কাঠের আসবাব পত্রের মতো জিনিস গুলি পরিস্কার করতে যা করা উচিৎ
নিজস্ব সংবাদদাতা: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা জীবনের এক অপরিহার্য অঙ্গ।রোগমুক্ত থাকার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখা টা বিশেষ জরুরী। তবে এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অতিরিক্ত সচেতনতা আবার কখনো কখনো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা যে সব পোশাকআশাক পড়ি তা একবার পড়ার পরই কি তা ধোয়া জরুরী?কিংবা কাজ করতে করতে অনবরত হাত ধোয়া টা ঠিক কতটা স্বাস্থ্যকর?এরকম অনেক কিছুই আছে যা নিয়ে বেশি সচেতন হতে গিয়ে আমরা ডেকে আনি বিপদ।চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন জিনিস বেশি ধোয়া বা পরিষ্কার করা উচিত নয়:
আয়না: আয়না সকলেরই প্রিয় একটা জিনিষ।আয়নায় নিজেকে দেখতে কে না ভালোবাসে!তাই অনেকেই নিয়মিত যত্ন নেন আয়নার।আয়নায় একটি দুটি আঙ্গুলের ছাপ পড়লেই বা একটু দাগ হয়ে গেলেই তা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।তবে এই অত্যাধিক পরিষ্কারের ফলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার প্রিয় আয়না।ডিটারজেন্ট জাতীয় উপকরণগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে আর্দ্রতা বেড়ে যায় ফলে আয়নার পিছনে থাকা পারদের আস্তরণ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে আয়না নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং যখন আয়নাতে যথেষ্ট পরিমাণ দাগ হবে কেবল তখনই আয়না পরিষ্কার করুন।
রান্নাঘরের তোয়ালে: রান্নাঘরে ব্যবহৃত তোয়ালে সর্বদাই অন্যান্য গৃহসামগ্রীর তুলনায় একটু বেশিই ব্যবহৃত হয়,ফলে সেটি নোংরাও হয় বেশি।কিন্তু তা বলে সেটি অপর্যাপ্ত নোংরা হওয়ার আগেই অযথা পরিষ্কার করতে যাবেন না।আগে সেটি কতটুকু ময়লা হয়েছে তা খেয়াল করুন,তাতে কোনো অপ্রীতিকর গন্ধ বা পর্যাপ্ত ময়লা না থাকলে তা পরিষ্কার করার দরকার নেই তোয়ালে যতদিন ব্যবহার করা যায় করুন।এতে তোয়ালে টিকবে বেশি দিন।তাছাড়া অকারণে আপনার ডিটারজেন্ট এবং সময়ের অতিরিক্ত খরচ করবেন না।
কার্পেট: কার্পেট সামান্য নোংরা হলেই অনেকেই তা পরিষ্কার করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন।কার্পেট পরিষ্কার করার উপকরণগুলো সাবান অথবা ডিটারজেন্ট জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি।ফলে সেটি অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করলে আপনার কার্পেটে স্থায়ী দাগ হয়ে যেতে পারে।যা চাইলেও পরে আর কোনোদিন ওঠানো সম্ভব নয়। শুধু তাই নয় এসকল ক্ষয়কারী উপাদান আপনার প্রিয় কার্পেটটিকে নষ্ট করে দিতে পারে।সুতরাং ঘনও ঘণও পরিষ্কার করার দরকার নেই।এবং এর পাশাপাশি বেশি শক্তিশালী পরিষ্কারক ব্যবহার না করে পরিবর্তে করে সাবান,জল এবং ভিনেগারের মিশ্রণ ব্যবহার করুন।এতে কার্পেট ভালো থাকবে। কার্পেট পরিষ্কারের পর সেটি ভালো করে শুকিয়ে নিন।
কাঠের আসবাব: অতিরিক্ত পরিচর্যা বা পরিষ্কার করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়,ফলে ধীরে ধীরে সেগুলো সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে।অনেকসময় স্প্রে জাতীয় নানা পরিষ্কারক উপকরণ বেশি ব্যবহার করার ফলে অতিরিক্ত ময়লা আকৃষ্ট করে। ফলে আসবাব স্বাভাবিকের তুলনায় আরো বেশি নোংরা হয়। কাঠের আসবাবপত্র মাসে সর্বাধিক দুই বার পরিষ্কার করতে পারেন।এছাড়াও পরিষ্কারক উপাদান বেশি ব্যবহার না করে বরং কাপড় দিয়ে ঘষে ময়লা পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন।
জিন্স: কিছু জিনিস যত কম ধোয়া যায় ততই ভালো। জিন্স এর মধ্যে অন্যতম। জিন্স নিজের মতো করে ধোয়ার পর লন্ড্রি থেকে তা একবার ড্রাই ক্লিন করে নিন।এতে ময়লা কম হবে এবং আপনি আপনার জিন্স এর পোশাকটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারবেন। অনেকের ধারণা জিন্সের কাপড় ময়লা হলে, ফ্রিজে রাখলে কাপড় থেকে দুর্গন্ধ চলে যায়। এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। এতে উল্টে আপনার ফ্রিজ নোংরা হওয়া ছাড়া আর কিছুই হয় না।
ব্রেসিয়ার: ব্রেসিয়ার সবচেয়ে বেশি পরিষ্কার করা পরে যার ফলে ব্রেসিয়ারের আকার বদলে যায়। ব্রেসিয়ার ভালো রাখতে কমপক্ষে ২-৩ বার ব্যবহারের পর সেটি পরিষ্কার করুন। ব্রেসিয়ার পরিষ্কার করার সময় একটি নেটব্যাগে ভরে তারপর অন্যান্য কাপড়ের সঙ্গে পরিষ্কার করুন যাতে অন্যান্য কাপড়ের সংস্পর্শে তা না আসে। এতে ব্রেসিয়ার ভালো থাকে।
হাত: দিনে সবচেয়ে বেশি যদি কিছু ধোয়া পরে তাহলে তা আমাদের হাত।সমস্ত রকম জীবাণু, পেটের রোগ থেকে রেহাই পেতে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে আমরা সর্বদা হাতের খেয়াল রাখি,যে তাতে যেনো কোনো ভাবেই নোংরা বা জীবাণু না লেগে থাকে।তবে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে হাত পরিষ্কার করলে আপনার হাতের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।অতিরিক্ত হাত ধোয়ার ফলে হাতের ত্বকের শুষ্কতা, চামড়া ফেটে যাওয়া, হাত ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া আছে যেগুলো অতিরিক্ত হাত ধোয়ার ফলে ধ্বংস হয়ে যায়।তাই প্রয়োজন ছাড়া ঘনঘন হাত ধোয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।অনেক চিকিৎসকের মতে, অতিরিক্ত হ্যান্ডওয়াশের ব্যবহারের ফলে শিশুদের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়।
গাড়ি: দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসের মধ্যে গাড়ি অন্যতম। অনেকেই আছেন যারা গাড়িতে সামান্য একটু ময়লা দেখলেই তা ঘষে তুলে ফেলতে উদ্যত হন।তবে আপনি হয়তো জানেন না অতিরিক্ত পরিষ্কার করার ফলে আপনার গাড়ির ওপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকসময় এর ফলে গাড়ির ওপরিভাগে মাকড়সার জালের মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ তৈরি হয়। গাড়ি পরিষ্কারক বিভিন্ন উপকরণের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এমনটি ঘটে থাকে। তাছাড়া অতিরিক্ত পরিষ্কার করা গাড়ির রঙয়ের ওপরও প্রভাব পড়ে।সুতরাং মাসে ৩-৪ বারের বেশি গাড়ি পরিষ্কার করবেন না।একথাও মাথায় রাখবেন খুব শক্তিশালী পরিষ্কারক ব্যবহার করলে গাড়ির ক্ষতি হতে পারে।
চুল: আমরা সকলেই ঝলমলে উজ্জ্বল সুগন্ধযুক্ত চুল ভালোবাসি।তাই অনেকেই রোজ রোজ শ্যাম্পু করে থাকেন যা আপনার চুলের স্বাস্থ্য এর জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক।এক গবেষণায় দেখা গেছে, খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষেরই প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করা প্রয়োজন পড়ে। যেমন- যারা প্রচুর ব্যায়াম করেন (ঘাম হয়) বা যারা বেশি আর্দ্রতাপূর্ণ জায়গায় বসবাস করেন তাদের নিয়মিত চুল পরিষ্কার করতে হয়।তবে নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু করার ফলে চুলের ত্বকে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক তেলগুলো ধুয়ে যায় যার ফলে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাদের স্ক্যাল্প তৈলাক্ত বা শুষ্ক তাদের ক্ষেত্রে ঘনঘন শ্যাম্পু করা স্বাভাবিক হলেও যাদের চুল ঘন এবং কোঁকড়ানো তাদের ঘনঘন শ্যাম্পু করার প্রয়োজন নেই।এছাড়া চুল বেশি ঘষাঘষির ফলে নষ্ট হয়ে যায়।