পৃথিবীর সবথেকে ভয়ংকর ভুতুড়ে জাহাজ
নিউজ ডেস্কঃ ভূত আছে নাকি নেই তা নিয়ে একেক জনের একেক মত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই বিতর্ক চলে এসেছে । একদল মানুষ যেমন ভূতের উপস্থিতিকে ভ্রান্ত ধারণা বলে উড়িয়ে দেন, তেমনি আবার কেউ কেউ স্বচক্ষে অলৌকিক ঘটনা ঘটতে দেখেছেন বলে ও দাবি করেন। আসলে ভূত আছে কিনা এ নিয়ে তর্ক চলতে থাকলেও এমন অনেক ঘটনাই আমাদের চারপাশে ঘটে যার ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না কোনো। ফলে কিছু কিছু ঘটনাকে ভৌতিক বলেই ধরে নিতে হয়। তবে আজ কোনো ভুতুড়ে বাড়ি নয় বরং আপনাদের জানাবো কুইন মেরি নামক গভীর সমুদ্রে ভেসে চলা এক জাহাজের কথা যাকে ঘিরে শোনা যায় না না ভয়ঙ্কর ভৌতিক কাহিনী ।
বিলাসবহুল এই জাহাজটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর ভুতুড়ে জাহাজ গুলির মধ্যে একটি হিসাবে পরিচিত। এই জাহাজটির বয়স নেহাত কম নয় সেই ১৯৩৬ সাল থেকে জাহাজটি চলাচল শুরু করে সমুদ্রের বুকে। বৃহৎ ও আধুনিক এই জাহাজটি ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে দ্রুত জাহাজ হিসাবে পরিচিত। প্রধানত সুবিশাল অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগর দ্রুত পার করার কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছিল জাহাজটি। মাত্র পাঁচ দিনে সুবিশাল অ্যাটল্যান্টিক পাড়ি দিতে সক্ষম এই জাহাজ ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে বড় সমুদ্র রুটে সবচেয়ে বেশি বার চলাচলের জন্য খেতাব ও অর্জন করেছিল।
এমন একটি বিখ্যাত বিলাসবহুল জাহাজ ভূতুড়ে জাহাজে কি করে পরিণত হলো? তা নিয়ে প্রশ্ন অনেকেরই মনে। তবে,এটা কিন্তু হঠাৎ করে ভুতুড়ে জাহাজে পরিণত হয়নি বরং যাত্রা শুরুর প্রথম দিন থেকেই এ জাহাজে ঘটতে শুরু করেছিল অদ্ভুত বিভিন্ন কান্ড কারখানা।
যাত্রা শুরুর প্রথম দিন ই জাহাজের যাত্রীসহ অনেকেই নানা রহস্যময় ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বলে দাবি করেন কিন্তু প্রথমদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি কেউ সত্য বলে মেনে নেয়নি। জানা যায় এরপর থেকেই জাহাজে এই ধরনের অদ্ভুত ঘটনা ঘটার পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে।
প্রথম ঘটনা ঘটার কিছুদিনের মধ্যেই জাহাজের ইঞ্জিন রুমে কর্মরত ১৭ বছরের এক যুবক কুইন মেরিতে ঘটা ভয়ংকর কিছু ঘটনার বর্ণনা দেয়। সে জানায়, জাহাজের করিডরে এক অস্পষ্ট ছায়াকে অনেক বার সে বাঁশি বাজাতে দেখেছে। এছাড়াও আট থেকে ন বছরের একটি বালিকাকে ডেকের ওপর দিয়ে প্রায়ই ভেসে চলতেও নাকি দেখা যায়। শুধু সেই নয় , জাহাজের সুইমিংপুলে সময় কাটানোর সময় ও অনেক যাত্রী নাকি সাদা পোশাকধারী এক নারী ও আট থেকে ন বছরের এক মেয়েকে ডেকের ওপর দিয়ে ভেসে ভেসে যেতে দেখেছেন বলে জানান। একই ঘটনার এত প্রত্যক্ষদর্শী থাকার ফলে জাহাজের মধ্যে ঘটে এই সমস্ত ভৌতিক ঘটনা কে গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয় এবং ক্রমে চারিদিকে ভৌতিক বলে জাহাজটির নাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তবে ভৌতিক কর্মকান্ড শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয় ,জাহাজের কেবিন থেকে প্রায়ই রহস্যময় শব্দ ভেসে আসতে থকার কথা ও অনেকে জানান
কিন্তু কুইন ম্যারিতে ভুতের উপদ্রবের কারন কি?এই সমস্ত ভৌতিক উপদ্রব এর কারণ জানার জন্য চোখ রাখতে হবে ইতিহাসের পাতায় ।আসলে রহস্যময় জাহাজটি তৈরি হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা মাথায় রেখে সৈন্য জাহাজ হিসাবে ।জানা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ কিউরা কেরার সঙ্গে একবার কুইন ম্যারি ধাক্কা খায় এবং এর ফলে মারা যান কুইন ম্যারির প্রায় ৩০০ যাত্রি ।অনেকের মতে সেদিন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মৃত ব্যক্তিদের আত্মার হয় আবার ফিরে এসেছেন এই জাহাজে।
ক্রমাগত নানা ভৌতিক ঘটনা ঘটতে থাকার ফলে ১৯৬৭ সালে দ্য সিটি অফ লং বিচ নামক একটি প্রতিষ্ঠান কুইন মেরিকে কিনে নেয়। মনে করা হয়েছিল জাহাজটিকে যদি হোটেলে পরিণত করা হয় তবে ভৌতিক ঘটনাগুলি ঘটে বন্ধ হবে। কিন্তু, এতেও কাজের কাজ কিছুই হয় না বরং ভৌতিক কাণ্ডকারখানা আগের মতই ঘটতে থাকে। প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা এসব ভুতূরে ঘটনার কারনে বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত কুইন মেরি জাহাজটিকে ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।