লাইফস্টাইল

করোনার কারনে এবার দুর্গাপূজার ভার্চুয়াল সংস্করণ

দুর্গাপূজার সাথে বাঙালির একটা নাড়ির সংযোগ রয়েছে। যোদ্ধা দেবী দুর্গার উপাসনার উৎসব খুব ধুমধাম করে বাঙালিরা পালন করে। দশ দিনের এই ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন ধরণের ক্রিয়াকলাপ এবং তার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে বাঙালির সত্ত্বা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সুতরাং, ভারতের পূর্বাঞ্চলে জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ দেবী দুর্গার সপরিবারে মর্তে আগমনের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে।

২০২০ সালটি আমাদের সব আশা, প্রত্যাশা, ও আকাঙ্ক্ষার ওপর পানি ফেলে দেয়। কোভিদ-১৯ মহামারীর প্রকোপে আমরা দিকবিদিক শুন্য হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অভিনব ভাইরাসের শিকার হয়েছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ধ্বসে পড়েছে। এই ধরনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে মানুষ একটু আশার আলো দেখার জন্য হাতড়াচ্ছে, কিন্তু চারিদিকে যেন ঘুটঘুটে অন্ধকার। এই গভীর তিমির যেন এখনও অজাতশ্মশ্রু, সবে পাকতে শুরু করেছে। সেখানে দুর্গাপূজার মতো উদযাপনগুলি আমাদের মনে আশ্বাস জাগাতে এবং আশাবাদী মনোভাবে রঞ্জিত করতে অনেকটাই সক্ষম হয়। এই অতিমারীর ঝড় কাটিয়ে ওঠার জন্য যথাযথ মানসিক শক্তি জোগায়।

কিন্তু একাধারে এটাও ধ্রুব সত্য যে এই আমোদ ও উল্লাসের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে একটি ভয়াবহ পূর্বলক্ষণের বার্তা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। নইলে মহামারী আরো মর্মান্তিক রূপ ধারণ করতে বাধ্য হবে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলি অনেকটাই এই সংক্রমণের হার রোধ করতে পারে, কিন্তু দুর্গাপূজাতে যে ধরণের ভিড় আমরা সাধারণত দেখতে পাই, তা বর্তমান পরিস্থিতির এক ভয়ানক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করছে। এই উৎসবের শেষ পাঁচ দিনে কলকাতা শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়, আশেপাশে অঞ্চল থেকে পিলপিল করে প্যান্ডেল হপার্সের দল ভিড় জমাতে থাকে। পা রাখার জায়গা থাকে না, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাই আমাদের একটি অভিনব সমাধানের প্রয়োজন যেখানে আমরা দুর্গাপূজা নিজেদের মতো করে উদযাপন করতে পারি এবং একই সাথে মহামারীর ক্ষয়ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি।

বিজ্ঞাপনী সংস্থা Planmyad একটি আধুনিক ধারণা নিয়ে এসেছে যা এই বছরের দুর্গাপূজা পালনে নিরাপত্তা এবং আনন্দ উভয়ই নিশ্চিত করবে। ePujo.in নামে একটি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে যা অনলাইন’এ প্যান্ডেলে জনগণের ভিড় বাড়াতে সাহায্য করবে। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি সবাই বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবে। তাই বাড়ি বসেই আপনি দুর্গোৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। এই অগ্রণী উদ্যোগ লক্ষ লক্ষ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে, সম্ভাব্যভাবে হাজার হাজার জীবন রক্ষা করবে। প্ল্যাটফর্মটি ১৯’এ অক্টোবর এ চালু হতে চলেছে।

ePujo আমাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধার আয়োজন করেছে। তার মধ্যে থাকছে প্রতিমাগুলি সহ ৮০’টির ওপর প্রশংসিত প্যান্ডেলগুলির 360-ডিগ্রি ভার্চুয়াল ভ্রমণ এবং পুরো সফরের অসংখ্য উচ্চগুণ ছবি ও ভিডিও। প্রদর্শন এ থাকবে বিশিষ্ট ও জনপ্রিয় পুজোগুলির চর্চা, যার মধ্যে বনেদি বাড়ির’ও কিছু পুজোও দেখানো হবে। অতএব, নিশ্চিত থাকুন যে আপনি এই ePujo’র মাধ্যমে একটি পয়সা খরচা না করে সেরা প্যান্ডেল ও প্রতিমাগুলির ভালো মতো দর্শন করতে পারবেন।


ePujo আপনাকে শেষ দিন পর্যন্ত পুজোর মেজাজে মাতিয়ে রাখার জন্য বিনোদনমূলক প্রচুর ইভেন্টের আয়োজন করেছে। প্রদর্শনীগুলি ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এক নিখুঁত মিশ্রণ। সেগুলি হচ্ছে –
• সিজির সাথে বঙ্গ র‌্যাপ ভিডিও
• সাবস্পেসের ধারা উপস্থাপিত ঢাকি এবং ডিজে যুগলবন্দি
• ব্রেক গুরুজ এবং সিকেএন নৃত্যদলের 360-ডিগ্রি নাচের পরিবেশন।
• প্রিয়ম ঘোষের স্ট্যান্ড আপ কমেডি শো
আমি আমার সমস্ত ভক্তদের দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। এই শারদীয় মরসুমে আমি সকলের কাছে আমি অনুরোধ করছি প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। এই দুর্গাপূজায় খুব খুব আনন্দ ও মজা করুন, কিন্তু নিরাপত্তা মেনে চলতে ভুলবেন না যেন।


আমি সবাইকে এই বছরের পুজো একটু অন্যরকম ভাবে কাটাতে অনুরোধ করছি। প্ল্যানমিডের অগ্রণী উদ্যোগ ই-পুজোর মাধ্যমে আপনি পুজোর আমেজ ও হই হুল্লোড় যেমন উপভোগ করতে পারবেন, একই সাথে নিজেকে এবং আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত ও নিরাপদও রাখতে পারবেন। এই ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পূজা উদযাপনের এক অভিনব অভিজ্ঞতায় নিজেকে মগ্ন করুন। আমি আমার সমস্ত ভক্তদের এবং চলচ্চিত্র জগতকেও এই উদ্ভাবনী ধারণাটি সমর্থন করার জন্য নিবেদন করছি। এই উদ্যোগটি লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচাতে সক্ষম হবে, এবং একই সাথে দুর্গাপূজার শারদীয় রুচি ও স্বাদ আপনার বাড়িতে নিয়ে আসবে। জানালেন অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী৷

উদ্যোক্তা, নিপুন কোচারের মতে, “আমাদের কাছে দুর্গাপূজা একটা আলাদা আবেগ। তাই এবারো উৎসবের আনন্দ নিশ্চয় উপভোগ করবো, তবে নিজের জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে। আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে মানুষের কথা ভেবেই আমরা এই অভিনব উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছি। এতে আমাদের নিরাপত্তা বজায় থাকবে এবং একই সাথে পুজোর দিনগুলিও চুটিয়ে হই হুল্লোড় ও আনন্দ করতে পারবো।


এগুলি ছাড়াও, ePujo প্রচুর প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে যেখানে পুরষ্কারও বিতরণ করা হবে। এ’বছরের সেরা দুর্গা প্রতিমা এবং প্যান্ডেলের পুরষ্কার রয়েছে যা জনগণের ভোটের মাধ্যমে বিচার করা হবে। Planmyad’এর এই অভূতপূর্ব উদ্যোগটির মাধ্যমে জনসাধারণকে দুর্গাপূজার সর্বোত্তম অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য শহরের অন্যতম ফটোগ্রাফারদের এবং ডিজাইনারদের কাজে নিযুক্ত করেছে। এরম একটি বিষণ্ণতার সময়ে Planmyad’এর এই সূচককে আমরা কুর্নিশ জানাই।

আরো জানতে লগইন করুন- www.epujo.in

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *