গেলেই পাথর হয়ে যাবেন ভারতবর্ষের যে মন্দিরে
নিউজ ডেস্কঃ মানুষেরা মন্দিরে যায় ভগবানে আশীর্বাদ পাওয়ার আশায়। কিন্তু এমন একটি মন্দির আছে যেখানে গেলে মানুষ আশীর্বাদ পাওয়ার বদলে অভিশাপগ্রস্ত হয়ে পড়ে।যেই অভিশাপ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। তাই রাজস্থানে অবস্থিত এই মন্দিরটি একবার গেলে সে আর ফিরে আসে না।কি আছে এই মন্দিরে? কেনই বা মানুষ গেলে আর ফিরে আসে না? এইসব প্রশ্নই নিশ্চয় মনে মধ্যে উঠছে। উঠাটায় স্বাভাবিক।
কিরাডু রহস্যময় মন্দির এমনিতে তার সাথে 11 থেকে 12 শতকের অন্য মন্দিরগুলির চেহারার বিশেষ পার্থক্য নেই। রাজস্থানের মরুভূমি ঘেঁষা শহর বারমের থেকে 35 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কিরাডু মন্দির কিন্তু তার আশ্চর্য স্থাপত্যের জন্য যতটা না বিখ্যাত তার থেকেও বেশি মাত্রায় তার খ্যাতি অন্য এক ব্যাপারে। বিখ্যাত না বলে কুখ্যাত বলাই ভালো।কারন এই মন্দিরে রাত্রিযাপনের কথা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবেন না।
একে মরু-ঘেঁষা এক ভূপ্রকৃতি, তার উপরে শুকনো হাওয়ার দীর্ঘশ্বাস।দিনের বেলাতেয় কিরাডু কেমন যেন গা ছমছমে। মন্দিরে প্রবেশের সদর দরজা জং ধরে বহু কালি বন্ধ মন্দির কমপ্লেক্সে প্রবেশ করতে গেলে একটা ছোট দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হয় কিংবদন্তি অনুসারে কিরাডুর আদি নাম ‘কিরাডকোট’ বা ‘কিরাদকোট’। ষষ্ঠ শতকে কিরাদ-বংশীয় রাজপুতরা এখানে রাজত্ব করতেন। কিরাডুর জনপদ এককালে খুবই সমৃদ্ধ ছিল বাসিন্দারা সকলেই হলেন শিব ভক্ত মন্দিরের অধিষ্ঠাতা মূলত মহাদেব নিজের কিংবদন্তি থেকে জানা যায় দ্বাদশ শতকে পরমার রাজবংশের সোমেশ্বর নামে এক রাজার রাজত্ব করতেন তার আমলে ভারতে তুর্কি অভিযান ঘটে কিরাডুর এই আক্রমণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সোমেশ্বর এরপর থেকে ভয় পান বিদেশি আক্রমণ থেকে এবং তিনি এক সন্ন্যাসী শরণাপন্ন হন সন্ন্যাসি এর সঙ্গে এক শিষ্য ছিলেন তিনি সেই শিষ্যকে কিরাডুতে রেখে যান।
ক্রমে কিরাডুতে তুর্কি আক্রমণের ক্ষতগুলি কে অতিক্রম করে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে কিন্তু কিরাডুর মানুষ ওই শিষ্যের কথা বেমালুম ভুলেই গেলেন এক সময় ওই শিষ্য অসুস্থ হয়ে পড়েন এক কুম্ভকারের স্ত্রী ছাড়া আর কেউ তার পাশে এসে দাঁড়ায়নি এমন সময়ে সন্ন্যাসী ফিরে আসেন এবং তিনি তাঁর শিষ্যের প্রতি কিরাডুবাসীর অবহেলা দেখতে পান ক্রুদ্ধ সন্ন্যাসী এই মর্মে অভিশাপ দেন যে এই মানবিকতাহীন জনপদের সর্বনাশ হবে তার অভিশাপেই নাকি গোটা কিরাডু পাথরে পরিণত হয়।কেবল সেই কুম্ভকার পত্নী জীবিত থাকেন। সন্ন্যাসী তাকে সন্ধ্যের আগে কিরাডু ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং যাওয়ার পথে পিছনে তাকাতেই নিষেধ করেন সেই মহিলা সন্ন্যাসীর অজ্ঞা পালন করেন কিন্তু জনপদের সীমান্তে পৌঁছে কৌতূহলবশত পিছনে ফিরে তাকায় দেখতে পান গ্রামবাসীরা সকলেই পাথরে পরিণত হয়ে গিয়েছেন এই তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাথরে পরিণত হন এই কাহিনীর কোন বাস্তব প্রমান অবশ্যই নেই কিন্তু লোক বিশ্বাসের এতটা গভীরে কাহিনী শিকড় গেড়ে রয়েছে যে একে প্রায় ইতিহাসের মর্যাদা দেয় স্থানীয় মানুষ তাদের ধারণা সূর্যাস্তের পরে আজও ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে সন্ন্যাসীর অভিশাপ পাথরের মূর্তির ক্রমে প্রাণ ফিরে পায় মরুভূমি শুকনো হাওয়ায় ভাসতে থাকে পাথরে দীর্ঘশ্বাস। প্রেতলোক আর ইহজগতের সীমানা আবছা হয়ে যায় কিরাডুতে।নেমে আসে ছায়ামূর্তির দল আজও তাই সন্ধ্যার পরে কিরাডুর মন্দিরগুলির জনশূন্য থাকে।