অফবিট

মিশরীয়রা সোনা এবং রুপো দিয়ে দাঁত বাঁধানো কেন হত? কি কারন রয়েছে এর পেছনে?

নিউজ ডেস্ক –  বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত হওয়ায় শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা নিমেশেই সমাধান হয়ে যায় চিকিৎসকের মাধ্যমে। কিন্তু আজ থেকে কয়েক হাজার যুগ আগে অর্থাৎ মিশরীয় সভ্যতায় দাঁতের ক্ষয় ক্ষতি হলে কিভাবে চিকিৎস করতো তখনকার মানুষ। সেই বিষয়েও দীর্ঘ গবেষণা করে বিশেষজ্ঞরা কিছু তথ্য উদ্ধার করেছেন। সেই তথ্য অনুযায়ী দেখা গিয়েছে মিশরীয়রা দাঁতের কোন সমস্যা হলে তার প্রাথমিক চিকিৎসা করত ভেষজ উপাদান দিয়ে এবং দাঁত সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেলে তার বদলে নতুন করে দাঁত বাঁধানো হতো সোনা ও রুপো দিয়ে। 

প্রত্নতত্ত্ববিদেরা নানান পৌরাণিক জিনিস খননকার্যের সময় মিশরে থেকে  কিছু শব দেহ  উদ্ধার করে তাদের ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছেন সেসময়কার অধিকাংশ মানুষের দাঁত খুব বাজেভাবে খয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি কিছু এমন মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে যাদের দাঁতের বদলে রয়েছে সোনা দিয়ে বাঁধানো এক নতুন দাঁত। তবে সেই সময়কার মানুষের দাঁত ক্ষয় ক্ষতির পেছনেও ছিল এক বিরাট কারণ। কার্যত সেই সময়কার যুক্ত হওয়ার কারণে তাদের খাদ্য তালিকা ছিল বেজায় নিম্নমানের। যার কারণে খাবারে কোন রকম প্রোটিন ভিটামিন খনিজ পদার্থ না থাকায় এবং তারা যেসব রুটি খায়  তাতে খাদ্যের গুণমান বেশি থাকার বদলে থাকতো ভুসি, কাঁকর ও পাথরের মত অজৈব পদার্থ। যার কারণে সেইসব দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার ফলে খুব দ্রুত খয়ে যেত দাঁত। তবে সেই চিকিৎসারও এক অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করতো তারা।

মিশরীয় চিকিৎসার নথিপত্র ঘেঁটে জানা গিয়েছে সেই সময় কোন ব্যক্তি দাঁতে পুঁজ হওয়া, মাড়ির সমস্যা, দাঁত  ভেঙে যাওয়া, মুখের ভিতর ঘা সৃষ্টি হওয়া, মাড়ি থেকে রক্ত পাত,পেরিওডন্টাল লিগামেন্টের প্রদাহ সহ একাধিক সমস্যার সমাধান ভেষজ পদ্ধতিতে করত সেই যুগের চিকিৎসকেরা।  যার একটিতে নড়বড়ে দাঁতের চিকিৎসায় ‘ফিলিং’ এর ব্যবহার দেখা যায়। এই ‘ফিলিং’ তৈরিতে ব্যবহার করা হতো বার্লি, মধু আর অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে। এরপর তা দিয়ে নড়ে যাওয়া দাঁতে ফিলিং দেওয়া হতো অথবা দাঁতটিকে তার সকেটের হাড়ের সঙ্গে আটকে স্থির করে দেওয়ার চেষ্টা করা হতো। শুধু তাই নয়, এরপর রোগীকে ব্যথা ও প্রদাহ কমার জন্যে, দাঁত ও মুখ সুস্থ রাখার জন্যে বিভিন্ন সিরাপ এবং মাউথওয়াশও ব্যবহার করতে হতো। পাশাপাশি  মধু, গিরিমাটি ও গমের চূর্ণের মিশ্রণ, জিরা, ফল ও ভেষজ উপাদানের মিশ্রণ, কিংবা শুধু কাপড়ের টুকরোকেও ফিলিং হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তবে বহু যুগ আগের ঘটনা হল শুধুমাত্র ভেষজ পদ্ধতি অবলম্বন সীমাবদ্ধ ছিল না মিশরীয়রা। তারা রীতিমতো কারো দাতে পুঁজ জমলে সেটি ড্রিল করে নিরাময় করা সহ অস্ত্রোপাচারের পারদর্শী ছিল। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ফরসেপ, স্কালপেল ও একাধিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হতো  দন্ত চিকিৎসায়। 

যখনই কোনো রোগী তার দাঁতের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছে তখনই তাদের দাঁত পর্যবেক্ষণ করে বেশি ক্ষয়খতি  দেখা গেলে সোনা বা রৌপ্য নির্মিত তার দিয়ে পাশের দাঁতের সঙ্গে বেঁধে রাখতো বা  সেরকম পরিস্থিতি হলে সেই দাঁত সম্পূর্ণ তুলে দিয়ে সোনা ও রূপো দিয়ে নির্মিত দাঁত বসানো হতো। তখনকার যুগে বর্তমানের মতো এত অধিক মূল্যের জিনিস বিক্রি হতো না। যার কারণে সেই সময় সোনা ও রুপোর দাম ছিল জলের মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *