অফবিট

দেবরাজ ইন্দ্রের পূজা করা হয়না। কেন জানেন?

ইন্দ্রদেব যাকে আমরা দেবতাদের রাজা বলি। যার জন্য ইন্দ্রদেবকে দেবরাজ ইন্দ্র বলা হয়।হিন্দুদের সমস্ত দেব-দেবীদের পূজা অর্চনা করা হয় এবং তাদের জন্য মন্দির তৈরি করা হয় কিন্তু দেবরাজ ইন্দ্র দেবতাদের রাজা হওয়া সত্বেও তার পুজো করা হয় না এমন কি কোনো মন্দিরও নেই। কিন্তু কেন দেবরাজ ইন্দ্রের পুজো করা হয় না এই প্রশ্ন সবার মনের মধেই উঠে। যার উত্তর বেশিরভাগ মানুষই জানেন।তাই এই প্রশ্নের উত্তরটি  পুরাণ থেকে জেনে নিন।

পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, পৌরাণিক কালে পৃথিবী লোকে গৌতম ঋষি নামক এক ঋষি বসবাস করতেন। তিনি খুবই জ্ঞানী এবং যোগী মানুষ ছিলেন।তিনি তার স্ত্রীর সাথে জঙ্গলের মধ্যে একটি কুঠিরে বসবাস করতেন। তার স্ত্রীর নাম  ছিল অহল্যা।অহল্যা একজন আদর্শ স্ত্রীর সাথে অপরূপ সুন্দরী ছিলেন।যেই অহল্যাকে দেখতো সেই তার সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে যেত।একটি দিনের ঘটনা অহল্যা কুঠিরে গৌতম মুনি সেবা করেছিলেন ওই সময় ইন্দ্রদেন সেখান থেকে যাচ্ছিলেন।কুঠিরের  মধ্যে অহল্যা দিকে ইন্দ্রদেবের চোখ চলে যায় তিনি দেখেই অহল্যার প্রেমে মোহিত হয়ে গেলেন ওই সময় তো ইন্দ্র কোনভাবেই সেখান থেকে চলে গেলেন কিন্তু স্বর্গলোকে এসে ইন্দ্রের মন অহল্যার জন্য চঞ্চল হয়ে যেতে লাগল তিনি ভাবলেন এত সুন্দর নারী কিভাবে পৃথিবী লোকের বসবাস করছে তিনি ভাবতে লাগলেন এমন কি করা যায় যাতে তার ওপর অহল্যা আকর্ষিত হয় শেষে তিনি ছলের সাহায্য নিলেন তিনি জানতে পারলেন যে গৌতম ঋষি প্রতিদিন সকালে ধ্যানের জন্য নিজের কুঠিরের   থেকে কিছুটা দূরে যান একদিন ঋষি কুঠির থেকে বাইরে চলে যাবার পরই ইন্দ্র তারই রূপ ধারণ করে অহল্যার কাছে এলেন। প্রথমে এটি দেখে অহল্যার একটু অবাক লাগল যে তার স্বামী এত তাড়াতাড়ি কিভাবে চলে এল কিন্তু সেই ইন্দ্রদেব রূপি গৌতম মুনিকে  কিছু জিজ্ঞাসা করল না কিছু সময় পর যখন বাস্তবে গৌতম ঋষি কুঠিরে এলেন তখন  তিনি অহল্যাকে এক অজানা পুরুষের সাথে দেখলেন গৌতম ঋষির বুঝতে সময় লাগল না যে এই ঋষি আসলে দেবরাজ ইন্দ্র এই দেখেই তিনি খুব রেগে গেলেন ক্রোধের বশে তিনি দেবরাজ ইন্দ্র কে অভিশাপ দিলেন যে মহিলার জন্য যোনির জন্য তোমার এত আসক্তি সেইরকমই 1000 যোনি তোমার সারা শরীরে বেরিয়ে যাবে এবং দেবতার রাজা হবার পরেও তোমার পুজো কেউ করবে না তিনি তাঁর পত্নী অহল্যাকেও পাথর হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দেন এরকম কথা শুনে ভয়ে দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর বাস্তবিক রূপের চলে আসেন এবং তিনি ঋষির পা ধরে বসে পড়লেন এই দেখে ঋষির  মন কিছুটা হালকা হলো এরপর তিনি ইন্দ্রের শরীর থেকে বের হওয়ার যোনিগুলিকে মানুষের চোখে পরিবর্তিত করে দিলেন কিন্তু এদিকে অহল্যা ও তার কাছে বারবার ক্ষমা চাইলেন আর বললেন এতে আমার কোন দোষ ছিল না কিন্তু তাও গৌতম মুনি তার সাজা কম করলেন না বরং বললেন তুমি পাথর হয়েই  এখানে থাকবে ক্রেতা যুগের যখন ভগবান বিষ্ণু রাম অবতারে  জন্ম নেবেন তখন তার পায়ের স্পর্শে তোমার মুক্তি লাভ হবে আর এটাই কারণ তখন থেকে মানুষ ইন্দ্রদেবের পূজা করা ছেড়ে দিয়েছিলেন।

আবার দ্বিতীয় কথা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণের অবতার এর পূর্বে বৃন্দাবনবাসী খুব ধুমধামের সাথে পূজা পাঠ করতেন কিন্তু যখন শ্রীকৃষ্ণ বড়ো হলেন তিনি দেখলেন বৃন্দাবনবাসী কেবলমাত্র ধুমধাম করে ইন্দ্র দেবের পুজো করছে তখন তিনি বৃন্দাবন বাসীদের বললেন 

ইন্দ্র পুজো বন্ধ করে গো মাতার পুজো করতে বলেন।এছাড়াও তিনি বৃন্দাবনবাসীদের গোবর্ধন পর্বত এর পুজো করতে বলেন। এসব কথা শুনে প্রথমে বৃন্দাবনবাসী বললেন যে ইন্দ্র দেবের পূজা না করে  তিনি ক্রুধ হবেন যারফলে এখানে বৃষ্টি হবে না তখন গো মাতাকে খেতেও দিতে পারব ।তখন কৃষ্ণ তাঁদের বলেন, ‘ভালো বৃষ্টি করানো ইন্দ্রের কাজ, তার জন্য তাঁর পুজো কেন করতে হবে? বরং পুজো করতে হলে গোবর্ধন পর্বতের পুজো করা উচিত কারণ এই পর্বত ফলমূল শাকসবজি দিয়ে  বাঁচিয়ে রেখেছে সবাইকে।

এরপর সকল বৃন্দাবনবাসী শ্রীকৃষ্ণের কথায় রাজি হলেন এরপর থেকে তারা ইন্দ্রদেবের বদলে গো এবং গোবর্ধন পর্বত এর পূজা করতে লাগলেন এদিকে যখন ইন্দ্রদেব এ কথা জানতে পারলেন তাঁর পূজা করা বৃন্দাবন বাসী ছেড়ে দিয়েছেন তখন তিনি প্রলয়কারী বাদলকে আদেশ দিলেন বৃন্দাবনে এত বৃষ্টি করো যাতে সকলবাসী ডুবে যায় যাতে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে তারা বাধ্য হয় ইন্দ্রের আজ্ঞা পেয়ে বাদল মুসুলধারী তান্ডব শুরু করলেন বৃন্দাবনে অনেক সময় পর্যন্ত যখন বৃষ্টি থামল না তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বত কে তার আঙ্গুলে ধারন করে তার নিচে বৃন্দাবন বাসীদের ডাকলেন গোবর্ধন পর্বত এর নিচে থাকা বাসীদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টিপাত এর কোনো প্রভাব পরল না এতে করে  ইন্দ্রের অভিমান চূর্ণ চূর্ণ হয়ে গেল পরে অবশ্য ইন্দ্রের সাথে শ্রী কৃষ্ণের যুদ্ধ হয়েছিল কিন্তু ইন্দ্র সেই যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন এরপর থেকেই ইন্দ্র পূজার বদলে গোবর্ধন পূজা করা হয় আর দর্শকবৃন্দ এটি তো আপনারা জানিনি মন্দির সেই দেবতারই বানানো হয় যার পুজো করা হয় তাই যখন দেবরাজ ইন্দ্রের পূজা কেউ করেনা তাই ভারতবর্ষে দেবরাজ ইন্দ্রের কোন মন্দির ও নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *