অফবিট

প্রাচীন যুগে একমাত্র রোমেই নারী পুরোহিত দেখা যেত

পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পরেই যখন আদিম মানুষদের বাস ছিল তখন তারা অতটাও শিক্ষিত ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন সমাজ শিক্ষিত হতে শুরু করল তখন নিজেদের জীবন যাপন করার জন্য খাবার তৈরি করার পাশাপাশি কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত হতে শুরু করেছিল মানুষেরা। সেখান থেকেই শুরু হয়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কাজ করার প্রক্রিয়া। কেউ নিজের শখে কাজ করে তো কেউ সংসার চালাতে ও নিজের খাদ্য জোগাড় করতেই কাজে নিযুক্ত হয়। তবে পূর্বে এমন কিছু অদ্ভুত কাজ কিংবা চাকরির প্রচলন ছিল যেটা খুবই অবাস্তব লাগবে আজকের দিনে। পূর্বে প্রচলিত কিছু কাজ সম্পর্কেই বলা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

I) প্রেইগাস্টেটর (স্বাদ গ্রহণকারী) :- বহু আগে রাজ রাজাদের আমলে যারা খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতেন তাদের প্রেইগাস্টেটর বলা হত। অনেকে আবার এই পেশার ব্যক্তিদের ফুড টেস্টারও বলে থাকেন। যেহেতু রাজাদের কিংবা বাদশাদের শত্রুর কোন অন্ত ছিল না তাই তারা নিজেরা খাবার গ্রহণ করার আগে এই সকল ব্যক্তিদের দিয়ে খাবার গ্রহণ করাতেন। এই প্রেইগাস্টেটরের কাজ থাকতো রাজারা যে খাবার গ্রহণ করবেন সেটা তাদের আগে নিজেরা গ্রহণ করে দেখবেন তার স্বাদ ভালো কিনা এবং তাতে কোন বিষ মেশানো রয়েছে না। অনেকের মতে এই কাজ আরামদায়ক মনে হলেও বাস্তবে সেটা ছিল না। কারণ শত্রুতা কখন খাবারে বিষ মিশিয়ে রাখবে সেটা কেউ জানতো না। এছাড়াও রাজাদের ও বাচ্চাদের এমন অনেক উদ্ভট খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগত যেটা নানা দেশ বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সব খাবারের স্বাদ ভালো না থাকলেও সেটা খেতে হতো প্রেইগাস্টেটরদের। তবে শুধুমাত্র খাবারের স্বাদ বোঝা নয় মাঝেমধ্যে রাজাদের জন্য খাবার তৈরি করা এবং পরিবেশনও করে দিত তারা। ইতিহাসের পাতায় এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যেখানে স্বাদ গ্রহণকারীদের দিয়ে খাবার খাওয়ানোর পরেও মৃত্যু হয়েছে বহু রাজা ও রানীদের। তাদের মধ্যে উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে রোমান সম্রাট ক্লাডিয়াসের কথা। কারণ তিনি তার ফুড টেস্টার হ্যালোটাসের খাবার টেস্ট করার পরেও বিষে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এছাড়াও মৌর্যবংশের রাণী দুধরাও তার স্বামীর খাবারের স্বাদ গ্রহন করে মারা গিয়েছিলেন। অর্থাৎ ইতিহাসের ভয়ংকর কাজগুলির মধ্যে একটা ছিল খাবারের স্বাদ নেওয়া।

II) বগলের চুল পরিষ্কার :- বর্তমান দিন হোক কিংবা পুরনো সময় মানুষ নিজের অবসর যাপন করতেন খেলাধুলার মধ্যে থেকেই। ফুটবল কিংবা ক্রিকেট কোনটাই একদিন আবিষ্কার হয়নি বহু আগে থেকেই এর প্রচলন ঘটে এসেছে। তাই যখন প্রাচীন যুগে মূলত রোমের মানুষেরা অবসর সময় খেলাধুলা করতেন তখন বিশেষ করে পুরুষদের বগলের অতিরিক্ত ঘাম জমায় তাদের অস্বস্তি শুরু হতো। স্বাভাবিকভাবেই খেলাধুলা করলে মানুষের অতিরিক্ত ঘাম ঝরে এবং সেই ঘামের ফলে বগলের লোম আরো গন্ধযুক্ত ও অসহ্যকর হয়ে উঠতো। তাই সেই সমস্ত বগলের পশম ফাটার জন্য একটি লোক নির্দিষ্ট করা থাকতো যাকে রোমানীরা আর্মপিট প্লাকার বলে চিনতেন। এই ব্যক্তির কাজ থাকত যে সকল পুরুষেরা নিজেদের বগলের পশম তুলতে চাইতেন তাদের পশম না কেটে একেবারে উপরে ফেলত আর্মপিট প্লাকার নামক ব্যক্তিরা। রোমানে এই সমস্ত কাজের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও পুরুষদের শরীরের অন্যান্য জায়গার পশম তুলে নেওয়া ছিল বেআইনি। এছাড়াও অন্য জায়গা থেকে পশম তুললে পুরুষদের সম্মান গর্ব হয়ে যায় বলে মনে করত রোমের বাসিন্দারা।

III) কুৎসা রটানো:- প্রাচীন থেকে বর্তমান যুগে কুৎসা রটানো একটা পেশা হিসেবে চলে এসেছে। অনেকেই মনে করবে যে বর্তমান দিনে কুৎসা কে রটায়! তবে একটু ভাবলেই দেখা যাবে যে, সংবাদপত্র গুলি অর্থ উপার্জনের জন্য ছোট্ট একটা বিষয়কে বড়সড়ো করে কুৎসা রটাচ্ছে। আগে কিছু বিশেষ মানুষ অর্থের বিনিময়ে অন্য মানুষের কিংবা প্রতিবেশীর নামে সত্য মিথ্যা তারা এই কাজের বিনিময়ে পয়সাও পেত। যেহেতু এই মানুষদের প্রত্যেকটি কথায় সত্য মিথ্যা জড়িয়ে থাকত তাই তাদেরকে তখনকার সমাজের মানুষ খারাপ চোখে দেখতে এবং তাচ্ছিল্য করতো। 

IV) সতিত্বের প্রতিশ্রুতি :- পূর্বে আনুমানিক ২১৬  খ্রিস্টাব্দে রোমান ছিল অতি গোঁড়ামি এবং কুসংস্কারে ভরপুর। সেই সময় বিখ্যাত যোদ্ধা হ্যানিবল বোমানে আক্রমণ করায় খুব খারাপ ভাবেই পরাজিত হয়েছিল রোমান যোদ্ধারা। যেহেতু রোমানিরা খুব কুসংস্কার গ্রস্ত ছিল তাই তারা এই পরাজয়ের জন্য মনে করে নিয়েছিল তাদের দেশে কোন সতী নারী নেই বলেই এই পরাজয়। এছাড়াও তারা তাদের দেবতাকে খুশি করতে পারেনি বলেই দেবতার আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।

প্রাচীন রোমে ভেস্তা নামের একজন দেবী ছিলেন যাকে পরিবার ও বাড়ির বেবি হিসাবে পূজো করত রোম বাসিরা। আর এই দেবীর মন্দিরের নারী পুরোহিতদের বলা হত ভেস্টাল। প্রাচীন যুগে একমাত্র রোমেই নারী পুরোহিত দেখা গিয়েছিল। এই নারী পুরোহিতদের কাজ ছিল মন্দিরের সকল প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা। কখনো ভুলবশত প্রদীপ নিভে গেলে রোমের মানুষেরা মনে করত তাদের উপর কোন বিপদ ঘনিয়ে আসছে। যাতে কোনদিন সেই বিপদ না আসতে পারে তাই জন্য রোমের রাজা শাস্তি ঘোষণা করেছিলেন। সেই শাস্তি স্বরূপ বলা হয়েছিল যখনই কোন নারী দেবীর মন্দিরে পুরোহিত হবেন তখন তাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে তাড়াতাড়ি বছর পর্যন্ত চির সতী থাকবে। অর্থাৎ, কোন ভেস্টাল বা নারী পুরোহিত যদি নিজের প্রতীক্ষাবদ্ধ থেকে বঞ্চিত হতো অর্থাৎ কোন কারণে কুমারিত্ব হারাত তাহলে তাকে অতি কঠোর ও মর্মান্তিক শাস্তি দেওয়া হত। নারী পুরোহিত হওয়ার যেমন এই সকল অসুবিধা থাকতো সেরকমই তাদের বিশেষ সুবিধা থাকতো যে তারা রুমের অন্যান্য নারীদের থেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা পেতেন ও নিজেদের মর্জি মতো স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারতেন।

ছবি সৌজন্যে- গুগল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *