অফবিট

২০ হাজারের বেশী নারীকে ধর্ষণ। চেঙ্গিস খাঁ-র কোমল হৃদয় ছিল!

নিউজ ডেস্ক – সকল মানুষের জীবনের দুটি দিক থাকে। একটি ভালো তো একটি খারাপ। জীবনটা ভালো খারাপের মধ্যে দিয়েই অতিবাহিত করতে হয় সকল মানুষকে। তবে হাজারো পাপ করলেও নিজের ভাল কর্মের জন্য পরিচিতি লাভ করেছে এক যোদ্ধা। যার নাম চিঙ্গিস খান। নির্মম  অত্যাচার করলেও সাধারণ মানুষের জন্য দেবদূত থেকে কোন অংশে কম ছিলেন না তিনি। নিজে একাধিক বিয়ের পরেও কোন স্ত্রীকে অসম্মান করতেন না এমনকি প্রত্যেক ধর্মকে আলাদা আলাদাভাবে সম্মান করতেন। এমনই এক যোদ্ধার অদ্ভুত জীবনি নিয়ে আলোচনা করা হবে আজ। সহৃদয় এবং ক্রর হৃদয় এই দুটি বর্তমান ছিল তার জীবনে। 

স্বহৃদয়ের অধিকারী চেঙ্গিস খান : চেঙ্গিস খানের জীবনী ঘাটলে পাওয়া যাবে যোদ্ধা  পরিবার থেকেই জন্ম হয়েছে চেঙ্গিস খানের। কারণ জানা যায় চেঙ্গিস খানের বাবা ইয়েসুগেই এবং মা ইয়েলুন উজিনের বড় সন্তান তেমুজিন জন্মগ্রহণ করেন ১১৬২ সালে। তবে চেঙ্গিসের জন্মের সময় তার বাবা গিয়েছেন এক যুদ্ধে। তার জন্ম গ্রহণের সময় তাতারদের সাথে যুদ্ধে জয়ী হয়ে দুজন শত্রুকে বন্দি করে আনেন তিনি। একেতো যুদ্ধে জয়ী হওয়ার আনন্দ পাশাপাশি ঘর আলো করে ছেলে আসার আনন্দেই বন্দি তাতার নেতাদের একজনের নাম তিমুজিনের নামানুসারে নিজের বড় ছেলের নাম রাখে তেমুজিন। যদিও পরবর্তীতে পিতার দেওয়া নাম ত্যাগ করেন নিজের নাম রাখে চেঙ্গিস খান। তবে খুব অল্প বয়স যখন তেমুজিনের অর্থাৎ চেঙ্গিসের ৯ বছর বয়স তখনই তার বাবা ইয়েসুগুইকে পুরনো শত্রুতা তাতারের সদস্যরা কলাকৌশলী করে বিষ পান করিয়ে  তাকে হত্যা করে। তবে বাবার মৃত্যু হওয়ার আগেই পরম্পরা অনুযায়ী ওই ৯ বছর বয়সেই সেখানকার কেরাইট গোত্রের কন্যা তথা তেমুজিনের থেকে ১ বছরের বড়  বোরটের সাথে বিবাহ ঠিক হয়ে যায় চেঙ্গিসের। তবে সাবালক হওয়ার আগে সামাজিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ রীতি ছিল না তাদের মধ্যে। যাইহোক পিতার মৃত্যুর পর নিজের যুদ্ধ গোষ্ঠীর কিছু কুমতলব ব্যক্তিগণ ষড়যন্ত্র করে নাবালক চেঙ্গিস সহ তার মা ভাই বোনকে গোত্র থেকে বের করে দেয়। ৯ বছর বয়সে চেঙ্গিস নিজের পরিবারকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। তখন একজন ব্যক্তিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি চেঙ্গিসকে। কার্যত বহু ঝড় জল উপেক্ষা করে একাধিক ঋতু পরিবর্তন দেখে বড় হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি নিজেকে কঠোর বানিয়ে নিজের রাজ্য তৈরি করেছিল সে। মঙ্গোলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় একসময় প্রাণী শিকার করে  দিন যাপন করলেও পরবর্তীতে নিজের সাম্রাজ্য গঠন করতে সমর্থক হয়েছিল চেঙ্গিস। 

নিজের আধিপত্য কিছুটা গুছিয়ে নেওয়ার পর অর্থাৎ ১১৭৯সালে যখন তার ১৭ বছর বয়স তখন তার বাল্য সঙ্গী তথা বাগদত্তা বোরটেকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এরপরই সেখানে তার সম্রাজ্য ও প্রভাব প্রতিপত্তি দেখে গোষ্ঠীর কোন সদস্যই বিয়েতে অমত করেন না। যার কারণে বোরটের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় চেঙ্গিস। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিয়ের কিছুদিন পরেই পুরনো শত্রু মেরকিটরা চেঙ্গিস এবং তার পরিবারের উপর হামলা করে নব বিবাহিত স্ত্রী বোরটকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পিতার মৃত্যুর পর এই প্রথম আবার অসহায় বোধ করে চেঙ্গিস খান। নিজের একমাত্র প্রেয়সির এমন অপহরণের ঘটনার পর নিজের বাবার পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার স্ত্রীকে উদ্ধার করার পরামর্শ করে। কিন্তু যার কাছেই সাহায্য চাইতে যায় সেই সময় সকলেই বলে কিছুদিন অপেক্ষা করে যেতে। এমন অপেক্ষা করতে করতে দীর্ঘ এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর সকলে একত্রিত হয়ে মেরকিটদের আক্রমণ করে বোরটেকে উদ্ধার করে আনতে সফল হয়। তবে সম্প্রতি তারা জানতে পারে অন্তঃসত্তা ছিলো বোরট। তবুও নিজের স্ত্রীর উপর অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসা ছেড়ে কোনদিনও সন্তানকে নিয়ে কোন সন্দেহ প্রকাশ করেনি চেঙ্গিস। পরবর্তীতে জন্ম হয় তাদের বড় ছেলে জুচির। বোরটের একটি মাত্র সন্তান থাকার পরেও আরও ছয়টি বিয়ে করেছিলেন চেঙ্গিস  কিন্তু বোরটের মতো কাউকেই সেরকম ভালোবাসা ও গুরুত্ব দিতেন না তিনি। যে কোন সমস্যা বা পরামর্শ দরকার পড়লেই বোরটের কাছে এসে উপস্থিত হতেন। অর্থাৎ সকল স্ত্রীর পক্ষ থেকেই চেঙ্গিসের মোট সন্তান ছিল ৫-৬টি। 

পরবর্তীতে যখন খোয়ারিজম সাম্রাজ্যে আক্রমণ করতে যায় তার প্রাক্কালে নিজের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে একজনকে প্রধান হিসেবে ঘোষণা করতে চেয়েছিল চেঙ্গিস। যার কারণে তার সকল পুত্রকে ডেকে পাঠানো হলে বড় ছেলে জুচিকে তার মতামত বলতে বললে সেখানে মেজো ছেলে চাহেতাই হস্তক্ষেপ করে বড় দাদার পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তার বক্তব্য ছিল যার পিতৃপরিচয় নেই তাকে কি করে প্রধান করা যায়! ছেলের এমন কথাই ক্ষুব্দ হয়ে চেঙ্গিস জানিয়েছিলেন যে ছেলের পিতৃপরিচয় নিয়ে আমি কোনদিন প্রশ্ন তুলিনি তোমার কি করে অধিকার হয় তার পরিচয় নিয়ে কথা বলার। যার কারণে এই দুই ছেলের মধ্যে দু’জনকেই বাদ দিয়ে সেজছেলে উকুতাইকে উত্তরসূরী হিসেবে মনোনীত করেন চেঙ্গিস।  তবে ধর্ম নিরপেক্ষ চেঙ্গিস কোনদিনই কোন মানুষকে অসম্মান বা বিনা কারণে তাকে দণ্ড দেননি। নিজের জীবন দশায় বহু ধর্মান্তর গুরুর সংস্পর্শে এসেছেন তিনি। যেমন শিক, জৈন, মুসলিম, বৌদ্ধ সহ একাধিক। নিজের গোটা জীবনে মানুষ চিনতে খুব একটা ভুল হতো না বীর যোদ্ধার। সবচেয়ে যে ধর্মকে সে মানতো সেটি হল আকাশ দেবতা। সেই সকল আকাশ দেবতার বাণী নিয়ে সেখানকার পুরোহিত কুকচু ঘোষণা করেছিলেন যে আকাশের দেবতা পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী চেঙ্গিস শাসন করার জন্য এসেছে। যদিও পরবর্তীতে সেই বাণী হরফে হরফে সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। যার কারণে সমগ্র গোষ্ঠীর উপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করে এক স্বনামধন্য যোদ্ধা পরিণত হওয়ার পর নিজের বাবা দেওয়া নাম ত্যাগ করে নিজেই নিজের নাম দিয়ে রেখেছিলেন চেঙ্গিস খান। এই চেঙ্গিসের অর্থ হলো সারা পৃথিবীর শাসনকর্তা।  তবে নিজের ধর্মকে সম্মান করলেও কোন অন্য ধর্মকে অসম্মান করতেন না তিনি। এমনকি  একটি ধর্মকে কখনোই প্রাধান্য  দেননি। নিজের ধর্মই হোক বা না হোক। সকল ধর্মকে সমান চোখেই দেখেছেন নিজের গোটা জীবনে। তবে চেঙ্গিস এতটাই সহৃদয় ব্যক্তি ছিলেন যে নিজের শত্রুদের যুদ্ধে পরাজয় করার পরেও তাদের সন্তানদের নিয়ে এসে মায়ের কাছে দিতেন। আর তার মা পালিত ছেলে হিসেবে এমন চারজনকে মানুষ করেছেন। যারা পরবর্তীতে এক একজন স্বনামধন্য সেনাপতি বা যোদ্ধায় পরিণত হয়েছে। তবে একজন বীর যোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও নিজের নামে কোন মূর্তি, সৌধ বা মহল নির্মাণ করেননি তিনি। বিলাসবহুল জীবন থেকে সর্বত্রই ব্যতীত থাকতো চেঙ্গিস। তবে জীবনের শেষ লগ্নে এসে মৃত্যুশয্যায় তার একমাত্র ইচ্ছা ছিল যাতে তার জন্ম ভূমিতে তাকে দাফন করা হয়। এবং খুব সামান্য ভাবেই তার সমাধির বেদি তৈরি করা হয়। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর তার অনুগামী ও ছেলেরা তার ইচ্ছা মতোই কাজ করেছিলেন।

যোদ্ধা চেঙ্গিস খান:  ধর্মের নামে বা নিজের অধিকার আদায়ের নামে প্রাচীন যুগ থেকেই প্রচলন রয়েছে যুদ্ধের। আর যুদ্ধের নামে সাধারণ মানুষের রক্তপাত করেও আজ পর্যন্ত কোন যোদ্ধার নাম কুলষিত হয়নি। সাহসী চেঙ্গিস খান বিশ্বস্ত মানুষের পছন্দ করতেন বরাবর এবং তাদের বিশ্বস্ততার বিনিময়ে উপর হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা দিতেন তিনি। তবে সেই সময় তাতারদের সাথে যুদ্ধে ঝু গোত্রের যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা সেটা না করেই চেঙ্গিস খানের পিছিয়ে পড়া সেনাবাহিনীদের উপর অতর্কিত হামলা করে তাদের উপর লুণ্ঠন চালায়। এমন ঘটনা জানতে পেরে তাতারদের পরাজিত করে আবার ঝুদের আক্রমণ করেও পরাজিত করে চেঙ্গিস খান। তবে এই দুই শত্রুদের দমন করলেও খালি হাতে ফিরতে হয়নি চেঙ্গিশকে। সেই পরাজিত গোষ্ঠীর মধ্যে মেহুলাই নামের এক ব্যক্তি সাহসিকতা ও বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজের দলে টেনে নেন তিনি। এছাড়াও ১২০২ সালে তাইচুরদের সঙ্গে যুদ্ধে তীর বিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার পরেও যে তাকে তিরবিদ্ধ করেছিল তাকে হত্যা করেনি চেঙ্গিস। যার কারণে  সেই সাহসী বীর ঝিবি নামের যোদ্ধা চেঙ্গিসের কাছে এসে নিজের দোষ স্বীকার করলে এবং  তার দলের সদস্য হওয়ার বাসনা প্রকাশ করলে তার সাহসিকতা দেখে তাকে দলে নিয়ে নেন তিনি। তবে চেঙ্গিস শুধুমাত্র একজন বীর যোদ্ধা  হিসেবে পরিচিত নয় নিজের গোষ্ঠী ও শহরের উন্নতির জন্য একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। যেমন প্রথম মঙ্গোল ভাষা সৃষ্টির সাথে সাথে নিজো রাজ্যের জন্য ইয়াসা নামে পরিচিত প্রথম লিখিত আইন বা কোড অফ ল তৈরি করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ইয়াম পদ্ধতি চালু করেছিলেন। এই ইয়াম পদ্ধতির মাধ্যমে কোন সংবাদ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অর্থাৎ ২০০ মাইলেরও বেশি পথ অতিক্রম করে বর্ধিত এক ব্যক্তি। তবে সেই ব্যক্তির সুবিধার্থে তার জন্য ঘোড়া ও জল খাবারের ব্যবস্থা সর্বদাই করা থাকত চেঙ্গিসের নেতৃত্বে। তার কড়া শাসন ব্যবস্থার ঘেরাটোপে থেকে কোনো শত্রু তাকে অতর্কিত হামলা করার সাহস পাননি যার কারণে কোনো বাঁধাবিঘ্ন ছাড়াই দেশ ও বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য  করতে পারতেন তিনি। অর্থাৎ চেঙ্গিস খানের জীবনী পাতা উল্টালেই তার মহানত্বের পাশাপাশি তার বীরত্বের ও একাধিক উদাহরণ পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *