অতিরিক্ত সেলফি তুলতে কেন নিষেধ করা হয়?
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: সেলফি বা নিজস্বী শব্দটির সাথে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই পরিচিত। সেলফি তুলতে কে না ভালোবাসে!তবে এই সেলফি শারীরিক বা মানসিক ভাবে ঠিক কতটা স্বাস্থ্যকর সে নিয়ে বিস্তর জল্পনা রয়েছে। কেউ কেউ আছেন যারা রীতিমত “সেলফি অ্যাডিক্টেড”। স্বাভাবিকভাবে এই অতিরিক্ত সেলফি তোলার প্রবণতা ডেকে আনতে পারে ভয়ংকর বিপদ। সাধারণ ভাবে তা ক্ষতিকর কিছু মনে না হলেও এর গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন গড়ে ১০০টি করে সেলফি তুলে ফেলেন। দিনে ১০ ঘণ্টারও বেশি তারা ব্যয় করেন মোবাইল ক্যামেরার সামনেই। একপর্যায়ে সেলফির নেশায় গুরুতর মানসিক সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সেলফি তোলা বা মোবাইল স্ক্রীনের সামনে তাকিয়ে থাকার ফলে কমতে থাকে ওজন। কাঙ্ক্ষিত মানের সেলফি তুলতে না পারায় আবার অনেকেরই বাড়তে থাকে হতাশা। একপর্যায়ে আত্মহত্যার চেষ্টোও চালান তারা এমন নজির ও ভুরিভুরি। বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপে যেমন এর প্রমাণ মিলেছে, তেমনি মনোরোগ বিশেষজ্ঞরাও অতিরিক্ত সেলফি তোলার বিপক্ষে মত পোষণ করেছেন। ডিআইওয়াই হেলথ একাডেমি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেলফি তোলার সঙ্গে আত্মমগ্নতা বা আত্মমুগ্ধতার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। নিখুঁত সেলফি তোলার জন্য বারবার চেষ্টো করতে গিয়ে তা এক সময় নেশায় পরিণত হতে পারে যা পরে ডেকে আনতে পারে ভয়ংকর বিপদ। নিজের নিখুঁত ছবিটি তুলতে না পারার ব্যর্থতা অযাচিত হতাশার জন্মও দিতে পারে কখনো কখনো।ওই প্রতিবেদনে মনোরোগ চিকিৎসক ডেভিড ভিল বলেছেন, তার কাছে যত রোগী আসেন তার প্রতি তিনজনের দু’জন বডি ডিসমরফিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত থাকেন।
এটি এমন এক ধরনের মানসিক সমস্যা, যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের চেহারার খুঁত নিয়ে অনবরত চিন্তায় থাকেন।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রচুর পরিমাণে সেলফি তুলে থাকেন এবং সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে থাকেন। সেখানে তাদের পরিচিতজনদের করা মন্তব্য থেকেই ধীরে ধীরে তারা এ রোগে আক্রান্ত হন।আবার হাফিংটন পোস্টের এক খবরে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক গবেষণাতেও দেখা গেছে যে, যারা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গুলিতে অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেদের বেশি বেশি ছবি আপলোড করেন, তারা আত্মমুগ্ধতা ও নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন।
ডিআইওয়াই হেলথ একাডেমি প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আত্মমুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বেশি।ডিজিটাল মাধ্যমগুলি মানুষের জীবনে অবাস্তব লক্ষ্য নির্ধারণকে প্ররোচিত করছে আর তা পূরণ না হলেই বাড়ছে হতাশা। গোটা বিশ্বজুড়ে অনেকেই এখন সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম গুলির প্রতি আসক্ত। আর সেলফি হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের অন্যতম হাতিয়ার। কেউ কেউ নিজেদের এই সমস্যার কথা বুঝতে পেরে এবং তার থেকে উদ্ধার পেতে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হচ্ছেন।কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এ বিষয়ে অসচেতন। যার ফলে দিন দিন এই সমস্যা গ্রাস করছে যুবসমাজ কে। তাই সর্বসাধরণের উদ্দেশ্যে বিশেষজ্ঞদের বার্তা, সেলফি যত কম তোলা যায়,সেলফির পিছনে সময় যত কম ব্যয় করা যায় ততই মঙ্গল।