ডিফেন্স

নিয়ন্ত্রক হল গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে ন’টি ফোর্সের ভয়ে কাঁপে চীন, পাকিস্তান

নিউজ ডেস্কঃ সামরিক বিশ্বে ভারতবর্ষকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামরিক ক্ষমতা সম্পন্ন দেশ হিসাবে মানা হয়। পাশাপাশি ভারতের সেনাবাহিনীকে পৃথিবীর সবথেকে প্রফেশানল সেনাবাহিনী হিসাবে মানা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম ভূখণ্ডকে প্রতিনিয়ত শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করতে হয় ভারতের সেনাবাহিনীকে। বাইরের শত্রুরদের পাশাপাশি দেশের মাটিতে অভ্যন্তরীণ শত্রুদেরকেও সামলাতে হয় এই সেনাবাহিনীকে। প্রতিদিন দেশের মাটিকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে এই ভারতবর্ষের সেনাবাহিনী। এবং তার জন্য বিশেষ কিছু বাহিনী ও রয়েছে।

. স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স: ১৯৬২ সালের ইন্দো-চীন যুদ্ধের পর এই বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলেন এক বাঙালি। ভোলানাথ মল্লিক এই বাহিনী গড়েছিলেন, তবে এই বাঙালি সম্পর্কেও বেশি কিছু জানা যায়না। এই বাহিনী ইন্ডিয়ান আর্মির সব থেকে পুরানো এলিট ফোর্স। ভারতীয় সীমান্তে বিদেশি হানাদাররা প্রবেশ করলে তাদের মোকাবিলা করতে এই বিশেষ বাহিনী ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রক হল গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। এই বাহিনী প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি রিপোর্ট দেয়। এদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু না জানা গেলেও এই বাহিনীর শক্তিমত্তা সব সময় গোপনে সুরক্ষিত হয়।

. ঘাতক ফোর্স: এই বাহিনী অত্যন্ত ভয়ংকর এক বাহিনী। ঘাতক শব্দের অর্থ হল নিধনকারী। ইন্ডিয়ান আর্মির এই বাহিনী হল অত্যন্ত আক্রমণাত্মক এক বাহিনী। প্রতিটি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়নে এক প্লেটুন করে এই বিশেষ কম্যান্ডো বাহিনীকে মোতায়েন করে রাখা হয়। ইন্ডিয়ান আর্মির সব থেকে শক্তিশালী এবং ক্ষিপ্র জওয়ানদেরকেই এই বিশেষ বাহিনীতে রাখা হয়ে থাকে। ঘাতক বাহিনী যেকোনো সময় যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারে।

. মার্কোস: মার্কোস হল ভারতীয় মেরিন কমান্ডোদের এক বাহিনী। জলে-স্থলে জঙ্গি হামলা রুখতে ১৯৮৭ সালে এই বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল৷ সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে এই বিশেষ বাহিনীর ট্রেনিং হল বিশ্বের অন্যতম সেরা এবং কষ্টকর ট্রেনিং, যেখানে ৯০ শতাংশ আবেদনকারী বাদ পরে। এই বিশেষ বাহিনীর মানসিক এবং শারীরিক শক্তি বাড়িয়ে তোলার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। জঙ্গিরা এই বাহিনীকে “দাড়িওয়ালা ফৌজ”বলেও ডেকে থাকে। এর কারন হল এই বিশেষ বাহিনী ছদ্মবেশ নিয়ে সধারন এলাকাতে ঘোরাফেরা করে। বিশেষ করে দেশকে নিশ্চিত নিরাপত্তা দিতে মার্কোস কমান্ডোদের জুড়ি মেলা ভার।

. প্যারা কমান্ডো: ১৯৬৬ সালে গঠিত হয়েছিল এই বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলা হয়। এই বাহিনী  ইন্ডিয়ান আর্মির উচ্চ প্রশিক্ষিত প্যারাট্রুপার রেজিমেন্টের ফৌজি। এই ইউনিটকে সামরিক বিশ্বের সর্বচ্চ প্রশিক্ষিত কমান্ডো বাহিনী হিসাবে ধরা হয়। এদের বিশেষ কিছু বিশেষত্ব রয়েছে, এরা দ্রুত উড়ন্ত বিমান থেকে ঝাঁপিয়ে পরার পাশাপাশি চতুর্দিক থেকে শত্রুদের ঘিরে ফেলার মতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধে এই প্যারা-কম্যান্ডোরা ভারতবর্ষের জয়ের পিছনে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন।

. গরুড় কমান্ডো ফোর্স: ২০০৪ সালে তৈরি হয়েছিল গরুড় কমান্ডো ফোর্স। এটি নবতম একটি বাহিনী হলেও এর প্রশিক্ষণ অনেক দীর্ঘসময় ধরে হয়ে থাকে। ভারতীয় বায়ুসেনার বিশেষ বাহিনী এই গরুড় কম্যান্ডো। একজন বায়ুসেনাকে গরুড় বাহিনীতে যোগ দিতে হলে কমপক্ষে তিন বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। দেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বায়ুঘাঁটিগুলিকে নিরাপদ রাখতে এই বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়ে থাকে।

. কোবরা: COBRA। এই বাহিনীর পুরো অর্থ হল (Commando Battalion for Resolute Action)। এটি একটি সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের বিশেষ বাহিনী। দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গি কার্যকলাপ নিধনের জন্য এই বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলা হয়ে থাকে। বিশেষত মাওবাদী এবং নকশাল অধ্যুষিত এলাকায় এদের মোতায়েন করা হয়। গেরিলা যুদ্ধে এই বাহিনী বিশেষভাবে পারদর্শী। এই বিশেষ বাহিনী গঠিত হয় ২০০৮ সালে।  কোবরা কমান্ডোদের অস্ত্রশস্ত্র সহ খরচের জন্য ভালো পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়ে থাকে।

. ফোর্স ওয়ান: মুম্বইতে ২৬/১১ জঙ্গি হামলার পর এই বিশেষ বাহিনী তৈরি করা হয়। খুব অল্প সময়ে যে কোনও ধরনের জঙ্গি হামলা মোকাবেলা করতে পারে এই বিশেষ বাহিনী। আধুনিক অস্ত্রধারি এই বাহিনী জঙ্গি দলকে নিকেশ করতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগে।

. এনএসজি বা ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড: ভারতে জঙ্গি হামলা রুখতে সবসময় কাজ করে যাচ্ছে এন এস জি। দেশের ভিভিআইপিদের নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হয় এই বাহিনীকে। এরা সর্বদাই সজাগ এবং সতর্ক থাকে। প্রখর দৃষ্টিশক্তির পাশাপাশি চটজলদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার চূড়ান্ত ক্ষমতা রয়েছে এই বাহিনীর। প্রতি বছর বিভিন্ন বাহিনী থেকে মনোনীত করা হয়ে থাকে এই বিশেষ বাহিনীর জন্য।  ১০০ জন এই পদের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে শুরু বা আবেদন করলেও চূড়ান্তভাবে বাছাই হয় মাত্র ২০ শতাংশ। এই বাহিনী দুটি ভাগে থাকে স্পেশাল অ্যাকশন ফোর্স এবং স্পেশাল রেঞ্জার্স গ্রুপ।

. এসপিজি বা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ: দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ করে থাকে এই বাহিনী। এই বিশেষ বাহিনীর কাজ হল দেশের প্রাক্তন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে সুরক্ষা দেওয়া। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর উপর যাতে কোনোরকম জঙ্গি হামলা বা নাশকতামূলক কোনও হামলা না হয় সেইদিকে সর্বদা খেয়াল রাখতে হয় এই বাহিনীকে। এসপিজির ট্র্যাক রেকর্ডও দারুন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয় হিসাবে থাকে এই কম্যান্ডো। এরা একদম খালি হাতে যে কোনও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন৷ এই বাহিনীর প্রত্যেকে মার্শাল আর্টে বিশেষভাবে পারদর্শী হয়ে থাকে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *