ডিফেন্স

৮০ র দশকে আমেরিকার তৈরি যুদ্ধবিমান আমেরিকার থেকেও বিধ্বংসী তৈরি করেছিল ভারতের টেকনিশিয়ানরা

নিউজ ডেস্কঃ দেশের জন্য প্রান দিয়েছেন এমন মানুষ খুঁজতে গেলে হয়ত হাতে গনা যাবেনা। কিছু মানুষের কথা ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, আর কিছু মানুষের কথা জানা যায়না। তবে সেনাবাহিনীর কথা ভারতবর্ষের স্বার্থের কথা ভেবে অনেক মানুষই নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করে গেছেন।

১৯৪৭-৪৮ এর দিকে অর্থাৎ দেশ স্বাধীনের সময় পাকিস্তানের সাথে কাশ্মির নিয়ে এক বিরাট ঝামেলা শুরু হয়। কারন কাশ্মীরের রাজা হরি সিং চেয়েছিলেন যে কাশ্মিরকে আলাদা দেশ হিসাবে রাখবেন, তবে পাকিস্তানের বর্বরতা এবং একাধিকবার কাপুরুষের মতো কাজের জন্য শেসে ভারত সরকারের শরণাপন্ন হন, এবং কাশ্মীরকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। আর সেই সময় ভারতের সাথে এক বিরাট যুদ্ধ শুরু হয় পাকিস্তানের। সেইসময় ভারতের বায়ুসেনা চেয়েছিল যে পাকিস্তানের সেনার পজিসন বুঝে সেখানে বোমাবর্ষণ করতে। আর সেই জন্য প্রচুর পরিমানে বোম্বারের দরকার হয়ে পড়েছিল। সে কারনে আমেরিকার থেকে বি ২৫ এর বোম্বার ক্রয় করতে চেয়েছিল ভারত, তবে প্রচুর পরিমান দাম চাওয়ার কারনে পিছিয়ে আসতে হয় সেনাবাহিনীকে। ভারতের হাতে প্রচুর পরিমানে বি ২৪ এর মতো বোম্বার ছিল, তবে সেগুলিকে ওড়ানোর জন্য পাইলট ছিলনা, অর্থাৎ কোন অভিজ্ঞ পাইলট না থাকার কারনে অসুবিধায় পরতে হয়। আসলে এই বোম্বার গুলিকে নতুনভাবে ঠিক করে ব্যবহার করতে চেয়েছিল সেনা।  আর সেই কারনে এগুলিকে ১৫০০ মাইল পথ অতিক্রম করে নিয়ে গিয়ে তারপর ঠিক করতে হত, তবে এই ১৫০০ মাইল পথ বিমানটিকে ওড়ানোর মতো পাইলট ভারতবর্ষের হাতে ছিলনা। আর সেই সময় B-24 লিবারেটর সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ একজন পাইলট উড়িয়েছিলেন ম্যানুয়াল গাইডবুকের উপর নির্ভর করে। শুনতে অবাক লাগলেও প্রত্যেকটা B-24 এর ম্যানুয়াল গাইড আলাদা ধরনের। অর্থাৎ ৪২ টি B-24 এর ৪২ রকম ম্যানুয়াল গাইড ছিল। আর এই ম্যানুয়াল গাইড গুলিকে যখন কানপুরে খুঁজে পাওয়া গেছিল একটাও ঠিকমতো অবস্থায় ছিলনা।  কিছু কিছু পাতা সেখানে ছিল না। অর্থাৎ অসম্পূর্ণ ম্যানুয়াল গাইড ছিল। অর্থাৎ ফ্লাইটের প্রত্যেকটা স্টেজ ফ্লাইটেই পড়তে পড়তে চালাতে হত। তবে সবঠিক থাকলেও শেষে কোন কোপাইলট পাওয়া গেল না, কেউই নিজের জীবন বাজি রাখতে চাইছিলেন না। শেষ পর্যন্ত দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে প্রথম ফ্লাইটে কোপাইলট হিসাবে জিমির স্ত্রী তার সাথে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন।

জিমি ফ্লাইট চালাতেন এবং তার স্ত্রী তাকে ম্যানুয়াল গাইড বই দেখে নির্দেশ দিতেন। তিনি যে ফ্লাইট একবার করেছিলেন তা কিন্তু নয়। মোট ৪২ টা B-24 তিনি উড্ডয়ন করেছিলেন। অর্থাত একটা B-24 বেঙ্গালুরু তে পৌছে দিয়েই অন্য বিমানে কানপুর চলে এসে আবার অন্য একটা বিমান নিয়ে যেতেন। একবার এমন হয়েছিল যে বিমানে আগুনও লেগে লেগেছিল। তবে তিনি সেটাকে নিরাপদে বেঙ্গালুরু নিয়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন। শেষে ভারত সরকার তাকে মোটা অর্থ পুরস্কার দিতে চেয়েচিলেন,  তিনি জানিয়েছিলেন যে এই টাকা তার লাগবে না, তিনি দেশের জন্য এই কাজ করেছেন।

হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা জিমি এবং তার ভাই রুস্তম ছোট থেকেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতেন। আর সেই কারনে তাদের বাবা তাদের কে একটা আস্ত বিমান গিফট করেছিলেন, যাতে করে তারা মুম্বাই যাতায়াত করতেন। কিন্তু দুর্ঘটনা বসত টাটানগরে এক দুর্ঘটনায় রুস্তমের মৃত্যু হয়। তারপর জিমি ডেকান এয়ারওয়েজে DC-3 চালাতেন, পরে হ্যালে যোগদান করেছিলেন।

১৯৮৮ সালে মহান মানুষটির মৃত্যু হয়। তবে হ্যাল এই বিমানগুলো এতটাই আপগ্রেড করেছিল যে আমেরিকার পাইলটরা পরে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে এগুলো অরিজিনাল B-24 এর থেকেও ভাল ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *