বাঙালির দুর্গাপূজা মানেই ভুড়িভোজ। দুর্গোৎসবে কিছু জনপ্রিয় রেস্তরাঁগুলি পুজোর-বিশেষ মেনু
বাঙালির সর্বপ্রিয় উৎসব দুর্গাপূজা দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। তার মানে, বলা বাহুল্য, আমাদের উত্তেজনার মাত্রা কিন্তু ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি জটিল হওয়ার কারণে এবারের পুজোর আমেজ একটু অন্য ধরণের হবে। তাই করোনা মোকাবিলাকে প্রাধান্য দিয়ে, সমস্ত নিরাপত্তার মান বজায় রেখে, ও প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা প্রয়োগ করে, উৎসবমত্ত বাঙালিরা তাদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি পুরোদমে উদযাপন করতে প্রস্তুত হয়ে রয়েছে।
দুর্গাপূজা মানে আড্ডা, ভুরিভোজ, এবং প্যান্ডেলে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা। ভুরিভোজের প্রসঙ্গে বলতে হয় এবার দুর্গোৎসবে কিছু জনপ্রিয় রেস্তরাঁগুলি পুজো-বিশেষ মেনু নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। সেগুলি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
The Lords and Barons:
কলকাতার এই জনপ্রিয় গ্যাস্ট্রো লাউঞ্জটি পুজোর মধ্যেও আপনাকে ভিক্টোরীয় যুগে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। লর্ডস অ্যান্ড ব্যারনস তার নাম অনুসারে একটি পুজো-বিশেষ মেনু প্রস্তুত করেছে যা আপনাকে একদম একজন ‘লর্ডের’ মতো খাতির করবে। এদের দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ থালিগুলি অবশ্যই চেখে দেখা উচিত।
মজাদার প্রাতঃরাশ নামক একটি বিশেষ বাঙালি থালি আপনার সামনে ভিন্ন ধরণের খাবারের বিকল্প পরিবেশন করে, যার মধ্যে থেকে আপনি আপনার প্রিয় খাবারটি বেছে নিতে পারবেন। এগুলি হল – ছোলার ডালের সাথে ঢাকাই পরোটা, নারকেল দিয়ে ছোলার ডালের সাথে ফুলকো লুচি, কড়াইশুঁটি কচুরির সাথে আলুর দম, এবং আলু-ফুলকোপির তরকারি ও বেগুন ভাজার সাথে বাঙালি পোরোটা। দাম ১৪৫ টাকা থেকে ১৯৯ টাকা অবধি।
এদের স্বাদে-আহ্লাদে থালিগুলো জিহ্বায় জল এনে দেয়। স্টার্টার, মূল কোর্স এবং ডেজার্ট – তিনটে কোর্সই সুস্বাদু বাঙালি খাবারে ভরিয়ে দেয়। কোন স্টার্টারের সাথে ড্রিঙ্ক লাগলে, গল্পে স্বাদে টুকটাক আপনি ট্রাই করতে পারেন। মেনুতে ডিমের ডেভিল, চিজ ও কারি পাতার চাটনি সহ কবিরাজি ফিশ ফ্রাই, ও ধনে পাতার চিকেন সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে।
কখন: ১৭ অক্টোবর – ৩১ অক্টোবর
সময়: সকাল ১2.00 টা – রাত ১2:00
মূল্য: ১৪৫ – ৪৪৯ টাকা (কর ব্যতীত)
Ekdalia Cocina:
দক্ষিণ কলকাতার এক সরু গলিতে অবস্থিত, একডালিয়া কচিনা একটি আরামপ্রদ রেঁস্তোরা যেটি গ্লোবাল কুইসিনে পারদর্শী। এই দুর্গাপূজায় এরা একটি অভিনব ভাবনা নিয়ে হাজির হচ্ছে যা খাদ্যরসিকদের খুব উত্তেজিত করে তুলবে। “এবারবাঙালিরপুজোয়সাহেবিখাওয়া” বলে একটি কন্টিনেন্টাল বুফে এরা খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে চলেছে।
স্যুপ, ভেজ/নন-ভেজ স্টার্টার থেকে শুরু করে পিজ্জা, পাস্তা, ভাত, মেইন কোর্স, এবং ডেজার্ট, আমাদের মেনুতে ২১টি বিভিন্ন ধরণের আইটেম রয়েছে। বলা বাহুল্য যে আপনার পছন্দের সবরকম খাবারই মোটমাট আমাদের মেনুতে পাবেন। বুফে আপনার পড়বে ৫৯৯ টাকা। ১২ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য বিশেষ ছাড় পাওয়া যাবে।
কখন: ২২ অক্টোবর – ২৬ অক্টোবর
সময়: সকাল ৮.৩০ টা – রাত ১০.০০
মূল্য: ৫৯৯ টাকা
Traffic Gastro-Pub:
রাজারহাটে অবস্থিত এই গ্যাস্ট্রো-পাবটি এদের চমৎকার হ্যাপি আওয়ার মেনু দিয়ে আমাদের মন জয় করে নিয়েছে। এই দুর্গাপূজায় আপনাকে ‘ট্র্যাফিকে’আটকে রাখার জন্য এরা কিছু সুস্বাদু খাবারের তালিকা চালু করছে।
অ্যালকোহল ও হুঁকার মুগ্ধকর মেনু ছাড়া, এরা কিছু দারুণ খাবারের আইটেম নিয়ে আসছে যেমন –
ঘোস্ট রাইডার – বিবিকিউ সস দিয়ে তৈরি বেকনে-মোড়ানো মুরগির স্ট্রিপ
ফেরারি কি সাফারি – ছোট ছোট চিংড়ির পিস গভীর ভাজা করে স্কিজওয়ান সসের সাথে পরিবেশন
খন্দনি বাবুমশাই – বিয়ার-ব্যাটারযুক্ত ফিশ ফ্রাইয়ের সাথে টারটার সস ও ফরাসি ফ্রাই
কখন: ১৯ অক্টোবর – ২৬ অক্টোবর
সময়: সকাল ১২.০০ টা – রাত ১০.৩০
মূল্য: ৩৭৫-৯৯৯ টাকা (কর ব্যতীত)
Ministry of Booze:
এই মন্ত্রণালয় মানুষের মন জয় করে সর্বদা ভোটে জয়ী হয়ে এসছে। একটা নিরিবিলি পরিবেশে অবস্থিত, এই রেস্টোপাবটি, নাম অনুসারে, তার বিস্তৃত অ্যালকোহল মেনু ও যুক্তিসঙ্গত মূল্যের জন্য বিখ্যাত। এটির অভ্যন্তর সাজসজ্জা আপনাকে ক্লাসিক ইংলিশ মুভিগুলি থেকে একটি পাব দৃশ্যের কথা মনে করিয়ে দেবে। এই পুজোয় এরা পার্সিয়া চিকেন টিক্কা কাবাব, পেনি আলফ্রেডো, কোরিয়ান ফ্রাইড চিকেন, এবং চিকেন ৬৫-এর মতো বিশেষ কয়েকটি সুস্বাদু ও পকেট-ফ্রেন্ডলি খাবার উপস্থাপন করছে।
কখন: ২২ অক্টোবর – ২৬ অক্টোবর
সময়: সকাল ১২.০০ টা – রাত ১২.০০
মূল্য: ২৬৫-৩২০ টাকা(কর ব্যতীত)
Aminia:
এই রেস্তোঁরা চেইনের কোনও পরিচিতির দরকার নেই। মটন বিরিয়ানি, পাসিন্দা কাবাব, ও চিকেন চাপের মতো বিশিষ্ট মোগলাই খাবারের জন্য বিখ্যাত, ১৯৪৭ সাল থেকে খাদ্যরসিকদের মন জয় করে আসছে আমিনিয়া যখন প্রথম ফুটনানী চেম্বারে তার সর্বাধিক জনপ্রিয় আউটলেটটি প্রতিষ্ঠা করে। কয়েক মাস আগে রেস্তোঁরাটি তার ৯১তম বার্ষিকী উদযাপন করে, এবং তপসিয়ায় ১০তম আউটলেটটি খোলে, যেটি একটি ডেলিভারি এবং টেক অ্যাওয়ে শাখা। আমিনিয়া সম্প্রতি তাদের মেনুতে নতুন কিছু আকর্ষণীয় কম্বো যোগ করেছে।
কখন: সারা বছর
সময়: সকাল ১১.০০টা – রাত ১১.০০টা
মূল্য: ২৪৯-৫৯৯ টাকা
Canteen Pub and Grub:
কলেজ জীবনের কথা করলে আমাদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে, খুব মিস করি। আপনি যাকেই জিজ্ঞেস করুণ না কেন সে আপনাকে বলবে যেই ব্যাপারটা আমরা সবচেয়ে বেশি মিস করি তা হল কলেজ ক্যান্টিন। ক্যান্টিন সংস্কৃতি কলেজ জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি কেবল একটি ক্যাফেটেরিয়া নয় যেখানে আমরা খেতে যাই। এটি সেই জায়গা যেখানে আমরা আমাদের বন্ধুদের সাথে। এটি সেই জায়গা যেখানে আমরা আমাদের বন্ধুদের সাথে অগণিত গল্প, সংবাদ, উপাখ্যান ও গসিপ বিনিময় করি, যেগুলি মূল্যবান স্মৃতি হয়ে ওঠে ও চিরতরে আমাদের নস্টালজিয়ার সমুদ্রে ডুবিয়ে রাখে।
চিন্তা করবেন না! আপনার স্মৃতিচারণার কথা ভেবে এই কল্পনাবিলাসী কলকাতা শহর একটি অভিনব উদ্যোগ আপনাকে উপহার দিতে চলেছে। স্বস্তিক নাগের মালিকানাধীন সল্ট লেকের সিটি সেন্টার ১ এর তৃতীয় তলায় অবস্থিত ক্যান্টিন পাব এবং গ্রাবে আপনি এক সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা উপলব্ধি করতে পারবেন। এই জায়গাটির বৈশিষ্ট্য হল এটি আমাদের কলেজের সমস্ত ক্যান্টিন স্মৃতি পুনরুত্থিত করতে সাহাজ্য করবে।
আপনাকে উত্সাহিত করতে, আনন্দ শহরটি আমাদের জন্য একটি নতুন দৃশ্য সঞ্চয় করেছে যেখানে আমরা আমাদের কলেজের সমস্ত ক্যান্টিন স্মৃতি পুনরুত্থিত করতে পারি। স্বস্তিক নাগের মালিকানাধীন সল্ট লেকের সিটি সেন্টার ১ এর তৃতীয় তলায় অবস্থিত ক্যান্টিন পাব এবং গ্রুব সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতার জন্য পৃষ্ঠপোষকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। আমাদের কলেজের ক্যান্টিনগুলির অনুরূপ, এই জায়গাটিতে স্ব-পরিবেশনের বিধান সহ (নিয়মিত পরিষেবার সাথে) একটি নব আবহ মিশ্রিত সেই কলেজের অনুভূতি সরবরাহ করে। তবে আমাদের নিয়মিত কলেজ ক্যান্টিনগুলির সাথে মূল পার্থক্যটি হল মাল্টি-কুইজিন খাবারগুলি সমন্বিত খাবারের কাউন্টারের সাথে এই পাবে একটি আড়ম্বরপূর্ণ বার কাউন্টারও রয়েছে।
এই পাবটির অভ্যন্তর সাজসজ্জা সমসাময়িক এবং একাধারে পরিশীলিত। পাবের শৈলীটি আধুনিক হলেও সেই সাবেকী আমলের চারুতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। ফুলের ওয়ালপেপার, ডিজাইনার কাঠের কাজ ও ফটো ফ্রেমের অ্যারে, এবং ৮০’র দশক অনুপ্রাণিত ফ্লোরিংয়ের কাজ, একটি মার্জিত রুচির প্রদর্শন দেয়। অন্যদিকে, ছোট ছোট টবে গাছপালার সারি, দেয়ালে গ্রাফিতি, পুনর্ব্যবহৃত রেলওয়ে স্লিপার কাঠের ফার্নিচার এবং নিয়ন সাইনের ব্যবহার একটা অন্য মাত্রা নিয়ে আসে। এই অভ্যন্তর নকশা ও সাজসজ্জা স্বয়ং মালিক স্বস্তিক নাগই পরিকল্পনা করেছেন।
ক্যান্টিন পাব এবং গ্রাব তাদের মিশ্রণ বিশেষজ্ঞের নির্দেশে তৈরি একটি উদ্ভাবনী ককটেল ও বিশ্বব্যাপী খাদ্য মেনু পরিবেশন করছে। তাদের ককটেল পরিসীমা আমাদের রাস্তার খাবারের দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং আপনাকে প্রত্যেক সিপে “হিন্দুস্তান কা স্বাদ” দেবে। আসুন তাদের “ক্যান্টিন ড্রিঙ্কস” মেনু থেকে কয়েকটি ককটেল নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ইমলি চাটকা – তেঁতুলের শরবত এবং টেকিলার একটি ঝাঁজাল মিশ্রণ। তার সাথে থাকে কোশার লবণ, গন্ধরাজ লেবু, এবং লঙ্কা।
কেসরিয়া – একটি ভদকা ভিত্তিক পানীয় দ্রব্য যেটি তাজা ক্রিম এবং কমলালেবুর পাল্প দিয়ে দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। আপনার কলেজের সময়ের ঠান্ডাইয়ের কথা মনে করিয়ে দেবে।
আম জনতা – একটি ভদকা ভিত্তিক সমাহার যা ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
এরা হলদি লাগাও রে নামক একটি কোভিড-১৯-এর বিশেষ ককটেল চালু করেছে, যার মধ্যে হলুদ, ভদকা, তুলসী পাতা, কমলালেবুর রস, এবং গন্ধরাজ লেবুর টুকরো রয়েছে। কেবল ককটেলই নয়, মেনুতে বিস্তৃত অ্যালকোহলও দেখতে পাওয়া যায়। ক্যান্টিন ইটস একটি সাধারণ “ক্যান্টিনের” পদ্ধতিতে খাবারের সরবরাহ করে।
প্রথমে মালিকের পছন্দ সম্পর্কে বলা যাক। সুশি প্রেমিক স্বস্তিক তার কলেজের ক্যান্টিনে এই ঐতিহ্যগত জাপানি ভাতের খাবারটি মিস করতো। তবে ওর ক্যান্টিনে সুস্বাদু চিলি অ্যাভোকাডো নিগ্রি পাওয়া যায় – এটি জাপানি লঙ্কা এবং শাকসব্জির সাথে সুশি এবং ওয়াসাবি, সয়া এবং আচারযুক্ত আদার সাথে পরিবেশন করা হয়।
শুধু জিহ্বায় জল আনা মেনু নয়, খাবারের নামগুলিও খুব বিনোদনমূলক। শারাবি ঝিঙ্গা, পিজা কষা, কেরালা প্রন কারি উইদ লেমন, মিষ্টি দই চিজকেক, এবং আরও অনেক অনুরূপ আইটেম রয়েছে মেনুতে।
সুতরাং, আর সময় নষ্ট করবেন না। কলেজের স্মৃতি সতেজ করতে আপনার গ্যাংয়ের সাথে ক্যান্টিন পাব এবং গ্রাবে চলে যান।
কখন: ১৯ অক্টোবর – ২৭ অক্টোবর
সময়: সকাল ১১.৩০ টা – রাত ১০.৩০
মূল্য: ৩২০-৫৬০ টাকা (কর ব্যতীত)