ঘণ্টা বাজানো থেকে কর্পূর জ্বালানো। হিন্দু নিয়ম গুলির পেছনের কি বৈজ্ঞানিক কারন রয়েছে?
নিউজ ডেস্কঃ আধ্যাত্মিকতা এবং বিজ্ঞানে মধ্যে সবসময়ই একটি দ্বন্ধ লেগেই থাকে।কিন্তু বর্তমানদিনে প্রাচীনকাল থেকে চলে আশা কিছু নিয়ম রীতিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে বিজ্ঞানও।আধ্যাত্মিক কারনের জন্য যেই নিয়মরীতি গুলি মুনি ঋষিরা বানিয়ে গেছেন সেই নিয়মরীতি গুলিকে মানতে বলছেন বিজ্ঞানীরাও।কি কি সেই নিয়মরীতি এবং এইগুলি মানার পিছনে কি কারনই ব্যাখ্যা করছেন বিজ্ঞানীরা?
ঘন্টা বাজানো- পুজো করার সময় ঘন্টা বাজানো অনিবার্য।এই ধারনাটি প্রচলন চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।মনে করা হয় যে ঘন্টা বাজালে ঈশ্বরের কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছে যায়। কিন্তু এই ঘন্টা বাজানোর পেছনে কারণ হল যেটা বিজ্ঞানীরা মেনে নিয়েছেন যে যখন ঘন্টা বাজানো হয় তখন একটি কম্পন উৎপন্ন হয় যেটি অনেক দূর পর্যন্ত যায় এবং সেই জায়গায় সমস্ত জীবাণু সুক্ষ সুক্ষ জীব নষ্ট হয়ে যায় এবং পরিবেশ শুদ্ধ হয়ে যায়। এছাড়া অতিরিক্ত ঘণ্টাধ্বনি শুনে মনে এক প্রকার ভক্তিভাব জাগ্রত হয় ঘণ্টাধ্বনি মন মস্তিষ্কের শক্তি প্রদান করে এবং আমাদের মনে ইতিবাচক মনোভাবের সূচনা করে। বাস্তু শাস্ত্র অনুসারে ও ঘরে ঘণ্টার উপস্থিতি পবিত্র বলে মানা হয় মনে করা হয় যে ঘরে ঘন্টা বর্তমান সেই ঘরে কখনো দুষ্ট আত্মা এবং নেতিবাচক শক্তি প্রবেশ করতে পারে না। এই কারনে অনেকে তাদের ঘরের দরজা ও জানালায় ছোট ছোট ঘন্টা লাগানো থাকে যাতে করে সেই ঘন্টার আওয়াজ সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে এবং কোন নেগেটিভ শক্তি সেই বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না।কারন আমরা সবাই জানি যে নেগেটিভ শক্তি সংসারের সুখ সমৃদ্ধি পথে বাঁধা প্রদান করে।তাই ঘরের থেকে নেগেটিভ শক্তি দূর করা খুবই জরুরী।
শঙ্খ বাজানো– হিন্দুধর্মের রীতি অনুযায়ী পুজোর সময় শঙ্খ বাজানো শুভ বলে মানা হয়। মন্দিরেরও শঙ্খ বাজানো হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিকদের মতে শঙ্খ বাজানোর ফলে আমাদের ফুসফুস মজবুত হয় এবং শ্বাসজনিত রোগব্যাধি কম হয়। বৈজ্ঞানিকরা এটাও বলেছেন যে শঙ্খের আওয়াজ যতদূর পর্যন্ত যায় ততদূর পর্যন্ত রোগজীবাণু নষ্ট হয়ে যায়। বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় এর উপর কিছু রিসার্চ করেছিল।যার অনুসারে বিজ্ঞানীরা মনে করেন শঙ্খধ্বনি তরঙ্গ এত তীব্র হয় যে তার চারপাশের রোগব্যাধি ছড়ানো জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়। শঙ্খের ভেতর জলও রাখা হয় এবং পুজোর সময় সমস্ত ভক্তের উদ্দেশ্যে সেই জল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এরও একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে শঙ্খের ভেতর ফসফরাস গন্ধক এবং ক্যালসিয়াম থাকে এই সবগুলির গুণাবলী তখন ওই জলের মধ্যে চলে যায়। এই জল পান করলে অথবা ছিটিয়ে দিলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
দ্বীপ জ্বালানো– পুজোর সময় আগুনের ব্যবহার অনেক মাহাত্ম্য রয়েছে। বেদে আগুনকে স্বয়ং দেবতা বলা হয়েছে। পুজোর সময় ঘি এর সাথে প্রদীপ জ্বালানোর অনেক মাহাত্ম্য রয়েছে। বৈজ্ঞানিকদের মতে গরুর দুধ দিয়ে বানানো ঘিতে এমন কিছু গুন থাকে যাতে করে সেগুলো জীবাণুকে নাশ করে সাথে সাথে আগুন জ্বালানোর আশেপাশের পরিবেশ ও জীবাণুমুক্ত হয়। প্রদীপ জ্বালানোর মাধ্যমে ঘিকে বায়ুতে ছড়িয়ে দেওয়া হয় যাতে করে সেখানে এবং তার আশেপাশের জায়গা অশুদ্ধি মুক্তি হয়।
তিলক লাগানো– যখন পুজো হয় তখন আপনারা দেখবেন অনেক ভক্তের মাথায় তীলক লাগানো থাকে। পুজোয় চন্দন হলুদ প্রভৃতির তিলক লাগানোর বিধান রয়েছে। বৈজ্ঞানিকরা বলেছেন তিলক লাগানোর সাথে মনোবিজ্ঞানের এক সম্পর্ক রয়েছে।তিলক লাগানো সেই ব্যক্তি কখনো নেতিবাচক চিন্তা করবেনা এবং তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।তিলক লাগালে মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের ক্ষরন বেশি হয় যার ফলে সেই ব্যক্তির মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা দূর হয় এবং মনে ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ ঘটে।তিলক মস্তিকে শীতল প্রদান করে এবং মানসিক রোগগুলিকে দূর করে। হলুদের তিলক লাগালে এতে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মলিকিউল ত্বকের রোগজীবাণু থেকে মুক্ত করে।
কর্পূর জ্বালানো– কর্পূর জ্বালালে বায়ুমণ্ডল শুদ্ধ হয়। যেই স্থানে কর্পূর জ্বালানো তার আশেপাশের কিছু জায়গা জুড়ে সমস্ত নেতিবাচক শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। কর্পূর জ্বালানোয় রোগের জীবাণু নষ্ট হয়ে যায় এবং রোগব্যাধি হওয়া প্রতিরোধ করে।কর্পূর ঘাড়ে ব্যথা, আর্থ্রাইটিস, প্রভৃতি রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।