অফবিট

গান্ধার থেকে মদ্র দেশ। মহাভারতের উল্লেখিত রাজ্য গুলির বর্তমান নাম জানা আছে!

নিউজ ডেস্ক –   মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ গোটা বিশ্বে বিখ্যাত। কিভাবে সিংহাসনকে কেন্দ্র করে পঞ্চপান্ডবদের  সঙ্গে ধৃতরাষ্ট্রের সংঘর্ষ বেধেছিল সেটি অজানা নয় কারোর। তবে মহাভারতের যুগের সেই রাজ্যগুলো বর্তমানে ঠিক কী নামে পরিচিত তা জানতে ইচ্ছুক বহু পাঠক। সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। 

l) কুরুরাষ্ট্র – মহাভারতের যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ছিল কুরুরাষ্ট্র। মহাভারতে অধিকাংশ অধ্যায় সমাপ্ত হয়েছে এই রাজ্যে। বর্তমানে দিল্লী, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের কিছু অংশ সহ উত্তর প্রদেশের পশ্চিম অংশ নিয়ে কুরু রাষ্ট্র অবস্থিত। পূর্বে কুরুরাষ্ট্রের রাজধানী হস্তিনাপুর বর্তমান উত্তর প্রদেশের মীরাটের কাছেই অবস্থিত বলে  অনুমান বিশেষজ্ঞদের।  

ll) পাঞ্চাল প্রদেশ – কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরে অখন্ড পাঞ্চাল উত্তর এবং দক্ষিণ ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সেই সময় রাজধানী কাম্পিল্য নগরীর অন্তর্গত দক্ষিণ পাঞ্চাল শাসন করার সুযোগ পায় দ্রুপদ। অপরদিকে আহিছাত্রের রাজধানী উত্তর পাঞ্চালের রাজা হন দ্রোণ পুত্র অশ্বথামা। তৎকালীন কাম্পিল্য নগরী বর্তমান ফারুখাবাদ জেলার অংশবিশেষ। অন্যদিকে আহিছাত্র বর্তমান রামনগর জেলার অন্তর্গত। আর এই দুটি অংশই উত্তরপ্রদেশের অন্তর্গত। 

lll) গান্ধার – মহাভারতের যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গুলির মধ্যে অন্যতম হলো শকুনি মামার ভূমিকা। ধৃতরাষ্ট্র তথা শত পুত্রের মাতা গান্ধারী ছিলেন রাজকুমারী এবং গান্ধার ছিলেন এই রাজ্যের রাজা।  এই রাজ্যের অবস্থান ছিল রাজধানী তক্ষশীলায় বর্তমানে যেটি রাওয়ালপিন্ডি নামে পরিচিত। তৎকালীন পুরো গান্ধার বর্তমান পেশওয়ার প্রভিন্স, খাইবার পাখতুনখোয়ার দক্ষিণে এবং পাঞ্জাবের উত্তরে অবস্থিত।  তখন রাজ্যটি ছিল পূর্ব-পশ্চিমে বিরাজমান অন্যদিকে বর্তমান পাকিস্তানের রাজ্যগুলো উত্তর-দক্ষিণ বরাবর অবস্থান করছে। 

lv) সুরসেন রাজ্য – অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের মতে আসলে মহাভারত তৈরির পিছনে প্রধান ভূমিকা ছিল সৃষ্টিকর্তা শ্রীকৃষ্ণের। সকলের মন মোহনা সেই শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুরসেন রাজ্যে। যার রাজধানী মথুরা। উত্তরপ্রদেশের অন্তর্গত এই রাজ্যটি এখনো একই নামে বিরাজমান। 

v) মৎস্যদেশ – পঞ্চপান্ডবের অজ্ঞাতবাসের পূর্বে এই অঞ্চল ছিল ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। তবে রাজা বিরাটের আমলে এটি জনবসতিতে পরিণত হয়। সেই সময় পারিবারিক সংঘাতে অজ্ঞাতবাসে আসেন পঞ্চপান্ডব সহ দ্রোপদী। বর্তমানে সেই মৎস্যদেশ  জয়পুরের অতি সন্নিকটে ছিল। এর উত্তরের অংশ  দক্ষিণ হরিয়ানার অংশ। এর রাজধানী বিরাট নগরী বর্তমানে বিরাট হিসেবে পরিচিত।

vi) কুন্তিভোজ – মাতা কুন্তীর রাজ্য তথা কর্ণ, যুধিষ্ঠির ভীম ও অর্জুনের মামা বাড়ি কুন্তিভোজ রাজ্য বর্তমানে রাজস্থানে অবস্থিত বলে অনুমান করা হয়।  

vii) কাশী – মহাভারতের অন্যতম মুখ্য চরিত্র অম্বা অম্বিকা ,অম্বালিকা ছিলেন কাশির তিন রাজকুমারী। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের অন্তর্গত কাশীর রাজধানী কাশীপুর, যেটি বর্তমানে বারানসি নামে পরিচিত। গঙ্গা পাড়ে এই বারানসি স্বমহিমায় বিরাজমান। 

viii) অঙ্গ রাজ্য – সূর্যপুত্র কর্ণ ছিল অঙ্গ রাজ্যের রাজা। সেই সময় এই রাজ্যের রাজধানী ছিল চম্পাপুরী। যেটা বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম বিহার, ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছুটা অঞ্চলজুড়ে অবস্থিত। 

ix) মগধ – এই রাজ্য বর্তমানের বিহারের পাটনা, গয়া আর বাংলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল। রাজগৃহ ছিল মগধের রাজধানী। তারপর পাটলিপুত্র রাজধানী বানিয়ে গিয়েছিলো। রাজা বিম্বসার ছিলেন মগধের প্রথম ঐতিহাসিক রাজা। 

x) বিদর্ভ – মহাভারতের প্রধান চরিত্র শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী রুক্মিণী ছিলেন বিদর্ভের রাজকুমারী। সেই বিদর্ভ মহারাষ্ট্রের উত্তরপূর্ব নাগপুর ও অমরাবতী অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল। বর্তমান মধ্যপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার সাথে তৎকালীন বিদর্ভের সীমানা সংযোগ। 

xi) চেদি রাজ্য – রাজসূয় যজ্ঞে যুধিষ্ঠিরের বিজয় হলে পাণ্ডবদের রাজধানী ইন্দ্রপ্রস্থে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে শ্রীকৃষ্ণকে বিশেষ সম্মান দিতে গেলে চেদি রাজ্যের রাজা চেদিরাজ শিশুপালের তুচ্ছাত্মক বিরোধিতা করে শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শন চক্রে প্রাণ হারিয়েছিলেন। সেই চেদি রাজ্যের রাজধানী ছিল শুক্তিমতী। যেটি বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের বান্দার নিকটবর্তী একটি শহর। এছাড়াও এই রাজ্যের কিছু অংশ উত্তর প্রদেশ এবং কিছু অংশ মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত অবস্থিত।  

xii) মদ্র দেশ – সদ্য  রাজার কন্যা মাদ্রী  ছিলেন এই রাজ্যের রাজকুমারী। সেই সময় এই রাজ্যের রাজধানী ছিল সাগালা। তবে বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের শিয়ালকোট শহরে পরিণত হয়েছে। বর্তমান কাশ্মীরের পশ্চিম প্রান্ত থেকে রাজ্যটি পূর্ব-পশ্চিম বরাবর বিস্তৃত ছিল বলে অনুমান করা হয়। 

xiii) নিষাদ রাজ্য – নিষাদপুত্র একলব্যের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল নিষাদ রাজ্য। শ্রীকৃষ্ণের কাকা দেবশ্রবের পুত্র ছিলেন তিনি। পূর্বে নিষাদের অবস্থান ছিল দক্ষিণ পাঞ্চালের দক্ষিণ-পশ্চিমে। বর্তমান রাজেস্থানের অন্তর্ভুক্ত এই রাজ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *