পরমাণুর থেকেও অনেকবেশি শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোম্ব। ভারতবর্ষের হাতে এই তিন ধরনের বিধ্বংসী বোম্ব রয়েছে
নিউজ ডেস্কঃ বর্তমানে ভারতবর্ষ পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র। তবে পরমাণু শক্তিধর হিসাবে নিজেকে প্রমান করতে ভারতবর্ষকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। তবে শুধু পরমাণু শক্তি নয় ভারতবর্ষ হাইড্রোজেন বোম্বের মতো শক্তিশালি অস্ত্র ও নিজেদের অস্ত্র সম্ভারে রেখেছে।
হাইড্রোজেন বম্ব বা থার্মো নিউক্লিয়ার অস্ত্র হল সাধারণ পারমাণবিক বোমা থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং মারাত্মক ভয়ংকর হয়ে থাকে। সাধারণ পারমাণবিক বোমা কাজ করে ফিশন প্রকৃয়ায়। ফিশন কথার অর্থ হল বিভাজন প্রক্রিয়া। এই প্রকৃয়ায় একটি ভারী পরমানুকে দ্রুত গতির একটি নিউট্রন দিয়ে আঘাত করে তাকে বিভাজিত করে এবং শক্তি উৎপন্ন করা হয় ।
অপরদিকে হাইড্রোজেন বম্ব কাজ করে ফিউশন প্রকৃয়ায় , ফিউশন শব্দের অর্থ হল গলন। অর্থাৎ, দুটি হালকা ভরের ডিউটেরিয়াম বা ট্রিটিয়াম (হাইড্রোজেনের আইসোটোপ) পরমানুর দ্রুত গতিতে মিথস্ক্রিয়ার ফলে তুলনামুলক একটি ভারী পরমানু (হিলিয়াম) ও বিপুল পরিমানে শক্তি উৎপন্ন হয়, একে ফিউশন বিক্রিয়া বলা হয়। আমাদের অতি পরিচিত সূর্য এর উৎকৃষ্ট উদাহরন, যেখানে অনবরত ডিউটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম থেকে হিলিয়াম ও শক্তি উৎপন্ন হয়ে থাকে। এই ফিউশন বিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে যে অস্ত্র উৎপন্ন করা হয় থাকে বলে একে বলা হয় থার্মোনিউক্লিয়ার বম্ব, যা হাইড্রোজেন বম্ব(H-Bomb) , আর এই হাইড্রোজেন বম্ব , প্রচলিত পারমানবিক বম্ব থেকে অনেকবেশি শক্তিশালী ।
ভারতবর্ষের কাছে বর্তমানে তিন ধরনের পরমাণু অস্ত্র রয়েছে –
১. থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়েপন ।
২. ফিউশন বুস্টেড ফিশন বম্ব ( এতে ওয়েপন গ্রেড এবং রিয়াকটর গ্রেড প্লুটোনিয়াম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৩. ফিশন প্লুটোনিয়াম বম্ব ( লো ইয়েল্ড এবং হাই ইয়েল্ড )
ভারতের প্রথম পরমাণু পরীক্ষা যা অপারেশন স্মাইলিং বুদ্ধ নামে পরিচিত হয়েছিল। এটি ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ১৮ মে , ১৯৭৪ সালে সংগঠিত হয় এবং ভারত পৃথিবীর ষষ্ঠ পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসাবে নিজেকে তুলে ধরে।
ভারতবর্ষের পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়ার যাত্রা
১৯৬২ : চীনের সাথে যুদ্ধে ভারত ৪০০০ এর উপর সৈন্য হারায়।
১৯৬৪ : চীনের প্রথম পরমাণু বোম্ব পরীক্ষার পর পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী বলেন – ” অ্যাটম বম্বের জবাব অ্যাটম বম্ব ই হওয়া উচিত !”
১৯৭৪ : ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ভারত পরমাণু শক্তিধর হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করে ।
১৯৭৪ : এই সময় থেকে রাজিব গান্ধী এবং পরে ভিপি সিং ভারতের টপ সিক্রেট পরমাণু শক্তির আরো উন্নতি ঘটাতে লাগলেন গোপনে।
১৯৯৫ : নরশিমা রাও এর সময়ে ভারত হাইড্রোজেন বম্বের দোড় গড়ায় পৌছে যায়। তবে আমেরিকান CIA তাদের স্পাই স্যাটেলাইট দ্বারা ভারতের এই গতিবিধি ধরে ফেলে,এবং আমেরিকা ভারতকে আন্তর্জাতিক অবরোধের হুমকি দেয় ।
১৯৯৬ : আমেরিকান গোয়েন্দা এজেন্সী গুলি ভারতের পারমাণবিক কার্যক্রমের প্রমান হাতে নাতে সংগ্রহ করে ,এবং ভারতকে আন্তর্জাতিক অবরোধের দিকে ঠেলে দিতে শুরু করে ।
১৯৯৬-১৯৯৮ : অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উথ্বান এবং আমেরিকার রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে হাইড্রোজেন বোম্ব তৈরীর নির্দেশ ।
২০ মার্চ , ১৯৯৮ : বাজপেয়ী গোপনে তৎকালীন DRDO চীফ ড: এপিজে আব্দুল কালাম ,অ্যাটোমিক এনার্জী চিফ ড: আর চিদম্বরম , BARC প্রধান ড: অনিল কাকোডকার , NSA ব্রজেশ মিশ্র , গৃহমন্ত্রী এল কে আডবানীর সাথে দিল্লীর সাউথ ব্লকে মিটিং করেন।
৮ এপ্রিল , ১৯৯৮ : দ্বিতীয় বারের মতো সেকেন্ড মিটিং এর পর বাজপেয়ী পরমাণু পরীক্ষার অর্ডার দেন।
২৭ এপ্রিল,১৯৯৮ : টেস্টের ডেট পিছিয়ে দেওয়া হয় ড: চিদম্বরমের মেয়ের বিয়ের জন্য। এটা করার কারন ছিল ,যাতে কেও সন্দেহ না করে বিয়েতে তার অনুপস্থিতি নিয়ে ।
৭ মে,১৯৯৮ : BARC থেকে সমস্ত সরঞ্জাম বিমানে করে জয়সালমীর এয়ারপোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সেনার ত্রাকে করে টেস্ট রেঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয় ।
১১-১৩ মে , ১৯৯৮ : মোট পাচবার থার্মোনিউক্লিয়ার যুদ্ধাস্ত্রের পরীক্ষা হয় ।
এভাবেই ভারতবর্ষ পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্রের মালিক হয় আমেরিকার CIA এর নাকের ডগায় । DRDO এর বিজ্ঞানিরা ক্যাল্কুলেট করতেন CIA এর স্যাটেলাইট কখন ভারতের ওপর দিয়ে যাবে , এবং ঐ সময় সমস্ত ইঞ্জিনিয়াররা টেস্টিং রেঞ্জে তাদের কাজ বন্ধ করে রাখত ,প্রায় সমস্ত কাজ হত রাতের বেলায়। টেস্ট রেঞ্জে সেমা কম বিজ্ঞানী বেশি থাকত, এবং তারা সর্বদা সেনার ড্রেসে থাকত ,যাতে স্যাটেলাইটট থেকে দেখে ব্যাপার গুলি আর্মির ক্রিয়াকলাপের বেশি কিছু না মনে হয়। ড: এপিজে কালামের ছদ্মনাম ছিল মেজর জেনারেল পৃথ্বীরাজ । ভারতের সফল থার্মোনিউক্লিয়ার পরীক্ষার পর ,এটি ভারত জনসম্মুখে আনার পর CIA তাদের গোয়েন্দাগীরিরব্যর্থতা স্বীকার করে নেয় অফিসিয়ালি। পরবর্তীতে CIA ডিরেক্টর জর্জ টেনেট ১৯৯৬-২০০৪।