে ভারতের হাতে ৪২ টি মিগ ২৯ কে ভার্সন রয়েছে, সেক্ষেত্রে এই বিমান গুলিকে দুটি রণতরীতে রাখা যেতেই পারে।

তবে এখানে প্রশ্ন হল সেইসময় কতগুলি যুদ্ধবিমান হাতে পাওয়া যাবে, অর্থাৎ ৪২ টি যুদ্ধবিমান সার্ভিসে থাকলে কত গুলি যুদ্ধবিমান মিশনে যেতে সক্ষম হয়? কারন একটি যুদ্ধবিমান একবার মিশনে যাওয়ার পর বা উড্ডয়নের পর তাকে মেরামত করার দরকার হয়। আর এমন যেকোনো যুদ্ধবিমানের জন্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ ভারতের যুদ্ধজাহাজের জন্য ৪২ টি যুদ্ধবিমান থাকলেও ৪২ টিকে মিশনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে পরেনা।

সোজা কথায় বোঝাতে গেলে ধরুন ভারতের হাতে ৩৬ টি রাফালে আছে সেক্ষেত্রে ভারত ২৭ টি রাফালেকে যেকোনো সময় মিশনে নিয়ে যাতে পারে যদিও রাফালের Availability Ratio Rate 75%। তবে মিগ ২৯ এর ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট কম এর ক্ষেত্রে তা ৬০ শতাংশ বা অনেকের মতে ৫০ শতাংশ।

অর্থাৎ যদি ৬০ শতাংশ বিমানকে ও অপারেশানে পাঠানো সম্ভব হয় তাহলে ৪২ টির মধ্যে মাত্র ২৫-২৬ টি যুদ্ধবিমানকে সর্বদা মিশনে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ দুটি যুদ্ধজাহাজের মধ্যে যদি ভাগ করে দেওয়া হয় তাহলে ২৩ টি করে যুদ্ধবিমান মিশনে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

অতয়েব হিসাব করলে দেখা যাবে যে ভারতবর্ষের কাছে যুদ্ধকালীন অবস্থা তো দূরের কথা শান্তিকালীন অবস্থাতেও দুটি যুদ্ধজাহাজের জন্য পর্যাপ্ত বিমান নেই। আর এই ঘাটতি পূরণ করার জন্যই এই TEDBF প্রোজেক্ট। পাশাপাশি পৃথিবীর বহু দেশ পঞ্চম এবং ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করে ফেলেছে ইতিমধ্যে আর সেই কারনে অত্যাধুনিক অগ্রিম চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান দরকার নৌবাহিনীর জন্য সেই কারনেও এই প্রোজেক্ট শুরু করা হয়েছে। যাতে নৌবাহিনীর চাহিদা পূরণ হয়।

চীনের বিরুদ্ধে ভারত মহাসাগরে নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক টেকনোলোজির দরকার, শুধু তাই নয় আত্মনির্ভর ভারত এবং সামরিক জিনিস পত্র যাতে বিদেশের থেকে ক্রয় করার থেকে বেশি বিক্রয় করতে পারে সেই দিকেও নজর দেওয়া হবে এই প্রোজেক্টের মাধ্যমে।

অন্যদিকে ভারতের নৌবাহিনীর জন্য ৫০ টি যুদ্ধবিমান প্রয়োজন, এবং ভারতের তৃতীয় রণতরী আই এন এস ভিসাল এর উপর কাজ করা শুরু হলে ভারতের নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমানের আরও প্রয়োজন হয়ে পরবে, আর তা এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মত একাধিক সামরিক বিশেষজ্ঞদের।

DRDO এর Chairman Dr. G Satish Reddy জানিয়েছেন যে TEDBF এর প্রথম উড়ান আমরা 2026 এর মধ্যেই দেখতে পাবো, এবং এর প্রোডাকশন 2030-31 এর মধ্যেই শুরু হিয়ে যাবে। TEDBF কে 2032 শে ভারতীয় নেভিতে কমিশন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *